ঐতিহাসিক
কটক বাজার যুদ্ধ দিবস স্মরণে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
হয়। সচেতন রাজনৈতিক ফোরাম কুমিল্লার পক্ষ থেকে বাসদ নেতা কমরেড আবদুর
রাজ্জাকের নেতৃত্বে স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সন্ধ্যা ৭টায়
কান্দিরপাড়স্থ যুব ইউনিয়ন কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের
ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
উক্ত স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ফোরামের
প্রধান সমন্বয়ক ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ড. শাহ্ মোঃ সেলিম। কটক
বাজার যুদ্ধের স্মৃতিকথা ও কুমিল্লার বিভিন্ন রণাঙ্গনের যুদ্ধের স্মৃতি
তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক জেলা কমান্ডার নূরে আলম,
সাবেক ছাত্রনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল
ইসলাম, বীরমুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন আহম্মেদ, নাগরিক ঐক্য নেতা এডভোকেট
শামছুল আলম মোহন, রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ আলী কিছমত, সাংস্কৃতিক সংসদ
কুমিল্লার সভাপতি আবুল কাশেম, কুমিল্লার কাগজ সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয়,
ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মোখলেছুর রহমান, যুবনেতা বিপ্লব মজুমদার, শান্তি ভূষণ সহ
অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সভাপতির ভাষণে ড. শাহ্ মোঃ সেলিম সচেতন রাজনৈতিক
ফোরাম কুমিল্লার পক্ষ থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক ও
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, কুমিল্লার
বিভাগ ঘোষণাসহ সকল দাবী দাওয়া আদায়ে মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ এর চেতনা নিয়ে
সকলকে দেশ গঠন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখতে দলমত নির্বিশেষে
ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের
উষালগ্নে কুমিল্লা কোতয়ালী থানার জগন্নাথপুর ইউনিয়নে গোমতী নদীর তীর ঘেষে
কটক বাজারে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধ
সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের ঐতিহাসিক যুদ্ধ এই কুমিল্লার কটক বাজার
যুদ্ধ। এই যুদ্ধে শত্রু বাহিনীর ১০০ থেকে ১৫০ জন হানাদার সৈন্য নিহত হন।
মুক্তিবাহিনীর ৭ জন বীরযোদ্ধা এ যুদ্ধে শাহাদাৎ বরণ করেন। যাদের মধ্যে
হাবিলদার জুম্মা খান (বীর বিক্রম মরণোত্তর), ল্যান্সনায়েক আবদুল কাদের (বীর
প্রতিক মরণোত্তর) এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র বীর যোদ্ধা ইমতিয়াজ
উদ্দিন এ তিনজন এর মরদেহ যুদ্ধের পর পাওয়া যায়। বাকী ৪ জনের মরদেহ পাওয়া
যায়নি।
এ যুদ্ধে কুমিল্লার বীর যোদ্ধা ক্যাপ্টেন রেজা সহ তৎকালীন ভিপি
শাহআলম, কমান্ডার সিরাজ, সুবেদার মান্নান, শফিউল আহমেদ বাবুল (প্রাক্তন
জেলা কমান্ডার), অসীম সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন। এই সম্মুখ যুদ্ধে তৎকালীন
মেজর খালেদ মোশারফ। ইস্ট বেঙ্গল রেজিম্যান্ট, ইপিআর, আনসার সহ কুমিল্লার
অনেক ছাত্র-জনতা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে
ভিক্টোরিয়া কলেজ এর সাবেক ভিপি নাজমুল হাসান পাখী অন্যতম। এই যুদ্ধে
ভিক্টোরিয়া কলেজ এর ভিপি শাহআলম এর সাহসিকতাপূর্ণ যুদ্ধের অবদান পরবর্তীতে
মুক্তিযোদ্ধাদের আরও অনুপ্রাণিত করে তোলে।
কুমিল্লা শহরের নিকটবর্তী ও
ভারতীয় সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ায় কটক বাজার মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনী উভয়ের
কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিবাহিনীর
ছোট ছোট গ্রুপ পাক বাহিনীর পাঞ্জাব ও বেলুচ রেজিমেন্টে বিভিন্নভাবে আক্রমণ
করে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল। স্বাধীনতার পরবর্তী ২০২০ সালে কুমিল্লার
মুক্তিযোদ্ধাদের ঐকাঙ্খিক ইচ্ছায় প্রশাসনের সহযোগিতায় গোমতীর পাড়ে কটক
বাজারে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ স্মৃতিফলক নির্মাণ করে বর্তমান প্রজন্মকে
তার স্মৃতি ধরে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করে।