উচ্চশিক্ষার
জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দুই বন্ধু রাজিদ আয়মান
ও হাসিবুল হাসান চৌধুরী ১২ দিন পর মৃদু মৃদু চোখ খুলেছেন, তবে এখনো তারা
কাউকেই চিনতে পারছে না। দুইজন দক্ষিণ কোরিয়ার ওনজুর শহরের একটি হাসপাতালে
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি রয়েছে। গত বছরের আগষ্টে উচ্চ
শিক্ষার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার কিউংডং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগে ভর্তি হয়
এই দুই বন্ধু।
গত ২৭ আগষ্ট রাত ১১টার দিকে দক্ষিণ কোরিয়ার ওনজু শহরে
একটি স্কুটি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় দুই বন্ধুসহ তিনজন। পরে তাদের
আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওনজু শহরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি রাখেন।
আহত রাজিদ আয়মান (২০)
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার পৌর ফতেহাবাদ গ্রামের মো. নান্নু মিয়া
মাস্টারের ছেলে এবং হাসিবুল হাসান চৌধুরী (২১) একই উপজেলার ধামতী ইউনিয়নের
ধামতী গ্রামের মো.ওমর ফারুক চৌধুরীর ছেলে। অপর আহতের নাম শিহাব তার বাড়ি
জেলার বুড়িচং উপজেলায়। তার সম্পর্কে আর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
রাজিদ ও
হাসিবুলের মামাতো ভাই আহমেদ শুভ বলেন, ছোটবেলা থেকেই রাজিদ ও হাসিবুল ছিল
ভদ্র, মেধাবী ও পরিশ্রমী। তারা দুইজনে একই স্কুলে পড়ত, একই পোশাক পড়ত।
ক্লাসে কেউ ফাস্ট বয় কেউ সেকেন্ড বয় থাকত। ২০২২ সালে এইচএসসিতে জিপিএ
গোল্ডেন ৫ পাওয়ার পর উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাহিরে যাবে এমন কথা আমাকে
অনেক বার বলছিল। পরে দুইজনই পরিবারকে না জানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার কিউংডং
বিশ^বিদ্যালয়ে বিবিএ ভর্তির আবেদন করেন এবং একই সঙ্গে কোরিয়ান ভাষা শেখেন।
পরে পরিবার তাদের উচ্চশিক্ষায় বাধা না হয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার পাঠায়। বর্তমানে
ওখানে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে আইসিউতে ভর্তি রয়েছে তারা।
রাজিদ আয়মানের
বাবা সোমবার রাত ১০টার দিকে বলেন, গতকাল রাজিদ আয়মান চোখে খুলেছে, জ্ঞানও
ফিরেছে, শ^াস-প্রশ^াস নিতে শুরু করেছে। আমি ভিডিও কলে দেখেছি। তবে আজ আর
ভিডিও কলে দেখতে পারিনি। তার কপাল ও মাথায় প্লাস্টিক সার্জারী (অপারেশন)
করা হয়েছে। এজন্য চিকিৎসক ভিডিও কলে দেখতে দেয়নি। আমার ছেলের অনেক স্বপ্ন
ছিল বিদেশে গিয়ে পড়ালেখা করে দেশে ফিরবে কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। আপনারা
আমার ছেলের জন্য দোয়া করুন। আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে সুস্থ করে দেশে ফিরায়ে
আনতে পারি।
হাসিবুল হাসান চৌধুরীর চাচা মো.ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ১২
দিন পর হাসিবুল চোখ মেলেছে, আস্তে আস্তে শ^াস প্রশ^াস নিতে পারছে, তবে
কাউকেই চিনতে পারছে না, মাথায় প্রচন্ড আঘাতের কারণে উল্টা-পাল্টা কথা বলছে।
মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। আমরা কোরিয়ার কাউকে পাঠানোর চেষ্টা করছি,
ভিসার জন্য আবেদন করার প্রস্তুতি চলছে। তার মা বাবার ঘুম নেই, সারা দিন রাত
ছেলের জন্য কান্নাকাটি করে। পরিবার, আত্মীয়স্বজন চিন্তায় আছেন । দেশবাসীর
কাছে আমার ভাতিজার জন্য দোয়া চাই।