গণমাধ্যমে গত বুধবার থেকে অব্যাহতভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি আক্রমণের সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, পাল্টাপাল্টি আক্রমণের বিস্তার ঘটছে। দুই দেশই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা বাড়ছে। সেই সঙ্গে দেখা দিচ্ছে সশস্ত্র সংঘাতের ঝুঁকি। সংঘাত যদি এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাহলে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও এই যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের কয়েকজন অর্থনীতিবিদ এই দিকটির প্রতিই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
প্রথমত, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে কোন দিক থেকে তা কতটা বিস্তৃত হবে, সেটা অনুমান করা কঠিন। দুই দেশই পারমাণবিক শক্তির অধিকারী। সংগত কারণেই যুদ্ধ ভয়াবহ হতে পারে। এতে অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ভারত আমাদের প্রধান বাণিজ্য সহযোগী দেশ। পাকিস্তানের সঙ্গেও বাংলাদেশ বাণিজ্য উন্মুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে আকাশসীমা বন্ধ হয়ে গেছে। সমুদ্রপথের বিষয়টি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কোন পথে কীভাবে বাণিজ্য হবে, বলা মুশকিল। বিকল্প পথের সন্ধান পাওয়া গেলেও তা হবে ব্যয়বহুল। এ রকম পরিস্থিতিতে নানা ঝুঁকির কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হবেন না। এমনিতেই বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ব্যবসা-বাণিজ্য আর বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে; ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে অর্থনীতি ভয়াবহ সংকটে পড়বে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রধানত আমদানিনির্ভর। ভারত থেকে আমাদের সুতা, তুলা, খাদ্যপণ্য, যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করতে হয়। এসব পণ্যের উৎপাদন যদি ব্যাহত না হয়, তাহলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। আর যদি ব্যাহত হয়, তাহলে আমাদের বিকল্প খুঁজতে হবে। সে ক্ষেত্রে একই জিনিস চীন থেকে আমদানি করা যাবে। তবে খরচ পড়বে বেশি।
মূল সমস্যা হচ্ছে, আমাদের উৎপাদন-প্রক্রিয়া সচল রাখতে হবে। আর উৎপাদন সচল রাখার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে কাঁচামালের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা। যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে সেই সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে। আমাদের ব্যবসায়ীদের এখন থেকেই বিকল্পের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই সরবরাহে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেদিকটির প্রতি নজর দিয়ে বিকল্প পথটি উন্মুক্ত রাখার প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের এ ব্যাপারে সচেতন এবং উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
এদিকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সংঘাত ও ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমরাও মনে করি, দ্রুত এই সংঘাতের অবসান হওয়া প্রয়োজন। দুই দেশের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসাই হবে উপমহাদেশের জন্য মঙ্গলজনক।
যুদ্ধ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ভারতের প্রতি নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প পথে কীভাবে পণ্য আমদানি করা যায়, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সেই প্রস্তুতি থাকতে হবে। আমরা শিল্পমালিকদের এ ব্যাপারে প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। তবে এই অঞ্চলে স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হচ্ছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সংঘাতের অবসান হওয়া। আশা করছি, দ্রুত সেই শান্তি ফিরে আসবে। অর্থনীতির চাকাও সচল থাকবে।