সোমবার ৯ ডিসেম্বর ২০২৪
২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
শবে কদর আসলে কোন তারিখে?
প্রকাশ: সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০২৪, ১:৩০ এএম |



শবে কদর আসলে কোন তারিখে?

শবে কদর বা লাইলাতুল কদর। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাত।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি কদর (মর্যাদাপূর্ণ) রজনীতে। আপনি কি জানেন মহিমাময় কদর রজনি কী? মহিমান্বিত কদর রজনি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল (আ.) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষার উদয় পর্যন্ত। ’ (সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ১-৫)।
লাইলাতুল কদর কেন হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এর সরাসরি উত্তর আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন। তবে পবিত্র কোরআন ও একাধিক হাদিসের ভাবার্থ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এ রাতে কোরআনে কারিম নাজিল হয়েছে বলে এ রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।
শবে কদর কোন তারিখে?
কিন্তু রমজানের কোন রাতটি শবে কদরের তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কোরআন ও হাদিসে। তবে এ সম্পর্কে কতগুলো নিদর্শন দেওয়া হয়েছে।
হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে কদর তালাশ করতে বলেছেন।  
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের সন্ধান কর। ’ (সহিহ বুখারী, হাদিস, ২০১৭, সহিহ মুসলিম, হাদিস, ১১৬৯)
আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে একবার লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন, আমি লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশ দিন ছাড়া অন্য কোনো রাতে অনুসন্ধান করব না।
অর্থাৎ, লাইলাতুল কদর প্রতি বছর নির্দিষ্ট একই রাতে পারে বা বিভিন্ন রাতেও হতে পারে। হতে পারে এক বছর ২১ তারিখে, আরেক বছর ২৩ তারিখে এবং অন্য আরেক বছর ২৫, ২৭ বা ২৯ তারিখে। আবার একই বছরেও অঞ্চলভিত্তিক বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক একাধিক রাত লাইলাতুল কদর হতে পারে। যেমন বাংলাদেশে ২৭ তারিখ এবং সৌদি আরবে ২৯ তারিখ। প্রকৃত ব্যাপার আল্লাহতায়ালা ভালো জানেন।
লাইলাতুল কদর কত তারিখ এ বিষয়ে ৪০টির অধিক মত রয়েছে। তবে কোরআন ও হাদিসের আলোকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মত হলো রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতের যে কোনো এক রাতে অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯তম রাতে।
মাসয়ালা : ২৭ তারিখে লাইলাতুল কদর একেবারে সুনির্দিষ্ট- এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। তবে বহুসংখ্যক প্রমাণ রয়েছে যে, ২৭ তারিখে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক। একে শুধু সম্ভাবনা হিসেবে গ্রহণ করা যায়, সুনিশ্চিত হিসেবে নয়। সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিমের একাধিক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা 'শেষ সাতে' লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর। -সহিহ বোখারি: ৩/৪৭, ২০২২
শেষ সাতের দুটি অর্থ একটি হলো, সপ্তম দিনে অর্থাৎ ২৭ তারিখে অথবা শেষ সাতটি রাতের যে কোনো একটি রাতে। মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত এক সহিহ হাদিসে (শায়খ আলবানীও সহিহ বলেছেন) আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতে চায় সে যেন তা ২৭ তারিখে অনুসন্ধান করে। -মুসনাদে আহমাদ: ৮/৪২৬, হা. নং : ৪৮০৮, ১০/৪৯৩, হা. নং: ৬৪৭৪
লাইলাতুল কদরের ইবাদত
এ রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া উচিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কদরের রাতে ইমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে নামাজে দাঁড়ায় তার আগেকার সব পাপ মার্জনা করে দেওয়া হয়। -সহিহ বোখারি: ১/১৬, হা. নং: ৩৫
লাইলাতুল কদরে যা যা করা যায় - নফল নামাজ আদায়, কোরআন তিলাওয়াত, কবর জিয়ারত, তওবা-ইস্তেগফার, জিকির-আজকার, আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা ও গরিবদের অন্নদান ইত্যাদি।





আল্লাহর ক্ষমা পেতে সত্য ও ন্যায় কথা বলুন

ফারুক ফেরদৌস ।।
আজ (২৯ মার্চ) ১৮ রমজান দিবাগত রাতে ইশার পর ১৯তম দিনের তারাবিহ নামাজে আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে কোরআনের ২২ নং পারা তিলাওয়াত করা হবে। এ পারায় রয়েছে সুরা আহজাবের শেষাংশ, সুরা সাবা, সুরা ফাতির ও সুরা ইয়াসিনের কিছু অংশ।
পবিত্র কোরআনের এ অংশে আমাদের দৈনন্দিন জীবন সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ যে শিক্ষা ও দিক-নির্দেশনা রয়েছে:
১. মুমিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য আল্লাহকে ভয় করে সঠিক কথা বলা, সত্য ও ন্যায় কথা বলা, সরল কথা বলা। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া, অন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। সত্য ও ন্যায় কথা বললে আল্লাহ রহমত বর্ষিত হয়, আল্লাহ আমাদের কাজ ত্রুটিমুক্ত করেন এবং পাপ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তাহলে তিনি তোমাদের কাজকে ক্রটিমুক্ত করবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে তারা অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে। (সুরা আহজাব: ৭০, ৭১)
২. বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করুন। আল্লাহর জিকিরে মুমিনের অন্তর প্রশান্ত হয়। ইমান জাগরুক হয়। শয়তান দূরে সরে যায়। শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকা যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। (সুরা আহজাব: ৪১, ৪২)
৩. আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জন্য দরুদ পড়া, দোয়া করা তার উম্মত ও মুমিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য। দরুদ পাঠ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। নবিজির জন্য দরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের মধ্যে) নবির প্রশংসা করেন এবং তার ফেরেশতাগণ নবির জন্য দোয়া করে। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবির ওপর দরুদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। (সুরা আহজাব: ৫৬)



সদকাতুল ফিতর আদায়ের সঠিক সময় কোনটি?
রমজান ও ইদুল ফিতরের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত সদকাতুল ফিতর। সম্পদশালী মুসলমানদের পাশাপাশি দরিদ্র মুসলামানরাও যেন ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারে, সে জন্য আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা ফিতরা বা সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যা ঈদের নামাজের আগে প্রদান করতে হয়। এই দানকে জাকাতুল ফিতরও বলা হয়।
ইদের দিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা সর্বোত্তম। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি: ১৫০৯)
সাহাবায়ে কেরাম ইদের আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করেছেন এ রকম দৃষ্টান্তও পাওয়া যায়। নাফে (রহ.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ইদের এক দুদিন আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করে দিতেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৬০৬)
ইসলামি আইনবিশারদগণের নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী ইদের আগে রমজানের শুরু থেকে বা রমজানের আগেও সদকাতুল ফিতর আদায় করা জায়েজ। তাই রমজানের আগেও কেউ যদি সদকাতুল ফিতরের নিয়তে কিছু দান করলে তা সদকাতুল ফিতর গণ্য হবে। তবে সদকাতুল ফিতর ইদের দিন বা রমজানের শেষ দিকে আদায় করাই উত্তম।


ইতেকাফের সময় মসজিদের ছাদে যাওয়া যাবে কি?

ইতেকাফরত অবস্থায় একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে। ইতেকাফরত অবস্থায় অজু, ফরজ-গোসল ও প্রাকৃতিক প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে। কিন্তু জানাজার নামাজের মতো ফজিলতপূর্ণ কাজের জন্য বা অপ্রয়োজনীয় গোসল, বেচাকেনা, মোবাইলে কথা বলা ইত্যাদি কাজের জন্যও মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না।
মসজিদের ছাদ মসজিদের অন্তর্ভুক্ত। তাই যদি ছাদে যাওয়ার রাস্তা ও সিঁড়ি মসজিদের ভেতরে হলে ইতেকাফরত অবস্থায় মসজিদের ছাদে যাওয়া যাবে। কিন্তু ছাদে যাওয়ার রাস্তা মসজিদে বাইরে হলে ছাদে যাওয়ার জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। ছাদে যাওয়ার জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে।
নারীরা যদি নিজেদের ঘরের নির্দিষ্ট কক্ষ বা জায়গায় ইতেকাফে বসেন, তাহলে ওই জায়গা বা কক্ষ থেকে শরঈ ওজর ছাড়া বের হতে পারবেন না। শরঈ ওজর ছাড়া ঘরের অন্যান্য জায়গায় গেলেও ইতেকাফ ভেঙে যাবে।



পৃথিবীর প্রথম জমিন পবিত্র কাবা শরিফ

বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর। কাবা শরিফ ও পবিত্র কাবাঘরও বলা হয়।
পৃথিবীর কোটি কোটি প্রাণ প্রতিদিন এ ঘরের অভিমুখী হয়ে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করেন। এটি পৃথিবীতে মহান আল্লাহর জীবন্ত নিদর্শন। সৃষ্টির সূচনা থেকেই মহান পবিত্র এই কাবাকে মহান আল্লাহ তার মনোনীত বান্দাদের মিলনস্থল করেছেন।
ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান, যা পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিবেচিত।
এ বিষয়ে ড. হুসাইন কামাল উদ্দীন আহমদ পিএইচডি করেছেন। তার থিসিসের শিরোনাম হলোÍ‘ইসকাতুল কুররাতিল আরধিয়্যা বিন্ নিসবতে লি মাক্কাতিল মুকাররামা। ’ (মাজাল্লাতুল বুহুসুল ইসলামিয়া, রিয়াদ ২২৯২)
ওই থিসিসে তিনি প্রাচীন ও আধুনিক দলিল-দস্তাবেজের আলোকে এ কথা প্রমাণ করেছেন যে, কাবাই পৃথিবীর মেরুদ- ও পৃথিবীর মধ্যস্থলে অবস্থিত। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পানিসর্বস্ব পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি এ কাবাকে কেন্দ্র করেই হয়েছে।
উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক ড. খালিদ বাবতিনের গবেষণায় দেখা গেছে, সৌদি আরবে অবস্থিত পবিত্র কাবাই পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু। (আল-আরাবিয়া ২৩ জুলাই, ২০১২)
আরেকটি বিষয় হলো, বছরের বিশেষ একটি দিন দুপুরে সূর্য ঠিক কাবার মাথার ওপর থাকে। তখন পবিত্র কাবা বা মক্কায় অবস্থিত কোনো অট্টালিকায় ছায়া দৃষ্টিগোচর হয় না। যেমন-২০১৪ সালের ২৮ মে দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটে সূর্য ছিল পবিত্র কাবার ঠিক মাথার ওপর। পৃথিবীর আর কোথাও এমনটি হয় না।
কাবাঘরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এটি পৃথিবীর সর্বপ্রথম ও সুপ্রাচীন ঘর। কোরআনের ভাষায়, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটিই হচ্ছে এ ঘর, যা বাক্কায় (মক্কা নগরীতে) অবস্থিত। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৬)
মাটিতে রূপান্তর হওয়ার আগে কাবা সাদা ফেনা আকারে ছিল। সে সময় পৃথিবীতে পানি ছাড়া কিছু ছিল না। আল্লাহর আরশ ছিল পানির ওপর। হাদিসের ভাষ্য মতে, কাবার নিচের অংশটুকু পৃথিবীর প্রথম জমিন। বিশাল সাগরের মাঝে এর সৃষ্টি। ধীরে ধীরে এর চারপাশ ভরাট হতে থাকে। সৃষ্টি হয় একটি বিশাল মহাদেশের। এক মহাদেশ থেকেই সৃষ্টি হয় অন্য সব দেশ-মহাদেশ। মাটি বিছানোর পর জমিন নড়তে থাকে। হেলতে থাকে। এর জন্য মহান আল্লাহ পাহাড় সৃষ্টি করেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয় (হেলে না যায়)।’ (সুরা নাহল, আয়াত ১৫)
পবিত্র কাবার বরকতে পৃথিবী এভাবেই স্থির হয়ে যায়। ধীরে ধীরে এখানে গোড়াপত্তন হয় মানবসভ্যতার।


শবেকদরের বিশেষ আমল ও দোয়া

মহিমান্বিত মাস রমজানের শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল কদর। এ রাতে নাজিল হয় পবিত্র কোরআন।
লাইলাতুল কদরে আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের ক্ষমা করেন এবং হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামসহ রহমতের ফেরেশতারা পৃথিবীতে আগমন করেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ‘কদর’ নামে একটি সূরা নাজিল করেছে এবং তাতে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। ’
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মাঝে রমজান আগমন করেছে।
তাতে রয়েছে এমন রাত যা হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। যে সে রাত থেকে বঞ্চিত হলো- সে কল্যাণ থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হলো। আর হতভাগা ব্যক্তি ব্যতিত কেউ তার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয় না। -সুনানে ইবনে মাজাহ
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার ও আত্মিক সাধনার মাধ্যমে রমজানে কদরের রাত ও তার কল্যাণ অনুসন্ধান করতেন। বিশেষ করে রমজানের শেষ দশকে তিনি সব ধরনের জাগতিক কাজকর্ম থেকে অবসর হয়ে আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করতেন। তিনি এ সময় ইতিকাফ করতেন এবং ইবাদতের মাধ্যমে কদরের রাত অনুসন্ধান করতেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক রমজানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন এবং মৃত্যুর বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেন। -সহিহ বোখারি
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার উম্মতকেও রমজানের শেষ দশকে কদরের রাত অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে অধিকাংশ হাদিসে তিনি কোনো রাত নির্ধারণ করেননি। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
তবে লাইলাতুল কদর ২৭ রমজানের রাতে হওয়ার ব্যাপারেও একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। হজরত মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কদরের রাত হলো- সাতাশের রাত। ’ -সুনানে আবু দাউদ
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর ইবাদত ও জিকিরের মাধ্যমে কদরের রাত অনুসন্ধান করতেন। এ রাতে রাসূল (সা.) অধিক পরিমাণ নামাজ আদায় করতেন। রাত্রী জাগরণ করতেন। সাহাবাদেরও নামাজ আদায় করতে বলতেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে কদরের রাতে নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তার পেছনের সব পাপ মার্জনা করবেন। ’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতেন। কদরের রাতে তেলাওয়াতের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিতেন। হজরত ফাতেমা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তার পিতা তাকে বলেছে, প্রতি রমজানে জিবরাইলকে (আ.) একবার কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। কিন্তু মৃত্যুর বছর তিনি তাকে দু’বার কোরআন শোনান। ’ -সুনানে বায়হাকি
কদরের রাতে রাসূল (সা.) দোয়া ও ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন। হাদিসে একটি বিশেষ দোয়ার বর্ণনাও পাওয়া যায়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলি, কদরের রাতে আমি কী বলবো, তিনি বলেন, তুমি পড়বে-
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউন। তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।
অর্থ: হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। -সুনানে নাসায়ি
কদরের রাতের আরেকটি দোয়ার বর্ণনা হাদিসে পাওয়া যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) নি¤েœর দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করতেন-
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফিয়াতা ফিদ-দুনইয়া ওয়াল আখিরা। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আ-ফিয়াতা ফি দিনি ওয়া দুনইয়ায়া ওয়া আহলি ওয়া মালি। - আল আদাবুল মুফরাদ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের অনুগ্রহ চাই। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আমার ধর্ম, আমার জাগতিক জীবন, আমার পরিবার ও সম্পদের ব্যাপারে ক্ষমা ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।


রমজানের শেষ দিনগুলোতে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মূল্যায়ন

পুণ্যের মাস পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম ২০ দিন পার হয়ে যাচ্ছে আজ। মুসলমানদের জীবনে রমজান আসে পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে, জীবনকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর তাগিদ নিয়ে।
রমজান এলো, রমজান গেল, কিন্তু আমাদের প্রাপ্তি কতটুকু-এ নিয়ে হিসাব-নিকাশ করার সময় হয়েছে। রমজান হলো মুমিনের জন্য বার্ষিক সুযোগ, যেন সে অন্ধকার থেকে আলোর পথে, গোমরাহি থেকে হিদায়াতের পথে আসতে পারে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাসই হলো সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত ও সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
মাহে রমজানের রোজা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে চলার শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও আত্ম-অহংবোধ ভুলে গিয়ে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ প্রতিষ্ঠার মাসই হলো মাহে রমজান। রোজা মানুষকে পার্থিব লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরচর্চা, পরনিন্দা, মিথ্যাচার, প্রতারণা, আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়।
রোজা মানুষকে আত্মনিয়ন্ত্রণ, মিতাচার, মিতব্যয়িতা ও পারস্পরিক ভালোবাসার শিক্ষা দেয়। রমজানে বিশেষ বিশেষ ইবাদতের বিধান দেওয়া হয়েছে। যেমন-সিয়াম সাধনা, তারাবি, রোজাদারকে ইফতার করানো, ইতিকাফ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা, সহমর্মিতা প্রকাশ, শবেকদর অন্বেষণ, ওমরাহ পালনসহ বহু ইবাদতের বিধান রয়েছে। ভাবার বিষয় হলো, আমরা কতটুকু আমল করতে পেরেছি, কতটুকু নিজেকে আলোকিত মানুষরূপে গড়ে তুলতে পেরেছি, রমজানের দাবি আমাদের জীবনে কী পরিমাণ বাস্তবায়িত হয়েছে-এসবের যোগ-বিয়োগ করার সময় এখনই।
সুফিবাদের পরিভাষায়, এই হিসাব-নিকাশ করাকে ‘মুহাসাবা’ বলা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় ঘনিয়ে এসেছে, অথচ তারা এখনো উদাসীনতার মধ্যে বিমুখ হয়ে আছে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১)
এ বিষয়ে ওমর (রা.)-এর একটি চমৎকার কথা আছে-‘তোমার হিসাব নেওয়ার আগে তুমি নিজেই তোমার হিসাব নিয়ে নাও।’
তাই এখন সময় হিসাব-নিকাশের। জীবনে অগ্রযাত্রার জন্য প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মূল্যায়ন খুবই জরুরি।
যদি প্রত্যাশিত প্রাপ্তি না হয়ে থাকে, তাহলে এখনো সুযোগ আছে তাওবা করার, নিজেকে শোধরে নেওয়ার ও অনুতপ্ত হয়ে প্রভুর দরবারে ফিরে আসার।













সর্বশেষ সংবাদ
পেনশন পেতে হয়রানি
সময় গেলে সাধন হবে না
যথাযোগ্য মর্যাদায় কুমিল্লা মুক্ত দিবস পালিত
চান্দিনায় পরীক্ষা হলে হঠাৎ অসুস্থ ১৫ ছাত্রী; ক্ষোভে শিক্ষক পেটালেন অভিভাবকরা
নির্জন বিলে পড়েছিলো দুই যুবকের মরদেহ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বিভাগ না দিয়ে কুমিল্লাবাসীর প্রতি জুলুম করা হয়েছে
নিবেদিতা স্কুল: আলোর নিচে অন্ধকার
লালমাইয়ে দাফনের ৪ মাস পর থেকে লাশ উত্তোলন
বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমানের সঙ্গে ৯ ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতিনিধি সম্মেলন
আজ কুমিল্লা মুক্ত দিবস
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২