ভাগ্য
বদলের আশায় বিদেশে গিয়ে জীবনটাই হারিয়ে ফেললেন ২২ বছরের নূর মোহাম্মদ আকাশ
সরকার। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সৌদি আরবের রিয়াদ এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পে
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু মর্মান্তিক এই ঘটনার ছয় মাস
পেরিয়ে গেলেও তার লাশ এখনো দেশে ফেরানো সম্ভব হয়নি। লাশটি বর্তমানে সৌদি
আরবের একটি হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে।
আকাশের পরিবার এখন চরম শোক ও
অসহায়ত্বের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাদের একমাত্র চাওয়া, সন্তানের লাশটি যেন
তারা শেষবারের মতো দেখতে পান এবং নিজ হাতে দাফন করতে পারেন। তারা সরকারের
দিকে তাকিয়ে আছে, যাতে তাদের সন্তানের লাশটি দ্রুত দেশে এনে শেষ বিদায় দিতে
পারে। এ ঘটনায় সোনারামপুর এলাকায় শোকের আবহ তৈরি করেছে এবং স্থানীয়রা
সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার
বাঙ্গরা বাজার থানাধীন আন্দিকুট ইউনিয়নের সোনারামপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও
সাহিদা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে ছিলেন আকাশ। অভাবের সংসারে মা-বাবার
মুখে হাসি ফোঁটানোর জন্য মাত্র নয় মাস পূর্বে অর্থাৎ গত বছরের অক্টোবর
মাসে আকাশ সৌদি আরবে পাড়ি জমান। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। চলতি
বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এক মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে তার জীবন প্রদীপ নিভে
যায়। যে ছেলেটি পরিবারের কষ্ট দূর করতে গিয়েছিল, তার মৃত্যুতে এখন সেই
পরিবারই গভীর শোকের সাগরে ভাসছে।
আকাশের মৃত্যুর পর কেটে গেছে ছয়টি মাস,
কিন্তু তার লাশ এখনো সৌদি আরবের একটি হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে। আকাশের
বাবা-মা জানায়, লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। ছেলের
শোকে কাতর মা সাহিদা বেগম বিলাপ করে বলেন, ‘আমার কলিজার টুকরা আমারে রাইখা
চইলা গেছে। আপনারা আমার কলিজার লাশটা আইনা দেন, আমি তারে বুকে জড়াইয়া ধইরা
মাটি দিমু।’
আকাশের বাবা রফিকুল ইসলাম সরকার জানান, ‘নয় মাস আগে আমার
ছেলে বিদেশ গিয়েছিল, ছয় মাস আগে সে মারা গেছে। সরকারের কাছে আকুল আবেদন,
আমার আকাশের লাশটা দেশে আনার ব্যবস্থা করে দিন।’
আন্দিকুট ইউনিয়ন
পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ‘পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে
সরকারি খরচে লাশটি ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি অনুরোধ করেছেন।’
প্রবাসী
কল্যাণ সংস্থার কুমিল্লার সহকারী পরিচালক আলী হোসেন আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘লাশ
আনার সরকারি খরচের পাশাপাশি দাফনের জন্য ৩৫ হাজার টাকা এবং পরবর্তীতে আরও ৩
লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। পরিবারের সদস্যদের দ্রুত আমার সঙ্গে
যোগাযোগ করতে বলেন।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ
আবদুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি আমাকে আগে জানানো হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে
লিখিত আবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
