রাজধানী
ঢাকা শুধু নয়, সারা দেশেই অপরাধীরা সক্রিয়। কথায় কথায় খুনের ঘটনা ঘটছে।
সাইবার অপরাধীরাও তৎপর। নির্বাচনের পর দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে ঘটেছে
সহিংসতার ঘটনা।
নারায়ণগঞ্জে দুর্বৃত্তরা এক যুবককে কুপিয়ে লাশ ফেলে গেছে
বাড়ির কাছে। সিলেটে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে চাচাতো ভাইকে, বগুড়ায় স্বামীর
দায়ের কোপে স্ত্রী এবং ফরিদপুরে এক কৃষককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
গাজীপুরে এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে এসএসসি
পরীক্ষার্থী নীরব হোসেন হত্যার ঘটনায় পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে
র্যাব-১০।
শ্রীনগর পুলিশ আরো চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা
সবাই কিশোর। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় গত শুক্রবার র্যাব-৭-এর অভিযানে
অস্ত্রসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফরিদপুরের সালথায় আধিপত্য বিস্তার
নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
এ সময় ভাঙচুর করা
হয়েছে কয়েকটি বাড়ি ও দোকানপাট। পটুয়াখালীর গলাচিপায় প্রেমের প্রস্তাবে
রাজি না হওয়ায় কিশোরীকে অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক কিশোরের
বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে গলাচিপা থানার পুলিশ।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত আরেক খবরে বলা হয়েছে, পটিয়ায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা
আবারও অস্ত্রের মহড়া দিয়ে অপহরণ শুরু করেছে। তাদের ভয়ে উপজেলার পাহাড়ি
এলাকার লোকজন বর্তমানে আতঙ্কে রয়েছে।
দিনমজুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন
শ্রেণির লোকজনকে পাহাড়ে ধরে নিয়ে পরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করা
হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে নড়াইল সদরের তারাপুরে
একটি পরিবারের তিনটি ঘর ভাঙচুর করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই
সঙ্গে লুটপাট করা হয়েছে আসবাবসহ গরু।
থেমে নেই কিশোর অপরাধীরাও। কিশোর
গ্যাং কালচার এখন সারা দেশেই পরিচিতি পেয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দিন দিন
ভয়ংকর হয়ে ওঠা দলবদ্ধ এই অপরাধীচক্র এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘কিশোর গ্যাং’ এখন বড় ধরনের একটি সামাজিক সমস্যা।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকায় ৫২টি কিশোর গ্যাং রয়েছে। এই তালিকা
মহানগর পুলিশের। স্কুল-কলেজের গ-ি পার হওয়ার আগেই কিশোরদের একটা অংশের
বেপরোয়া আচরণ এখন পাড়া-মহল্লায় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয় তারা। ছিনতাই, মাদক কারবার ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত
থাকার পাশাপাশি এলাকায় রাজনৈতিক দলের আধিপত্য বিস্তার করতেও কাজ করে এই
কিশোর গ্যাং। র্যাব সূত্রে জানা যায়, বেশির ভাগ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার
পেছনে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মদদ রয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের
সদস্যরা এলাকায় নিজের অস্তিত্ব বা প্রভাব জাহিরে বিভিন্ন অপরাধমূলক কা-
ঘটায়।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বলছে, সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের হাতে
খুনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছে, বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং
নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় ‘বড় ভাইয়েরা’। খুনের মতো ঘটনাও তারা ঘটাচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে শুধু ঢাকায় নয়,
সারা দেশে কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ ভয়াবহ আকার নিয়েছে। তাদের অপরাধের ধরনও
পাল্টে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের
ব্যাপারে এখনই গুরুত্ব না দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
তাঁদের মতে, শুধু আইন-শৃখলা রক্ষা বাহিনী দিয়ে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা
যাবে না। গ্যাংগুলোকে যাঁরা ব্যবহার করছেন, তাঁদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।
একই সঙ্গে পারিবারিক ও সামাজিক উদ্যোগ দরকার। রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও এগিয়ে
আসতে হবে।