২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হলো
বৃহস্পতিবার। পরদিন শুক্রবার রীতি অনুযায়ী সংবাদ সম্মেলন করে অর্থমন্ত্রী
বলেছেন, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার
দেওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সংকোচনমূলক নীতি-কৌশল আরো
কিছুদিন চালু রাখা হবে। এ বছরের শেষ দিকে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করবে,
এমনটিও আশা করছেন তিনি। অবশ্য অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে
নামিয়ে আনার লক্ষ্য চ্যালেঞ্জিং হবে।
কারণ প্রায় দেড় বছর ধরে
মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি রয়েছে। গত মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০
শতাংশের বেশি। সার্বিক মূল্যস্ফীতিও ছিল ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এই বাস্তবতায়
সাড়ে ৩ শতাংশের মতো মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা মোটেও সহজ
হবে না।
দেশের অর্থনীতি এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে আছে। প্রায় সব পণ্য ও
সেবার মূল্য ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা
ধরনের পদক্ষেপও নিয়েছে সরকার। ভর্তুকি প্রদানের পাশাপাশি ন্যায্য মূল্যে
পণ্য বিক্রি বাড়ানো হবে।
অন্যদিকে অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলছেন, বাজেটে
নেওয়া কিছু উদ্যোগ মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দিতে পারে। মূল্যস্ফীতি
নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নি¤œ আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে বাজেটে যেসব পদক্ষেপ
নেওয়া হয়েছে, তা যথেষ্টও নয়। তাঁদের মতে, সামষ্টিক অর্থনীতির সব সূচকে ক্ষত
দেখা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের
ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই। তাঁরা মনে করছেন, এই বাজেট দিয়ে
চলমান সংকট মোকাবেলা সম্ভব নয়।
কারণ সরকারের ব্যয় ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের
পর্যবেক্ষণ বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আয়, মূল্যস্ফীতি, জিডিপি ও বিনিয়োগের
প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে, তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
এখন একদিকে চলছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সেই সঙ্গে আছে রিজার্ভ সংকট। এই
পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এসব
সংকট সমাধানে বাজেটে বিশেষ কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে অর্থনীতিবিদদের
অনেকে মনে করেন। আবার অনেকের মতে, চ্যালেঞ্জিং এই সময়ে যথেষ্ট কৌশলের
সঙ্গেই এবারের বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা করা হয়েছে। তাঁরা মনে করছেন,
প্রস্তাবিত বাজেটটি প্রাথমিকভাবে বাস্তবতার প্রতি অনেকটা সংবেদনশীল। তবে এই
বাজেটে কিছু ক্ষেত্রে আরেকটু কল্যাণমুখী হওয়ার সুযোগ ছিল বলেও মনে করেন
তাঁরা।
এর আগে আমরা দেখেছি, সরকার পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে বাজার
নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি।
নিত্যপণ্যের সরকার নির্ধারিত দর কার্যকর হয়নি। মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজারে
অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কার্যকর হয়নি। কয়েক
বছর ধরেই যে হারে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে, তার তুলনায় সাধারণ মানুষের আয়
বাড়েনি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো কঠিন করে তুলছে।
অর্থনীতিবিদরা
অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন, মূল্যস্ফীতি সরকারের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথার
কারণ হবে। মূল্যস্ফীতি দেশের মানুষের জীবনযাত্রায় বড় প্রভাব ফেলবে।
মূল্যস্ফীতি রাজনৈতিকভাবেও সংবেদনশীল। দীর্ঘ সময়ে অধিক মূল্যস্ফীতি
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজারে পর্যাপ্ত
পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে আরো জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। শিল্পের
উৎপাদনশীলতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে। পণ্যের জোগান ও চাহিদার
মধ্যে ভারসাম্য এনে মনিটরিং জোরদার করলে বাজার সহনীয় পর্যায়ে আসবে। একই
সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাজার ব্যবস্থাপনা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা
বাড়ানো জরুরি বলেও মনে করেন তাঁরা।