বন্যায় ভাসছে দেশ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫২ লাখ মানুষ। পানিবন্দি এসব মানুষের ঘরে খাবার নেই। খাবার রান্না করার মতো পরিস্থিতি নেই।
পানিতে
ভাসলেও পান করার মতো পানি নেই। তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে সারা
দেশের মানুষ। তা সত্ত্বেও বানভাসি এসব মানুষের আহাজারি থামছে না। অনবরত
তাদের চোখের পানি মিশে যাচ্ছে বানের পানিতে।
নিজে অভুক্ত। কোলের শিশুটিও
অভুক্ত। অসহায় মা তাকিয়ে আছেন কখন আসবে একটি মমতার হাত। ক্ষুধার জ্বালা
থেকে মুক্তি পাবে তাঁর নাড়ি কাটা ধন।
বন্যাদুর্গত অনেক এলাকাই দুর্গম
হয়ে উঠেছে। বাড়িঘরের মায়ায় কিংবা সহায়-সম্পদ চুরি হওয়ার ভয়ে অনেকে পানির
মধ্যেই মাচা বানিয়ে আছেন। অনেকে বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। সেসব এলাকার
বানভাসিদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাচ্ছে অনেক কম।
কোনো কোনো এলাকায় আদৌ কোনো ত্রাণসামগ্রীই পৌঁছায়নি।
না সরকারি, না
বেসরকারি। তাঁদের দিন কাটছে অনাহারে। পান করতে হচ্ছে বন্যার পানি। কালের
কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা সদরেই অন্তত
২০০ পরিবার আটকা পড়ে আছে এবং তারা এখনো কোনো ত্রাণ পায়নি। তাদের কাছে কোনো
খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই। মনোহরগঞ্জ উপজেলার গাজিয়াপাড়াসহ আশপাশের
গ্রামগুলোতেও সরকারি বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ত্রাণ
সহায়তা পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেখানে খাবারের কষ্টে
মানুষ হাহাকার করছে। দোকানপাটেও তেমন খাদ্যসামগ্রী নেই। সামান্য কিছু পাওয়া
গেলেও দাম নেওয়া হচ্ছে অনেক বেশি। এদিকে বন্যাকবলিত অনেক এলাকা থেকেই পানি
নামতে শুরু করেছে। সেসব এলাকায় ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়াসহ পেটের
পীড়া, জ্বর, সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ার মতো বিভিন্ন রোগ। মেডিক্যাল টিম কাজ
করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ওষুধেরও অভাব রয়েছে।
প্রধান
উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে মানুষ সাধ্যমতো দান করছে। ব্যাংক, বীমা,
শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই জাতীয় দুর্যোগের সময় আরো
বেশি এগিয়ে আসা প্রয়োজন। ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় যেসব দুর্বলতা রয়েছে
সেগুলো দ্রুত কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগতভাবে সংগৃহীত
ত্রাণসামগ্রীও জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বিতরণ করা
প্রয়োজন। ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশি করে এগিয়ে আসা
প্রয়োজন। আমরা আশা করি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই দুর্যোগ আমরা শিগগিরই
কাটিয়ে উঠতে পারব।