কুমিল্লার
চান্দিনায় বিদেশে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অন্তত ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের
অভিযোগ উঠেছে একটি সক্রিয় মানবপাচার চক্রের বিরুদ্ধে। এ চক্রের ফাঁদে পড়ে
প্রতারণার শিকার হয়েছেন অন্তত এক ডজন মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে টাকা আদায় হলেও
কাউকে বিদেশে পাঠানো হয়নি উল্টো ভুক্তভোগীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ভুয়া
ভিসা ও কাগজপত্র। এ ঘটনায় একজন ভুক্তভোগী আদালতে মামলা দায়ের করলেও এখনো
দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,
চান্দিনা উপজেলার মিরাখলা গ্রামের ফারুকের পুত্রসহ কয়েকজনকে কম খরচে
বিদেশে পাঠিয়ে মাসিক ১লাখ টাকা বেতনের চাকরির আশ্বাস দেয় মানবপাচার চক্রটি।
পরে ধাপে ধাপে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়।
ভুক্তভোগীদের
ভাষ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে একই উপজেলার বরকরই ইউনিয়নের আড়চাইল ৮
নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লা বাড়ির শফিকুল ইসলাম ও মোমেনা বেগমের একমাত্র পুত্র
লিটন মিয়ার আশ্বাসে টাকা দেন তারা। লিটনের কথায় বিশ্বাস করে কেউ কেউ জমি ও
সহায় সম্পদ বিক্রি করেও টাকা জোগাড় করেন।
ভুক্তভোগী ফারুক বলেন, আমার
কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। চার মাসের মধ্যে ছেলেকে বিদেশে
পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু দুই বছর পেরিয়ে গেলেও বিদেশ যাওয়া তো দূরের কথা,
টাকাও ফেরত পাইনি। উল্টো আমাকে একটি ভুয়া ভিসা দেওয়া হয়েছিল, যা যাচাই করে
বুঝতে পারি জাল।
একইভাবে মিরাখলা গ্রামের নানু মিয়ার পুত্র রাসেল দেন ২
লাখ টাকা, বরকরই আড়চাইল মোল্লাবাড়ির তাহের মিয়ার পুত্র সাহাব উদ্দিন
দেন ৬ লাখ টাকা, শাহজালালের পুত্র ফেরদৌস দেন ৮ লাখ টাকা, হানিফের পুত্র
রবিউল দেন ৪ লাখ টাকা, সিরাজুল ইসলামের পুত্র মহিউদ্দিন দেন ৪ লাখ ১০ হাজার
টাকা, সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ
রয়েছে, চক্রের মূল অভিযুক্ত লিটন মিয়া বর্তমানে পোল্যান্ডে অবস্থান করছেন।
দেশে তার এই ব্যবসায় অবৈধ কাজে সহযোগীতা করছেন কিছু আইনশৃংখাবাহিনীতে কাজ
করে পরিচয়দানকারী ব্যক্তি। তাদের সহযোগীতায় এবং পরামর্শে সে এই কাজ দিনের
পর দিন করে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করে প্রতিকার পাচ্ছেনা। প্রশাসনকে
নানাভাবে ম্যানেজ করে প্রতারণার জাল বিস্তৃত করছে লিটন। সহযোগীরা লিটনের
পরিবার থেকে মাসোয়ারাও নিচ্ছে মাসে মাসে এসব ম্যানেজের নামে।
তার প্রতিবেশী কাশেম মিয়া জানান, প্রতিদিনই কেউ না কেউ টাকা ফেরতের জন্য আমাদের বাড়িতে আসে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও বিব্রত।
ভুক্তভোগী ফারুক আরও জানান, টাকা ফেরত না পেয়ে বাধ্য হয়ে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
এ
বিষয়ে চান্দিনা থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম
বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। টাকা লেনদেনের কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে
আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা পেলে আইনগত
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এদিকে স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত মানবপাচার চক্রের
সদস্যদের গ্রেফতার ও আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধার করে ভুক্তভোগীদের ন্যায্য
বিচার নিশ্চিত করা হোক।
