কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে ‘নাগরিক সেবার মানের’ দোহাই দিয়ে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে বিভিন্ন সেবার ফি। গত ১৫ এপ্রিল কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন সচিব মোহাম্মদ মামুন স্বাক্ষরিত চিঠিতে নাগরিক সেবার মূল্য তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ তালিকায় দেখা গেছে, বেকারত্ব সনদ আনতে গেলেও সেবাগ্রহীতাকে গুণতে হবে ১০০ টাকা। হঠাৎ করে কোনো ধরণের গণশুনানী কিংবা আলোচনা ছাড়াই নাগরিক সেবার মূল্য তালিকা বৃদ্ধি করায় কুমিল্লার সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
নগর বিশ্লেষকদের মতে- সিটি কর্পোরেশনে যে কোন নাগরিক সেবা বাড়ানোর জন্য পাঁচ বছর পর পর গণশুনানি করে তা বাড়াতে হয়। কিন্তু এবার তিন বছরের মাথায় কোন ধরনের আলোচনা না করেই হঠাৎ করে বাড়ানো হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের সেবার মূল্য। তবে সেবার মূল্য বৃদ্ধি করলেও নগর ভবন কর্তৃপক্ষ সেবার মান বৃদ্ধি করতে পারেনি অভিযোগ করেছেন নগরবাসী।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন কর্তক নাগরিক সেবা মূল্য তালিকা মধ্যে ১৫ টি বৃদ্ধি করেছে সিটি কর্পোরেশন । বিবাহিত সনদ ২০ টাকার জায়গায় করা হয়েছে ১০০ টাকা। এরুপ মাসিক আয়ের প্রত্যায়ন , পুনঃ বিবাহ না হওয়ার সনদ, স্থায়ী বাসিন্দা সনদ, ভূমিহীন প্রত্যয়ন, একই নামের প্রত্যায়ন ,বিবিধ পদ্যায়ন, বেকারত্ব সনদ, প্রত্যায়ন পত্র, পারিবারিক সনদপত্র, মৃত্যুর প্রত্যয়ন পত্র , ক্ষমতাপত্র, অনাপত্তিপত্র সনদ, পি ফরম ও অনলাইন আবেদন ফি পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে ।
কুমিল্লা নগরীর রেইসকোর্স এলাকার বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, "হঠাৎ করে নাগরিক সেবার মূল্য পাঁচ গুণ বৃদ্ধি এটা মেনে নেয়া যায় না। সেবার মান বৃদ্ধি না করে সেবার মূল্য বৃদ্ধি করা অন্যায়। স্বৈরাচার পতনের পর এই ধরনের সিদ্ধান্ত হতাশাজনক। "
কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কুমিল্লার কাগজ সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয় বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান । এখানে জনগণের ওপর বাড়তি ফি চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়। এর আগে আমরা দেখেছি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে অপ্রয়োজনীয় লিফট লাগিয়ে জনগণের ওপর ব্যয় চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, "গণশুনানি ব্যতিরেকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নাগরিক সেবা মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানাই। বর্তমানে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছে এখনো কোনো মেয়র নেই, নেই কোনো নির্বাচিত পরিষদও। এই প্রেক্ষাপটে নাগরিকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, যেমন সেবার মূল্য ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত, কোনো রকম গণশুনানি ছাড়াই গ্রহণ করা হয়েছে যা অত্যন্ত অযৌক্তিক ও জনবিরোধী।"
তিনি আরো বলেন, "এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের মতামত নেওয়া অত্যাবশ্যক ছিল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থী এই ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ জানাই । অবিলম্বে এই সেবা মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করে পূর্ববর্তী মূল্য বহাল রাখা হোক । এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের বিষয়ে গণশুনানি ও জনমত যাচাইয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হোক।"
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, "আমি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের দুই বারের মেয়র ছিলাম। এটা সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান। এটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয় । নাগরিক সেবার মূল্য বৃদ্ধি করতে হলে পাঁচ বছর পর পর গণশুনানি করে বাড়াতে হয়। এবার কিভাবে তাঁরা বৃদ্ধি করল বলতে পারছি না। জনগণ এই মূল্য বৃদ্ধিকে প্রত্যাখ্যান করবে। "
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সেবা মূল্য তালিকা বৃদ্ধি কেন করা হয়েছে এই বিষয়ে জানতে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছামছুল আলম ও সচিব মোহাম্মদ মামুনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা কল ধরেননি।