সোমবার ৩০ জুন ২০২৫
১৬ আষাঢ় ১৪৩২
কে এই ফজর আলী
জহির শান্ত ।।
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫, ১:৩৭ এএম |



  কে এই  ফজর আলী কুমিল্লার মুরাদনগরে আলোচিত ধর্ষণকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। কী তার পরিচয়, কোন খুঁটির শক্তিবলে একের পর এক অপকর্ম ঘটিয়ে যাচ্ছেন তিনি, কারা তার প্রশ্রয়দাতাÑ এ নিয়ে চলছে আলোচনা, চুলচেড়া বিশ্লেষণ। বিভিন্ন মাধ্যমে উঠে আসছে তার রাজনৈতিক পরিচয়ও। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন- ‘ফজর আলী একজন খারাপ লোক, পূর্বেও অনেক অপকর্ম ঘটিয়েছেন তিনি।’ সেসব ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এবার এমন ঘৃণ্য একটি কাজ করার সাহস পেয়েছের ফজর আলী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামের পূর্বপাড়া বাসিন্দা শহীদ মিয়ার ছেলে ফজর আলী বেশ কয়েক বছর ধরেই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে বেশ কয়েকটি অকর্ম ঘটিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন স্থানে নির্মাণসামগ্রী সাপ্লাইয়ারের কাজ করেন। তবে এ পেশার আড়ালে তার মূল পেশা হচ্ছে সুদের ব্যবসা। আর এই সুদের ব্যবসার টাকা লেনদেন ঘিরেই একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছেন তিনি। এমন একটি টাকার লেনদেন নিয়ে সম্পর্ক গড়ে উঠে ধর্ষণের শিকার হওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই নারীর। যে ঘটনা এখন টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। দাবি উঠেছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির।
ফজর আলীর বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক ধর্ষণ ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এ প্রসঙ্গে কথা হয় বাহেরচর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি তালেম হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, সে অনেক খারাপ লোক। আগেও সে হিন্দু মেয়ে নিয়ে বেঁধে রেখে তাদের বাড়িতে ডাকাতি করেছে। এ নিয়ে এলাকায় বিচার আচার হয়েছে। একবার সে এক প্রতিবন্ধীকে তুলে নিয়ে কয়েকদিন আটকে রেখেছিল। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে গ্রামবাসী বিচারের আয়োজন করলেও ফজর আলী সেই বিচারে হাজির হয়নি। তার বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। সে সময় পার পেয়ে গেলেও এবার যেহেতু গ্রেপ্তার হয়েছে, নিশ্চয়ই সঠিক বিচার হবে।
রিজিয়া খাতুন নামে এক নারী বলেন, ফজর আলী খুবই খারাপ লোক। চুরি-ডাকাতি করে, জুয়া খেলে, মাদক ব্যবসা করে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
অভিযুক্ত ফজর আলী পূর্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে তার দলীয় পদপদবীর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।তবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফজর আলীর বেশ কয়েকটি ছবিতে মুরাদনগর আসনের সাবেক এমপি ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের মিছিলের অগ্রভাগে দেখা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সখ্যতার বেশ কয়েকটি ছবি ঘুরছে সামাজিক মাধ্যমে। 
অপরদিকে ধর্ষণের শিকার নারীর আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালের ঘটনায় যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের একজন মোহাম্মদ আলী সুমন। সে রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। 
ফজর আলীর প্রতিবেশী আবদুল বাতেন বলেন, তার বিরুদ্ধে অনেকদিন থেকেই নানা অভিযোগ শুনে আসছি। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় এতোদিন তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায়নি। এছাড়া সে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ গোলাম কিবরিয়া খোকনের বডিগার্ড হিসেবে পরিচিত।
মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক কামাল উদ্দিন ভুইয়া বলেন, অভিযুক্ত ফজর আলী আওয়ামী লীগের একজন চিহ্নিত কর্মী। মূলত সে আওয়ামী লীগের ক্যাডার হিসেবে কাজ করতো। গত ১৫ বছরে সে মুরাদনগরে অসংখ্য অপকর্ম ঘটিয়েছে।  ৫ আগস্টের পরও সে এলাকায় বহাল তবিয়তে আছে। আমরা তার বিচার চাই। 

টাকার লেনদেনেই ভিক্টিমের সাথে পরিচয় ফজর আলীর:
নির্মাণসামগ্রী সাপ্লাইয়ের আড়ালে সুদের ব্যবসায় জড়িত থাকা ফজর আলীর সাথে টাকা লেনদেনের সূত্র ধরেই পরিচয় হয় বলে জানিয়েছেন ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী নারী। তিনি জানান, পারিবারিকভাবে টাকা ধার নেওয়াকে কেন্দ্র করেই ফজর আলীর সাথে আমার পরিচয় ও কথাবার্তা হয়। তার কাছ থেকে ধার নেওয়া টাকা আমরা ফিরিয়েও দিছি। সেই সূত্র ধরেই কথা হতো। কয়েকদিন আগে ফজর আলী ও তার ভাই শাহাপরানের মধ্যে ঝামেলা হয়। কে নাকি শাহাপরানকে বলেছে- তোর ভাইয়ে হিন্দু মেয়ের সাথে কথা বলে, সম্পর্ক আছে। কিন্তু আমার তো সম্পর্ক নাই। কয়েকদিন পর আমি বাবার বাড়িতে আসলে শাহাপরান আমার কাছে এসে মোবাইল দেখতে চায়, আমি না দিলে সে কেড়ে নিয়ে মোবাইল মাটিতে আছড়ে ফেলে চলে যায়। পরে তার ভাইয়ের কাছে বিচার দেই। সে মনে হয় তারে মারছে। এরপর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে খালি বাড়িতে ফজর আলী আমার ঘরের দরজা খোলার জন্য ডাক দেয়। আমি না খোলায় সে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে আমার উপর অত্যাচার করে। এই অবস্থার ২/৩ মিনিটের মধ্যেই লোকজন আমার ঘরে ঢুকে ফজর আলীকেও মারছে, আমাকেও মারছে। আবার ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দিছে। যারা ভিডিও করেছে তাদের চেহারা চিনি কিন্তু পরিচয় জানি না। তাদের নামে থানায় মামলা করেছি। তারা অন্যায় করছে- আশা করছি বিচার পাবো।

কী বলছে পুলিশ:
২৬ জুন বৃস্পতিবার রাতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও শুক্রবার পর্যন্ত এ নিয়ে পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। কিন্তু ওই নারীর আপত্তির ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর টনক নড়ে প্রশাসনে, শুরু হয় অভিযান। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় মূল অভিযুক্ত ফজর আলী এবং ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে দেওয়া চার যুবক। এর মধ্যে ফজর আলীকে ধর্ষণ মামলায় এবং বাকী চারজনকে পর্ণোগ্রাফী আইনের অপর একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, ধর্ষণের শিকার নারীর আপত্তিকর ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি আমরা পর্যালোচনা করি। এরপর অভিযান চালিয়ে চারজনকে আমরা গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসি। অপরদিকে মামলার প্রধান আসামি ফজর আলীকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে আহত অবস্থায় কুমিল্লা পুলিশ লাইন্স হসপিটালে চিকিৎসাধীন আছে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান জানান, ‘ ২৬ জন রাতে মুরাদনগরের বাহেরচর পাঁচকিত্তা গ্রামে একজন প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ফজর আলী নামে এক ব্যক্তি আটক ও প্রহৃত হন। পরবর্তীতে ফজর আলী সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে কিছু লোক তাৎক্ষনিকভাবে ভিকটিমের ভিডিও ধারন করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। খবর পেয়ে মুরাদনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করে। ভিকটিম নারী নিজে বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। ইতোমধ্যে মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে ঢাকার সায়দাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছেএবং ভিডিও ধারণকারী ও সরবরাহকারীদের কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে আলাদা একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত ফজর আলী আহত অবস্থায় থাকায় তাকে আইন অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়ার পর আদালতে উপস্থাপন করা হবে।












সর্বশেষ সংবাদ
অভিযুক্ত ফজর আলীসহ গ্রেপ্তার ৫
কুমিল্লায় আলোচিত ধর্ষণকাণ্ড ভিডিও ধারণকারী চার যুবক কারাগারে
কে এই ফজর আলী
‘পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেনওই নারী’
মুরাদনগরে নারী নির্যাতন ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ভিডিও দ্রুত অপসারণের নির্দেশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কে এই ফজর আলী
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে অপহৃত শিশু রাসেলকে জামালপুর থেকে উদ্ধার
কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের অভিযোগে আসামীদের গ্রেফতারের প্রেচেষ্টা অব্যাহত
কুমিল্লায় আলোচিত ধর্ষণকাণ্ড ভিডিও ধারণকারী চার যুবক কারাগারে
কুমিল্লায় সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড়
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২