সক্ষম ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কর্তব্য হিসেবেই
জীবনে অন্তত একবার পবিত্র হজ পালনের চেষ্টা করেন। ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি থেকে
কেউ কেউ একাধিকবারও হজ পালন করেন। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর লক্ষাধিক
মুসলমান হজ পালন করতে যান। সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এই বিশাল
কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হয়ে আসছে।
কিন্তু সবাই যে এই পবিত্র হজ ব্যবস্থাপনায়
আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছে, তা নয়। অনেকের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অনৈতিকভাবে
লাভবান হওয়ার বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যায়।
প্রতিবছরই হজের সময় হাজিদের
সঙ্গে কিছু হজ এজেন্সির নানা রকম প্রতারণা করার খবর আমরা পত্রপত্রিকায়
দেখতে পাই। হজযাত্রীদের যে ধরনের বাড়িতে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সৌদি আরবে
নেওয়া হয়, সেখানে নিয়ে তা করা হয় না।
রাখা হয় অত্যন্ত নি¤œমানের ঘরে,
গাদাগাদি করে। কাবা শরিফের কাছে কোথাও বাড়ি ভাড়ার কথা বলে তাঁদের রাখা হয়
দূরবর্তী কোনো স্থানে। গাড়ির কথা বললেও সেখানে গাড়ি দেওয়া হয় না। ফলে বয়স্ক
হাজিদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গাইড দেওয়া হয়
না। সে কারণেও অপরিচিত জায়গায় হাজিদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আরো অনেক সুযোগ-সুবিধাই দেওয়া হয় না। নিঃসন্দেহে এগুলো
অপরাধ।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে,
চলতি বছর একজন ২৬০ জন হজযাত্রীর কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা তুলে নিয়ে
আত্মগোপন করেছেন।
রংপুরের একজন ৭৫ জন হজযাত্রীর কাছ থেকে তিন কোটি টাকা
নিজের এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে নিয়েছেন। একইভাবে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ৪৪৮ জন
হজযাত্রীকে নিবন্ধন করে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
প্রতিবছর
বাড়ছে প্রতারণার শিকার হজযাত্রীর সংখ্যা। কিন্তু প্রতারকচক্রের মূল হোতাদের
দৃশ্যমান কোনো শাস্তির আওতায় আনতে পারছে না ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এসব
প্রতারককে পুলিশও খুঁজে পায় না। অথচ এই প্রতারকচক্র নিরীহ মানুষের ধর্মীয়
অনুভূতিকে পুঁজি করে প্রতিবছর হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। খবরে আরো বলা
হয়েছে, গত বছর হজযাত্রায় ৫২৬ জন হজযাত্রী বিড়ম্বনার শিকার হয়েছিলেন। হজ
প্যাকেজের পুরো টাকা জমা দিয়েও তাঁরা হজে যেতে পারছিলেন না। পরে প্রায় ৯
কোটি টাকা অতিরিক্ত দিয়ে হজ প্রশাসনের সহায়তায় সমস্যার সমাধান করতে হয়েছিল
তাঁদের। যে দুটি হজ এজেন্সির মালিক ওই যাত্রীদের টাকা নিয়ে সটকে পড়েছিলেন,
হজ শেষে তার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে নামমাত্র ব্যবস্থা
নেওয়া হলেও অন্য প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা
হয়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতারণাকারী
এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে গেলে অনেক সময় বড় তদবির আসে। তখন
ধর্ম মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে পারে না। আবার এমন অভিযোগও রয়েছে যে ধর্ম
মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। ফলে
প্রতারকচক্রের শাস্তি হয় না।
হজ ব্যবস্থাপনা আর দশটি সাধারণ ব্যবসার মতো
নয়। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে মানুষের ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি, দেশের ভাবমূর্তি,
সর্বোপরি নানা বয়সের হজযাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা। আমরা আশা করি, পবিত্র
হজযাত্রার সব বিষয় নির্বিঘœ করতে সরকার আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।