জহির শান্ত: কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুড়ি এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী ও তার মায়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা চাঞ্চল্যকর এ দুই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে ২৪ ঘন্টা সময় বেধে দেন। তবে পুলিশ বলছে, ২৪ ঘন্টা নয়; ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তারা জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। যদিও পুলিশের এ বক্তব্যে ‘হতাশ’ শিক্ষার্থীরা পুনরায় আন্দোলন শুরু করে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই দোষিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এর আগে রবিবার মধ্যরাতে কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুরি এলাকার একটি বাসা থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ও তার মায়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হচ্ছেন- কুমিল্লার আদালতের প্রয়াত প্রধান হিসাবরক্ষক নুরুল ইসলামের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার (৫০) ও তার কন্যা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন (২৪)।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, রবিবার দিবাগত মধ্যরাতে জাতীয় জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯ এর মাধ্যমে কল পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করি। প্রাথমিকভাবে তাদের শরীরে বড় কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। তবে বিছানার পাশে বিভিন্নস্থানে রক্তের দাগ দেখা গেছে। মরদেহগুলো উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। বিষয়টি হত্যাকাণ্ড বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছেন তিনি। এ বিষয়ে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
নিহত সুমাইয়ার ভাই কুমিল্লা ইপিজেডের একটি কোম্পানীর কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। রোববার রাতে বাসায় ফিরে দেখি আমার মা ও বোন আলাদা রুমে আলাদা ঘুমিয়ে আছে। আমার রুমে রক্তের দাগ। আমি তাদেরকে জাগাতে গিয়ে দেখি তারা আর বেচে নেই। কে বা কারা তাদেরকে হত্যা করে ফেলেছে। আমাদের কোন শত্রুতা নেই কোন ব্যাংক ব্যালেন্স নেই। কারা এ কর্মকাণ্ড ঘটালো তা জানিনা। বাসা থেকে চারটি মোবাইল ফোন ও বোনের ব্যবহৃত ল্যাপটপটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ভবনের মালিক আনিছুল ইসলাম রানা জানিয়েছেন, প্রায় চার বছর আগে কুমিল্লার আদালতের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বাড়িটি ভাড়া নেন। গত বছর তার মৃত্যুর পর স্ত্রী তাহমিনা আক্তার (৫০), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে সুমাইয়া আফরিন (২৪) তার আরও দুই ছেলে বাড়িটিতে থাকছেন। ভাড়া বাড়িতে তারা অন্য কারো সাথে তেমন কথা বলতেন না। গতকাল (রবিবার) রাতে তার দুই ছেলে ঢাকা থেকে বাসায় আসলে তারা ঘরের দরজা খোলা দেখে। এই সময় তারা ভাবে তাদের মা ও বোন ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু বাসায় ঢুকার পর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও তাদের কোন সারা শব্দ না পেয়ে জাগাতে গিয়ে দেখেন তারা নড়ছে না। পরে ৯৯৯ এ কল পেয়ে সোমবার ভোরবেলা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং কুমিল্লা মেডিকেল এর মর্গে পাঠায়।
তিনি আরো জানান, ভবনের নিচতায় শিশুদের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে একজন ব্যক্তি রবিবার দিনের বেলায় তাদের বাসায় আসা-যাওয়া করেছিল। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এদিকে কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া ওই শিক্ষার্থী ও তার মায়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা ১টার দিকে তারা সুমাইয়া ও তার মাকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে ২৪ ঘন্টা সময় বেধে দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
বিক্ষোভ চলাকালে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জিয়াউদ্দিন মুহম্মদ রুবেল বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ইতোমধ্যে আমাদের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল, আজকে একজন শিক্ষার্থী ও তার মা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলার এমন অবনতি কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা পুলিশকে জানিয়ে দিতে চাই। সুমাইয়া হত্যায় জড়িতদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ কুমিল্লার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। না হয় আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।