
রাজধানীর জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জনসংখ্যার অত্যধিক চাপে ঢাকা মহানগরী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। ঢাকা সব কাজের জন্য কেন্দ্রীভূত হওয়ার ফলে বড় ধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে। মানুষের মধ্যে গ্রাম থেকে শহরে আসার প্রবণতা বাড়ছে। মানুষ একটু ভালো বা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার জন্য শহরমুখী হচ্ছেন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় কর্মসংস্থানের চাপ ব্যাপকভাবে বাড়ছে। এতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনবিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। দেশে বেকার সমস্যা প্রকট। কিন্তু নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। এর ওপর রয়েছে জনসংখ্যার অত্যধিক চাপ। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক দারিদ্র্য এবং বিরাজমান বৈষম্য কমিয়ে আনতে সরকারকে দেশের প্রান্তিক মানুষের জন্য দ্রুত কর্মসংস্থানের তাগিদ দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যেকোনো অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে পড়লে বাংলাদেশের প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ (যা মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ) আবারও দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর ফলে রাজধানীর ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন নগরবিদরা।
রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যার পাশাপাশি ভৌগোলিক বিস্তৃতি প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এর ফলে বিশ্বের বৃহৎ শহরের তালিকায় নবম স্থান থেকে এবার দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে রাজধানী ঢাকা। জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। সংস্থাটির মতে, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহরের তালিকায় শীর্ষে থাকবে ঢাকা। গত ২৬ নভেম্বর বুধবার আলজাজিরা তাদের এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের এ নতুন মূল্যায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহর হিসেবে ছিল জাপানের রাজধানী টোকিও। তবে নতুন পরিসংখ্যানে টোকিওকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এসেছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা। দ্বিতীয় স্থানে ঢাকা আর তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে টোকিও। জাতিসংঘের তথ্য মতে, বর্তমানে জাকার্তায় বসবাস করেন ৪ কোটি ১৯ লাখ মানুষ। ঢাকায় ৩ কোটি ৬৬ লাখ এবং টোকিওতে ৩ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ বসবাস করেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, ঢাকার দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষের রাজধানীমুখী যাত্রা। অনেকে কর্মসংস্থানের খোঁজে আবার অনেকে বন্যা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ বা সমুদ্রস্তর বৃদ্ধির ঝুঁকি থেকে বাঁচতে ঢাকার দিকে পাড়ি জমাচ্ছেন। ঢাকার এই দ্রুত বিস্তার ভবিষ্যৎ শহর ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জনসেবার ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. আমিনুল হকের মতে, কেবল কর্মসংস্থান নয়, শিক্ষা ও রাজনৈতিক খাতে বড় সুযোগ নিতে গ্রামের তরুণরা ঢাকামুখী হচ্ছেন। গ্রামের ছেলেমেয়েরা মফস্বলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছেন না। তারা ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন। প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ তরুণ ঢাকায় এসে বসবাস করতে শুরু করেন। চাইলেই এই স্রোত রুখে দেওয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আমরা কোনোভাবেই রাজধানীমুখী উন্নয়ন বন্ধ করতে পারি না। আমরা পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ নানা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। কিন্তু সেসব প্রকল্প এলাকায় কর্মসংস্থান করতে পারেনি। নিম্ন আয়ের মানুষ ক্রমেই ঢাকামুখী হওয়ায় জনঘনত্ব আরও বেড়েছে। এ স্রোত থামাতে হলে উন্নয়ন প্রক্রিয়া বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
জাতিসংঘের পূর্বাভাসকে আমলে নিয়ে এখন থেকেই রাজধানীর ওপর থেকে জনসংখ্যার চাপ কমাতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ঢাকার বাইরে শিল্পকারখানা স্থাপনে পদক্ষেপ নিতে হবে। বড় বড় জেলাগুলোতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাস্তুচ্যুত মানুষ এবং জীবিকার সন্ধানে আসা মানুষের ভিড় সামলাতে বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। সব কাজ ঢাকাকেন্দ্রিক না করে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
