শনিবার ২৫ অক্টোবর ২০২৫
৯ কার্তিক ১৪৩২
অবশেষে হাসি ফিরল শিক্ষকদের মুখে: আন্দোলনের পর ক্লাসে ফেরা
অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন
প্রকাশ: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ১:২৬ এএম আপডেট: ২৫.১০.২০২৫ ২:০৩ এএম |

 অবশেষে হাসি ফিরল শিক্ষকদের মুখে:  আন্দোলনের পর ক্লাসে ফেরা
মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে বিগত সরকার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়বিহীন প্রতিটি উপজেলায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করেন। যে কারণে৩৬৪টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ হয়। আমাদের দেশে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রায় ৯৭ শতাংশ বেসরকারি। মূলত এগুলো এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে কর্মরত প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী।
এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকার সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডের সমপরিমাণ মূল বেতন দেয়। যদি বিএড পাশ থাকেন সেখানে তাঁদের ১৬ হাজার টাকা স্কেলে বেতন শুরু হয়, এর মধ্যে ১০% টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য কেটে নেন। এর বাইরে তাঁরা বাড়ি ভাড়া বাবদ মাসে এক হাজার টাকা ও চিকিৎসা ভাতা বাবদ মাসে ৫০০ টাকা পান। যে সকল শিক্ষকদের বিএড নেই তাঁরা বেতন পান মাত্র ১২ হাজার পাঁচশত টাকা মাত্র। এর মধ্যে ১০% টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য কেটে নেন। এর বাইরে তাঁরা বাড়ি ভাড়া বাবদ মাসে এক হাজার টাকা ও চিকিৎসা ভাতা বাবদ মাসে ৫০০ টাকা পান।
সেই হিসাবে বিএড ছাড়া শুরুতে একজন শিক্ষকের বেতন ভাতা ১২ হাজার ৭৫০ টাকা পান। এর বাইরে যেসব স্কুলের আয় আছে, তারা ফান্ড থেকেও কিছু টাকা শিক্ষকদের দেয়। তবে বেশির ভাগ স্কুল তা দিতে পারে না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ওস্কুলের কর্মচারীরা উৎসব ভাতা পান মূল বেতনের ৫০ শতাংশ।
তবে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যাঁরা সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে যোগ দেন, তাঁরা শুরুতেই  প্রায় ২৬ হাজার টাকা বেতন পান। এর বাইরে তাঁরা সন্তানদের পড়ালেখার জন্য ভাতা পান। পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতাসহ নানা ধরনের সুবিধা পান। আর কত বৈষম্য থাকবে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের বৈষম্য দূর করার সময় এসেছে।
ইউনেস্কোর মতে, জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ অন্তত ৬ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। প্রতি অর্থবছরে এই বাজেট বরাদ্দ কমছেই। বাংলাদেশের বাজেটে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে জিডিপির ১.৬৮ শতাংশ, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১.৭৬ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১.৮৩ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২.০৮১ শতাংশ। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভুটানের শিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দ জিডিপির ৬.৬ শতাংশ, আফগানিস্তানে ৪.১ এবং ভারত  বরাদ্দ ২.৯ শতাংশ।
সূচকে আমাদের চেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতেও শিক্ষকদের বেতন বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। বর্তমানে  শিক্ষকদের বেতন দ্বিগুণ করা হলেও একজন প্রভাষকের মূল বেতন হয়েছে ২২ হাজার টাকা। বর্তমানে নেপালে একজন প্রভাষকের মূল বেতন ২৮ হাজার ১৯২ টাকা। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও মর্যাদা অনেক বেশি। আমাদের দেশের শিক্ষা খাত বরাবরই উপেক্ষিত। শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার বাস্তব প্রচেষ্টা ও জ্ঞানের মজুত বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট গবেষণা নেই। একজন মেধাসম্পন্ন শিক্ষকই তৈরি করতে পারেন একজন প্রতিভাসম্পন্ন শিক্ষার্থী। তাই আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে  মেধাসম্পন্ন ব্যক্তির পরিমাণ শিক্ষকতা পেশায় আনতে হবে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে বেসরকারি মাধ্যমিক এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৮৯৬৮ টি, সরকারি মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান ৬৮৪ টি। বেসরকারি কলেজ (এমপিওভুক্ত) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩৩৪১ টি, সরকারি কলেজ ৬৩৭ টি।
এই পরিসংখ্যান থেকে বুঝা যায় সরকারি শিক্ষকদের চেয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের পরিমাণ অনেক বেশি।এতে বুঝা যাচ্ছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সব চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে বেসরকারি শিক্ষকরাই। পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যুগে যুগে তাঁরাই বেশি অপেক্ষিত।
যে কারণেবর্তমানে আর্থিক সুযোগ সুবিধার সমস্যায় আমাদের শিক্ষকতা পেশা কিন্তু দিন দিন অনেকের ক্ষেত্রে বিপদের চাকরী হয়ে পড়ছে। অনেকে অন্য কোনো চাকরি পেলে শিক্ষকতা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। যে কারণে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষদের ঘাটতি পূরণ হচ্ছে না।
এখনও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শিক্ষকের পদ খালি। অনেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েও শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এর মূল কারণ বেশিরভাগ শিক্ষকদের জীবন যাত্রার চলার পথ অনেক কষ্ট হচ্ছে। এত স্বল্প টাকা বেতন পেয়ে কোনোভাবেই তাঁরা চলতে পারছেন না। কিভাবে চলবে বলেন শিক্ষকরা বর্তমানে মাসিক চিকিৎসা ভাতা পান ৫০০ টাকা, যেখানে একবার ডাক্তার দেখালে ফি দিতে হয় কমপক্ষে ১০০০ টাকা।
আমরা এখন আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার দিকে যাচ্ছিদেশের প্রায় সাড়ে ৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বর্তমানে মাসিক এক হাজার টাকা করে বাড়িভাড়া ভাতা পান। এ ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষকরা। এ নিয়ে একাধিকবার তাদের আশ্বস্তও করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে গত ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবসে শতাংশ হারে বাড়িভাড়া না বাড়িয়ে ৫০০ টাকা বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষকরা।  গত ১২ অক্টোবর থেকে লাগাতর অবস্থান কর্মসূচির পালন করতে থাকে।  অবশেষে ২১ অক্টোবর দুই ভাগে মূল বেতনের ১৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। যে কারণে আন্দোলনের সফলতা নিয়ে ক্লাসে ফিরছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।
এই দাবী আদায়ের জন্য আন্দোলন চলাকালীন সময় শিক্ষকদের ওপর জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। শিক্ষদের উপর লাঠিচার্জ করা হয়। একদিন ৬ শিক্ষক দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে আটক পুলিশ পরে মুচেলকা নিয়ে ছেড়ে দেয়।কি অপরাধ ছিল স্যারদের ? ছাড়া পাওয়া ছয়জন শিক্ষক হলেন- টাঙ্গাইলের নাগপুরের আনোয়ার হোসেন, লক্ষ¥ীপুর সদরের আজাদ হোসেন মিরাজ, পাবনা সদরের ইউসুফ আলী, বরিশালের মুলাদীর রেজাউল করিম, চাঁদপুর সদরের নেওয়াজ মোরশেদ ও রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মামুন মিজি। এছাড়াও তিনজন শিক্ষক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাপসাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এভাবে কি শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবীপূরণের জন্য শ্রেণি কক্ষ খালি ফেলে বার বার আন্দোলন করতে হবে ?
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজ, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা।












http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
চলতি মাসেগ্রিন সিগন্যাল পানে ২০০ প্রার্থী
বুড়িচং-ব্রাহ্মণাপাড়ার বিএনপি ঐক্যবদ্ধ: হাজী জসিম
দল মনোয়ন দিলে আমি বিএনপিকে এই আসন উপহার দিবো :সাবেক সচিব ড. এ কে এম জাহাঙ্গীর
ব্রাহ্মণপাড়ায় স্কুল ছাত্রীর বিষ পানে আত্মহত্যা
‘চকবাজারের ঘটনায় জড়িত কেউ যুবদলের নয়’
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
দল মনোয়ন দিলে আমি বিএনপিকে এই আসন উপহার দিবো :সাবেক সচিব ড. এ কে এম জাহাঙ্গীর
শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী মামলার শুনানি পর্ব সমাপ্ত
একদিন আগে কেনা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো দুই বন্ধু
কুমিল্লার বাজারে এক শ’ টাকার নিচেসবজি নেই
কুমিল্লায় মুফতি ফয়জুল করীম এমন কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান নেই যা দখল করা হয়নি
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২