সাবেক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিয়ন জাহাঙ্গীর আলমের দুর্নীতির প্রকাশ্য
অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যিনি ‘পানি জাহাঙ্গীর’
হিসেবে বিভিন্ন মহলে পরিচিত। ক্ষমতায় থাকাকালে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ
হাসিনা নিজেই অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করে গেছে, পিয়ন। সেও
এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না।’
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
আকতারুল
ইসলাম জানান, নোয়াখালীর চাটখিল থানার নাহারখিল গ্রামের রহমত উল্লাহ
কেরানির ছেলে ও বর্তমানে রাজধানীর ধানমন্ডির ১৫ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়ির
৪/এ ফ্ল্যাটের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। শেখ হাসিনা যখন বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন,
তখনও তিনি তার সুধাসদনের বাসায় কাজ করতেন।
তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের
বিরুদ্ধে এতদিন গোপনে দুর্নীতির অনুসন্ধান চালিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির
মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গোপন অনুসন্ধানে
জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের পিতা রহমত উল্লাহ খিলপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের কেরানি
ছিলেন। রহমতউল্লাহ’র পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। ভাইদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম
দ্বিতীয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী মো.
জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন নি¤œবিত্ত পরিবারের সন্তান। জাতীয় সংসদে দৈনিক মজুরি
ভিত্তিতে কাজ করেছেন। জাহাঙ্গীর আলমের গ্রামের লোকজন ও স্থানীয়দের সূত্রে
জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জাহাঙ্গীর আলম
অর্থবিত্তের মালিক হতে শুরু করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারীর
পরিচয় ব্যবহার করে তিনি নিয়োগ বাণিজ্য, বদলিসহ নানা তদবির করতেন। নোয়াখালীর
রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, প্রশাসনে তদবিরসহ
নানা কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের
সহ-সভাপতি।
আরও জানা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি নোয়াখালী-১
(চাটখিল-সোনাইমুড়ী) থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হলফনামায় তিনি তার নিজের নামে প্রায়
২১ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে বলে তথ্য দেন। তার স্ত্রী
কামরুন নাহারের নামে রয়েছে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার সম্পদ। জাহাঙ্গীর নিজের
নামে সাড়ে চার একরের বেশি কৃষি জমি, তিন কোটি ১৯ লাখ টাকার অকৃষি জমি,
মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দুটি দোকান, মিরপুরে ৭ তলা ভবন, গ্রামের বাড়িতে ১
তলা ভবন ও মিরপুরে ২টি ফ্ল্যাট দেখিয়েছেন। যার মূল্য দেখিয়েছেন ৪৪ লাখ ৬৯
হাজার টাকা। চাটখিলে পৈত্রিক ভিটায় করেছেন ৪ তলা বাড়ি। স্ত্রীর নামে
রাজধানীর ধানমন্ডিতে ২৩৬০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন ৭৬ লাখ ১৮ হাজার
৭৫০ টাকা দিয়ে। এটিও দলিল মূল্য। তাদের আরেকটি আট তলা বাড়ি রয়েছে নোয়াখালী
জেলা শহর মাইজদীর হরিনারায়ণপুর এলাকায়। বাড়িটিতে ১৯টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১৮টি
ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তিন তলার একটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করে জাহাঙ্গীরের পরিবার।
অস্থাবর
সম্পদ হিসেবে দেখানো হয়েছে নগদ টাকা ও ব্যাংকে মিলিয়ে ২ কোটি ৫২ লাখ ২
হাজার ৪৩০ টাকা এবং স্ত্রীর নামে আছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৪৬ হাজার ৬০৬ টাকা।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপিএস আছে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এফডিআর আছে ১
কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৮ টাকা। স্ত্রীর ব্যাংকে স্থিতি ২৭ লাখ ৯৭ হাজার
৪৫৫ টাকা ও ডিপিএস ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়া স্ত্রীর নামে একটি গাড়ি
আছে। যার দাম হলফনামায় দেখানো হয়েছে ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অংশীদারী ফার্মে
তার মূলধন আছে ৬ কোটি ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর ব্যবসায় মূলধন আছে ৭৩
লাখ ৩৮ হাজার ৫১০ টাকা। এছাড়া তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, মো. জাহাঙ্গীর
আলম এ কে রিয়েল স্টেট লিমিটেড নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক।