
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট নির্বাচন কমিশনের সামনে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের নির্বাচনি ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো কমিশনকে এমন কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সংসদের ভোটের দিন একসঙ্গে গণভোট আয়োজনের বিশাল কর্মযজ্ঞ যুক্ত হওয়ায় চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ। ইতোমধ্যে দুই ভোট একসঙ্গে আয়োজন করার সরকারি নির্দেশ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরপর ইসি সচিবালয়ের প্রস্তুতি গতিশীলতা পেয়েছে। একদিকে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে ইসিকে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। অপরদিকে গণভোট আয়োজনের অতিরিক্ত দায়িত্ব, প্রশাসনিক ব্যয়, জনবল, কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা ও সময় ব্যবস্থাপনা- সব ক্ষেত্রেই বাড়তি প্রস্তুতি কমিশনকে সামলাতে হচ্ছে। গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন আয়োজনকে বিশেষজ্ঞরা ইসির জন্য অপারেশনাল মেগা চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ এখানে কোনো ধরনের ভুল পুরো ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, যা জাতীয় নির্বাচনে ভুল হবে, তা গণভোটের ফল নষ্ট করতে পারে, আর গণভোটে ভুল হলে জাতীয় নির্বাচনে বিতর্ক সৃষ্টি হবে। এই দ্বৈত ঝুঁকিই এখন ইসির জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়।
ইসির কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা বা সময় ব্যবস্থাপনা নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে। যেমন, একটি ভোটকক্ষে একজন ভোটার সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ সেকেন্ড সময় নেন। এবার সময় আরও বাড়বে। কারণ ভোটারকে দুটি ব্যালট নিতে, দুটি সিল দিতে ও দুটি বাক্সে ব্যালট ফেলতে হবে। নারী ভোটাররা বুথে ৫৭ সেকেন্ড এবং পুরুষ ভোটাররা বুথে ৪৮ সেকেন্ড সময় পাবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এতে করে ভোটারদের লাইন দীর্ঘ হতে পারে। নারী ও প্রবীণ ভোটারদের ভোটে অংশগ্রহণ কমে যেতে পারে। কেন্দ্রের ভেতরে ভিড় বাড়লে উত্তেজনা বাড়বে এবং ভোট গ্রহণের গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রভিত্তিক উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করাই সবচেয়ে বড় বাস্তব চ্যালেঞ্জ। কেন্দ্রের সংখ্যা না বাড়ালে অতিরিক্ত বুথ বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। এতে জনবল বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যয়ও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশিক্ষণ নিখুঁত না হলে ভোটের দিন ছোট একটি ভুলই বড় রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নেবে। প্রশাসনিক যত প্রস্তুতিই থাকুক, মানুষের ভুলের প্রবণতা সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।
মঙ্গলবার গণভোট অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। ফলে একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধা থাকল না।
দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট লজিস্টিক সমন্বয়ের কঠিন চ্যালেঞ্জ। এক বুথে দুই ভোট সময়ের কঠিন বাধা। সরকার বাধা অতিক্রম বা ঝুঁকি মোকাবিলা করতে সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। দুটি ভোট, দুটি ক্যাম্পেইন। সুতরাং দলগুলোকে দ্বিগুণ প্রচারের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কমনওয়েলথ বাংলাদেশে অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন দেখার প্রত্যাশায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশে একটি সফল জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে, সেটাই প্রত্যাশা।
