
গণ
অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায়
রায় কবে ঘোষণা করা হবে, তা জানা যাবে আগামী ১৩ নভেম্বর। আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনাল ২৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দিয়েছে। এদিন গত বছর ‘জুলাই
আন্দোলন’-এর সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে
মামলার শুনানি পর্ব শেষ হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিন
বিচারপতির বেঞ্চে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাটি চলছে। বিচারপতি মোহাম্মদ
গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ওই বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি মোহাম্মদ
শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মোহম্মদ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। শেখ
হাসিনা-সহ মোট তিন জন অভিযুক্ত রয়েছেন এই মামলায়। অপর দু’জন হলেন সাবেক
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী
আবদুল্লাহ আল-মামুন। মামুন বর্তমানে এই মামলায় নিজের দোষ স্বীকার করে
রাজসাক্ষী হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার আদালতে সওয়াল-জবাব পর্বের ক্লোজ়িং
স্টেটমেন্ট পেশ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। এসময়
অভিযুক্ত আসামীদের মৃত্যুদণ্ডের আর্জি জানান তিনি। শেখ হাসিনা ও
আসাদুজ্জামান খান কামালকে ইঙ্গিত করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “যদি এই
আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে অনেকেই প্রতিবাদ করবেন। এই দুইজনের যদি
বিচার না হয়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ ভীরু-কাপুরুষ হয়ে উপহাসের পাত্র হয়ে
থাকবে।
অ্যাটর্নি জেনারেলের সমাপনী বক্তব্য শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার জানান,
আগামী ১৩ নভেম্বর হাসিনাদের বিরুদ্ধে মামলায় রায় ঘোষণার দিন জানানো হবে।
এদিন
ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলিরা ছাড়াও আদলতে উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনা এবং
আসাদুজ্জামান খান কামালের আইনজীবী আমির হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষ নিযুক্ত এই
আইনজীবী দুই অভিযুক্তের খালাসের আর্জি জানান।
জুলাই হত্যাযজ্ঞের মামলায়
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান
খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিচার শুরু হয় গত ৩
আগস্ট। এরপর ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ সাক্ষীর জবানবন্দি এবং ৬ কার্যদিবস
যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন।
এর আগে গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ
তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে ১ হাজার ৪০০ জনকে হত্যার উসকানি,
প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি এবং জয়েন্ট
ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের মোট পাঁচটি অভিযোগে বিচার শুরুর আদেশ দেয়
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলার বিচার শুরু হয়।
আর তা শুরু হয় সেই আদালতে, যে আদালত তার সরকার গঠন করেছিল একাত্তরের
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য।
প্রসিকিউশন মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার
আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র তৈরি করে। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার,
জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার
বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ
প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত
সংস্থা।
জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই শেখ
হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার শেষ করার দাবি জানিয়ে আসছে। এদিকে একটি
সামাজিক মাধ্যমে পোস্টে অন্তর্বর্তি সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ
নজরুলও এ সরকারের শাসনামলেই এ বিচার শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
