
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষায় রয়েছেন নির্বাচিত সরকারের জন্য। দেশে এখন যেমন রাজস্বের চাপ বেশি, তেমনি সুদের হারের পাল্লা ভারী হচ্ছে। কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পণ্য পরিবহনেও অনিশ্চয়তা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ ছাড় না করা, ডলারের উচ্চমূল্য, ভূরাজনীতির টানাপোড়েনের প্রভাবে দেশের অর্থনীতি কঠিন চাপে পড়েছে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এরই মধ্যে দেশের অর্থনীতিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদি ভালো সম্ভাবনা ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় স্বল্পমেয়াদি সম্ভাবনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এর প্রভাব আগামীতে আরও দৃশ্যমান হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। সম্ভাবনাময় অনেক শিল্পকারখানা অর্থাভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। বহু প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না। যেকোনো রাজনৈতিক ট্রানজিকশনের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হলে দেশের ভেতরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। তাই অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না। তাদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবে এর মধ্যেই রাজস্ব ঘাটতি বেড়েছে। ঠিকমতো ব্যবসা-বাণিজ্য করতে না পারায় তারা ভ্যাট ও শুল্ক পরিশোধ করতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব পরিশোধে সময় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন তারা। এ ছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা এখন অপেক্ষার নীতি নিয়েছেন। বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তার অপেক্ষায় আছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ায় সিদ্ধান্তে কঠোর হয়েছেন। এ ধরনের অনিশ্চয়তায় কারণে নতুন নতুন শিল্প গড়ে উঠছে না। পুরাতন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ফলে দেশে কর্মসংস্থানও বাড়ছে না। এ ছাড়া পর্যটন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ায় পর্যটন খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সম্প্রতি রাজনৈতিক সংকটের কারণে ফ্ল্যাট ও প্লট বিক্রি কমেছে। তারা মনে করেন, এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হলে অবশ্যই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মুস্তফা কে. মুজেরি বলেন, সরকার আর্থিক সংকটে আছে। ব্যাংক খাতে, বিনিয়োগে, প্রকল্প উন্নয়ন, পুঁজিবাজারসহ অর্থনীতির প্রায় সব খাতে ভারসাম্য কমছে। বিনিয়োগ অর্থনীতির জ্বালানি। রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। ফলে অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা বাড়ছে। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে হবে।
টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করার মতো ঝুঁকিমুক্ত উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। এতে করে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বেকার সমস্যার সমাধান হবে। বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। প্রত্যাশা করছি, রোডম্যাপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের আধার কেটে যাবে এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
