শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫
৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
চামড়া নিয়ে এবারও বিপাকে কুমিল্লার মৌসুমী ব্যবসায়ীরা
বিভিন্ন স্থালে নষ্ট হয়েছে অনেক চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে দুই তৃতীয়াংশ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫, ১:২৪ এএম |


চামড়া নিয়ে এবারও বিপাকে কুমিল্লার মৌসুমী ব্যবসায়ীরা রণবীর ঘোষ কিংকর।
সারা বছরের চামড়ার চাহিদার সিংহভাগ যোগান আসে পবিত্র ঈদ-উল আযহার পশু কোরবানি থেকে। আর ঈদ আসলেই চামড়া নিয়ে কারসাজি শুরু করে খোদ ট্যানারী মালিক থেকে শুরু করে আড়তদাররা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তকে ম্লান করে চামড়া কিনে বিপাকে পড়ছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। সরকারের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এবছর চামড়ার দাম বাড়তে পারে- সেই আশায় যেসব মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ঈদের দিন ঘুরে ঘুরে চামড়া কিনেছেন; তাদের মাথায় হাত। লাভ তো দূরে কথা, পুজি খাটিয়ে কেনা চামড়া অর্ধেক দামেও বিক্রি করতে পারেননি তারা।  গেলো কয়েক বছরের মতো ‘লোকসানের ধারাবাহিকতা’ এবারও অব্যাহত রয়েছে তাদের। এর ফলে কুমিল্লা মহানগরীসহ ১৭টি উপজেলায় এবার চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। চামড়া কিনে কেউবা লোকসান দিয়ে বিক্রি করেছেন; আবার কেউবা অতিরিক্ত লাভের আশায় শেষ পর্যন্ত তাদের কেনা চামড়া পানিতে ফেলেছেন। এমন পরিস্থিতিতে আড়াতদারদের দোষছেন মৌসুমী ব্যবাসায়ীরা। আর আড়তদাররা দোষছেন ট্যানারী মালিকদের। 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবছর কুমিল্লায় ২ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৩টি পশু কোরবানি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৯৪ হাজার ৩৪৭টি গরু এবং ৫১ হাজার ৭১৬টি ছাগল ও ভেড়া। শনিবার (৭ জুন) পশু কোরবানির পর থেকে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে দুই তৃতীয়াংশ। এর মধ্যে গরুর চামড়া সংগ্রহ হলেও ছাগলের চামড়া সংরক্ষণ নেই বললেই চলে। বাকি এক তৃতীয়াংশ চামড়া সংরক্ষণ করতে না পেরে কেউবা মাটিতে পুতে দিয়েছে আবার কেউবা পানিতে ফেলে দিয়েছে। 
ঈদের পরদিন রবিবার (৮ জুন) সকাল ১১টায় জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার রাজার বাজার ব্রিজের উপর থেকে কাকড়ি নদীতে বিপুল পরিমান চামড়া ফেলে দেয় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। 
ভাইরাল ওই ভিডিওতে এক মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ঘুরে চামড়া কিনেছি। সারা দিনেও কেউ চামড়ার মূল্য বিজ্ঞাসা করেনি। পরদিন চামড়াগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়েই পানিতে ফেলে দেই। 
শনিবার রাত ১১টায় জেলার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ এলাকার টনকি গ্রামের একাধিক মৌসুমী ব্যবসায়ী জানান- পাশ^বর্তী বাখরনগর এলাকার আড়তদার একলাস মিয়া সিন্ডিকেট করে রেখেছে। কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কে বাহিরের কোন পাইকার আসে না। আমরা চামড়া কিনেছি সাড়ে ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা দরে। আর একলাস পাইকার গড়ে ২শ টাকার বেশি বলে না।
মৌসুমী ব্যবসায়ী আইয়ূব জানান- সরকার ১ হাজার ১৫০ টাকা চামড়ার দাম নির্ধারণ করায় আমরা সেই হিসেবেই চামড়া কিনেছি। এখন আড়াতদাররা বলেন- ট্যানারী চামড়া নেয় না, তাই আমরাও চামড়ার মূল্য বেশি দিতে পারবো না। 
দেবীদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের বাতাপুকুরিয়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি কাজী হানিফ জানান- এ সমাজের কেউ চামড়া বিক্রি করে না। সব চামড়া মসজিদে দিয়ে দেয়। এ বছর আমরা ১১৪টি চামড়া পেয়েছি। শনিবার বিকেল থেকে কেউ এসে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ আবার কেউবা ৪শ টাকা করে প্রতিটি চামড়ার দাম বলছে। পরবর্তীতে আর কেউ দামও বলেনা। আমরা নিরুপায় হয়ে রাত ১১টায় ২শ টাকা করে চামড়াগুলো বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। 
কুমিল্লায় চামড়ার বড় হাট চান্দিনা ও দাউদকান্দি উপজেলার সীমান্তবর্তী ইলিয়টগঞ্জ বাজার। ওই বাজারের চামড়ার আড়তদার রয়েছে বেশ কয়েকজন। প্রতি বছর এই হাটে অর্ধ লক্ষ চামড়া কেনা হলেও এবার তারা চামড়া সংগ্রহ করেছে মাত্র সাড়ে ৭ হাজার। যে কারণে এর প্রভাব পড়েছে পুরো জেলা জুড়ে। 
ওই হাটের আড়তদার আবু হানিফ জজ জানান- ট্যানারী মালিকদের কারণে অনেক ব্যবসায়ীই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। ইলিয়টগঞ্জ হাটে ১৫-২০জন আড়তদার ছিল। এখন এ সংখ্যা কমে ৫-৬জনে। ট্যানারী মালিকরা পদে পদে আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের ঠকিয়ে আসছে। সরকার প্রতিটি লবনযুক্ত চামড়ার মুল্য ১ হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও ট্যানারী মালিকরা ওই চামড়াগুলো ৪ ভাগে বাছাই করে। গ্রেড-১ এর চামড়ার দাম ১ হাজার ১৫০ টাকা দিলেও বাকি তিনটি গ্রেডের দাম অর্ধেকও হয়না। আবার ট্যানারীগুলো ২-৩ মাসের বকেয়ায় চামড়া নিয়ে ১-২ বছরেও পরিশোধ করে না। এমন সমস্যায় চামড়া শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ সমস্যার সমাধানে সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করা জরুরী। 
চান্দিনার চামড়ার আড়তদার মিলন মিয়া জানান- আমি প্রতি বছর ৮-১০ হাজার চামড়া কিনি। কিন্তু এবছর মাত্র সাড়ে ৩ হাজার কিনেছি। কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন- সরকার প্রতি চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করেছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। এই তথ্যটি আবার বিভিন্ন মসজিদের হুজুররা প্রচার করেছে। কিন্তু কোন চামড়ার দাম ১ হাজার ১৫০ টাকা সেটা তো তারা সঠিকভাবে জানে না। যে কারণে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া কিনে বেকায়দায় পড়েছে। পশুর শরীর থেকে চামড়া আলাদা করার ৬ ঘন্টার মধ্যে লবন দিতে হয়, কিন্তু মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বেশি টাকা পাওয়ার আশায় ৮-১০ ঘন্টা অতিবাহিত করায় প্রচন্ড গরমে অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ী চামড়া কিনে সেগুলো বিক্রি করতে পারেনি। 
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার জানান- পশু লালন-পালন ও কোরবানির বিষয়টি আমাদের জানা থাকলেও চামড়া সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কুমিল্লা চেম্বার কমার্স এ বিষয়টি ভাল বলতে পারবে। তারপরও আমরা যতটুকু জানি অধিকাংশ চামড়াই সংগ্রহ করেছে বিভিন্ন আড়তদার এবং বিভিন্ন মাদ্রাসায়। 
এ বিষয়ে জানতে কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি জামাল আহমেদ জানান- আমাদের চেম্বার অব কমার্সে চামড়া ব্যবসা করে এমন কেউ নেই। যে কারণে সঠিক তথ্য আমাদের নেই। তবে আমাদের জানামতে যে সকল মৌসুমী ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় নির্ধারিত সময়ে চামড়া বিক্রি করেনি তাদের চামড়াই নষ্ট হয়েছে বেশি। 
উল্লেখ্য, এ বছর ঢাকায় লবণ যুক্ত গরুর চামড়া ১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং ঢাকার বাহিরে লবণযুক্ত প্রতিটি গরুর চামড়া ১ হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।














সর্বশেষ সংবাদ
লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক আজ
করোনা সতর্কতারমধ্যেই বন্ধের পথে কুমিল্লার দুই ইসিইউ ইউনিট
আরও ১৫ জনের করোনা শনাক্ত
ছাত্রদল সভাপতিকে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি করার পরামর্শ শিবির সভাপতির
দেবিদ্বার ধামতী রওশন আরা কলেজ কলেজের একাডেমিক স্বীকৃতির দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
চাচা শ্বশুরের ছোড়া গরমপানিতে ঝলসে গেলো গৃহবধূর শরীর
ভারতে বিধ্বস্ত বিমানে ছিলেন গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী
শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ভারতে
ভারতে বিধ্বস্ত বিমানে ১৬৯ জন ভারতীয় ও ৫৩ জন ব্রিটিশ যাত্রী ছিলেন
২৪ ঘন্টার ব্যাবধানে৯ জনের মরদেহ উদ্ধারকুমিল্লায়
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২