
বাংলাদেশের মানুষ আজ আরো একটি নতুন বছরে পা রাখছে; তবে এই পথচলা নিছক সময়ের আবর্তন নয় বরং দু’চোখ ভরা এক বুক বড় স্বপ্নের। বছরের বিদায়বেলায় এক শোকাতুর পরিবেশ গ্রাস করেছে পুরো দেশকে। গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মহাপ্রয়াণে কেঁদেছে কোটি প্রাণ। মানুষ তাদের প্রিয় নেত্রীকে বিদায় জানিয়েছে একরাশ গভীর মমতা আর পরম শ্রদ্ধায়।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যায় এ শোকের কালো মেঘ আরো ঘনীভূত হয়।
তবুও এই শোকের দরিয়ায় ভাসতে ভাসতে জাতি আজ এক অমোঘ গর্বে বুক বাঁধছে। অগণিত মানুষের সেই আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি; বরং শহীদদের সেই রক্ত আজ এক নতুন যুগের শিকড়ে প্রাণ সঞ্চার করেছে। ক্ষতবিক্ষত হয়েও বাংলাদেশ আজ এক মহাবিপ্লবের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। এ দেশের মাটি আজ সমৃদ্ধ হয়েছে এক নতুন পুনর্জাগরণের অঙ্গীকারে।
২০২৫-এর ক্ষতগুলো মুছে যাবে না ঠিকই, তবে সেগুলো বয়ে বেড়াবে এক অপরাজেয় সাহসিকতার পদক হিসেবে। পুরোনো ঘুণে ধরা ব্যবস্থার প্রতিটি ফাটল আজ হয়ে উঠেছে নতুন সৃষ্টির উর্বর ভূমি। যেখানে একসময় দুর্নীতির রাজত্ব ছিল, সেখানে আজ ন্যায়বিচারের চারা রোপিত হচ্ছে; যেখানে ছিল হতাশা, সেখানে ডানা মেলছে নতুন সুযোগ; আর বিভেদের বিষবাষ্প সরিয়ে জেগে উঠছে এক অভূতপূর্ব ঐক্য।
দেশ গড়ার এই বিশাল কর্মযজ্ঞ কেবল সরকারের কাঁধেই বর্তায় না। এ দেশের মানুষ আজ নিজের ভাগ্যের চাবিকাঠি নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজ, যারা ছিল এই গণজাগরণের হৃৎস্পন্দন, তারাই আজ আগামীর আধুনিক স্থাপত্যের মূল কারিগর হিসেবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
২০২৬ সালের ভোরের প্রথম আলো যখন দিগন্তে উঁকি দেবে, তখন তাকে মনে হবে দীর্ঘ বিরহের পর এক পরম মমতাময়ী সন্ধি। যে রাজপথগুলো একসময় মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হতো, সেখানে এখন পড়বে আগামীর স্বপ্নদ্রষ্টা আর কারিগরদের শান্ত অথচ দৃঢ় পদক্ষেপ।
২০২৬ সালের এই উদয় কেবল ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টানো নয়; এটি একটি জাতির পুনর্জন্ম। এটি এক পবিত্র অঙ্গীকার যে, উত্তাল সময়ের শিক্ষাগুলোই হবে আগামীর পথপ্রদর্শক। এ জাতি এখন আর শুধু কোনোমতে টিকে থাকাতে সন্তুষ্ট নয়; বরং আমরা এখন অদম্য সাহসে শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে পৌঁছাতে বদ্ধপরিকর।
নতুন এই বাংলাদেশের হয়তো কিছু অপূর্ণতা আছে। কারণ, কোনো রাষ্ট্রই নিখুঁত নয়। কিন্তু এই বাংলাদেশ এখন অকুতোভয় হয়ে স্বপ্ন দেখতে জানে, অন্যায়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে জানে এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে নতুন কিছু গড়তে জানে। ২০২৫ সালের প্রতিটি বিসর্জন আজ রূপ নিতে চলেছে ন্যায়বিচার, সাম্য আর সমৃদ্ধির ভিত্তিপ্রস্তরে।
২০২৬ সালের ভোর কেবল সূচনা নয়। এটি এক পুনর্জন্মের ঘোষণা। অশান্ত এক বছরের শিক্ষা ভবিষ্যৎ নির্মাতাদের পথ দেখাবে, এই অঙ্গীকারই এর মর্মকথা। এই জাতি আর কেবল টিকে থাকার কথা ভাববে না। দৃঢ়ভাবে, নির্ভীকভাবে এগিয়ে যাবে শ্রেষ্ঠত্বের পথে।
২০২৬ কেবল একটি নতুন বছর নয়; আসছে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণমূলক আর উৎসবমুখর এই নির্বাচনের মাধ্যমে সূচিত হতে যাচ্ছে এক নতুন প্রারম্ভ।
বাংলাদেশ আজ তার সোনালি ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াচ্ছে, যা এ দেশের মানুষের অদম্য প্রাণশক্তি আর আশার অবিনশ্বর শক্তিরই এক জীবন্ত দলিল।
