সোমবার ৩০ জুন ২০২৫
১৬ আষাঢ় ১৪৩২
কুমিল্লায় সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণ ও নিপীড়ন
অভিযুক্ত ফজর আলীসহ গ্রেপ্তার ৫
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫, ১:০৬ এএম আপডেট: ৩০.০৬.২০২৫ ১:৫২ এএম |


অভিযুক্ত ফজর আলীসহ গ্রেপ্তার ৫নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লার মুরাদনগরে সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই ঘটনায় ভিডিওচিত্র ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরো চারজনকে। এর মধ্যে প্রধান আসামি ফজর আলীকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে এবং ভিডিওচিত্র ধারণের অভিযোগ চারজনকে মুরাদনগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান। 
গ্রেপ্তার ফজর আলী (৩৮) মুরাদনগর বাহেরচর গ্রামের পুর্বপাড়ার শহীদ মিয়ার ছেলে। গ্রেপ্তার অন্য চারজন হলেন একই আব্দুল হান্নানের ছেলে মো. সুমন, জাফর আলীর ছেলে রমজান আলী, আলম মিয়ার ছেলে মো. আরিফ ও তালেম হোসেনের ছেলে মো. অনিক। 
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিবাগত রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে বসত ঘরের দরজা ভেঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ভিডিওতে দেখা যায়- বিবস্ত্র অবস্থায় ওই নারীকে বেশ কয়েকজন যুবক মারধর করছেন। নারীটি অনেক আকুতি-মিনতি কান্নাকাটি করলেও যুবকরা তাকে মারতে থাকে এবং ভিডিও ধারণ করতে থাকে। সামাজিক মাধ্যমে এ চিত্র ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয় এবং দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি উঠে। এরপরই মূলত নড়ে-চড়ে বসে প্রশাসন। ধর্ষণে অভিযুক্ত ফজর আলী এবং ভিডিওধারণকারীদের খোঁজতে থাকে পুলিশ। অবশেষে শনিবার দিবাগত রাতে মুরাদনগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভিডিও ধারণকারী চারজনকে এবং ভোরে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে ধর্ষণে অভিযুক্ত ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান জানান, মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে ঢাকার সায়দাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবং ভিডিও ধারণকারী ও সরবরাহকারীদের কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে আলাদা একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত ফজর আলী আহত অবস্থায় থাকায় তাকে আইন অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়ার পর আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
থানায় দায়েরকৃত ভুক্তভোগী নারীর মামলা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫ দিন পূর্বে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে আসেন ওই নারী। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে ফজর আলী (৩৮) নামের এক ব্যক্তি তাঁর বাবার বাড়ি গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে টোকা দেন। এ সময় দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানালে একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।  
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়িতে অনেক শব্দ হচ্ছিল। সেখানে গিয়ে দেখি কিছু লোক ওই নারীকে মারধর ও ভিডিও করছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তাঁরা যখন বুঝতে পারেন ওই নারীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তখন লোকজন ফজর আলীকে মারধর করেন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতাল থেকে ফজর আলী পালিয়ে যান। শুনেছি তাঁকে রোববার ভোরে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। 
ভুক্তভোগী নারী জানান, পারিবারিকভাবে টাকা লেনদেনের বিষয় নিয়ে ফজর আলীর সাথে পরিচয় ছিলো। তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম এবং দিয়েও দিছি। এ নিয়ে কথা হতো। কয়েকদিন আগে ফজর আলী ও তার ভাই শাহাপরানের মধ্যে ঝামেলা হয়। কে নাকি শাহাপরানকে বলেছে- তোর ভাইয়ে হিন্দু মেয়ের সাথে কথা বলে, সম্পর্ক আছে। কিন্তু আমার তো সম্পর্ক নাই। কয়েকদিন পর আমি বাড়িতে আসলে শাহাপরান আমার কাছে এসে মোবাইল দেকতে চায়, আমি না দিলে সে কেড়ে নিয়ে মোবাইল মাটিতে আছড়ে ফেলে চলে যায়। পরে তার ভাইয়ের কাছে বিচার দেই। সে মনে হয় তারে মারছে। এরপর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে খালি বাড়িতে ফজর আলী আমার ঘরের দরজা খোলার জন্য ডাক দেয়। আমি না খোলায় সে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে আমার উপর অত্যাচার করে। এই অবস্থার ২/৩ মিনিটের মধ্যেই লোকজন আমার ঘরে ঢুকে ফজর আলীকেও মারছে, আমাকেও মারছে। আবার ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দিছে। যারা ভিডিও করেছে তাদের চেহারা চিনি কিন্তু পরিচয় জানি না। তাদের নামে থানায় মামলা করেছি। তারা অন্যায় করছে- আশা করছি বিচার পাবো।
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই নারী থানায় মামলা করার পরপরই পুলিশ আসামি গ্রেফতার করতে অভিযানে নামে। এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  এ ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

পুলিশের বিবৃতি:
এদিকে কুমিল্লার মুরাদনগরে সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণ ও ভিডিও চিত্র ধারণ এবং এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছে জেলা পুলিশ। শনিবার মধ্যরাতে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ২৬ জন আনুমানিক রাতে মুরাদনগর থানাধীন রামচন্দ্রপুর ইউপি বাহেরচর পাঁচকিত্তা গ্রামে একজন প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ফজর আলী নামে এক ব্যক্তি আটক ও প্রহৃত হন। পরবর্তীতে ফজর আলী সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে কিছু লোক তাৎক্ষনিকভাবে ভিকটিমের ভিডিও ধারন করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। খবর পেয়ে মুরাদনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করে। ভিকটিম নারী নিজে বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। 
ঘটনাটি ভিডিও ধারন করে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে তাদের মধ্যে চার জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর মামলার প্রধান আসামি ফজর আলীকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।’

অপপ্রচারের প্রতিবাদ মুরাদনগর বিএনপির:
এদিকে কুমিল্লার মুরাদনগরে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে বিএনপির কর্মী বলে অপপ্রচারে প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতারা দাবী করেন অভিযুক্ত ফজর আলী মুরাদনগর উপজেলার ১১ নং দক্ষিন রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়ার বডিগার্ড হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করা ফজর আলীর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, সেসব ছবিও প্রদর্শন করা হয়।  
রোববার বিকেলে কুমিল্লা নগরীর একটি রেস্তোরায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক কামাল উদ্দিন ভুইয়া। তিনি বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মুরাদনগরের ধর্ষক ফজর আলীকে বিএনপির কর্মী হিসেবে প্রচার চালানো হচ্ছে। যা সত্য নয়। ফজর আলীর সাথে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত সে আওয়ামী লীগের ক্যাডার। গত ১৫ বছরে সে মুরাদনগরে অসংখ্য অপকর্ম ঘটিয়েছে। আমরা তার বিচার চাই। 
এসময় উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোল্লা মুজিবুল হক, যুগ্ম আহবায়ক নজরুল ইসলাম,মুরাদনগর পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দুলাল দেবনাথ, সাধারণ সম্পাদক দয়ানন্দ ঠাকুর, উপজেলা মহিলা দলের আহবায়ক কাজী তাহমিনা আক্তার, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহববায়ক রায়হান উদ্দিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



















সর্বশেষ সংবাদ
অভিযুক্ত ফজর আলীসহ গ্রেপ্তার ৫
কুমিল্লায় আলোচিত ধর্ষণকাণ্ড ভিডিও ধারণকারী চার যুবক কারাগারে
কে এই ফজর আলী
‘পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেনওই নারী’
মুরাদনগরে নারী নির্যাতন ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ভিডিও দ্রুত অপসারণের নির্দেশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কে এই ফজর আলী
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে অপহৃত শিশু রাসেলকে জামালপুর থেকে উদ্ধার
কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের অভিযোগে আসামীদের গ্রেফতারের প্রেচেষ্টা অব্যাহত
কুমিল্লায় আলোচিত ধর্ষণকাণ্ড ভিডিও ধারণকারী চার যুবক কারাগারে
কুমিল্লায় সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড়
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২