চুয়াল্লিশ বছর আগে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জানাজায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণে যে দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল, তার স্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজাতেও সেই দৃশ্য দেখার কথা বললেন ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুশতাক হোসেন।
তার ভাষায়, “বাংলাদেশের মানুষ নেতাদেরকে সম্মান করেন। এর আগে জেনারেল জিয়াউর রহমানের জানাজায় প্রচুর মানুষ অংশীদার হয়েছিলেন এবং বেগম খালেদা জিয়ার জানাজাতে আমরা একই চিত্র দেখলাম।”
খালেদা জিয়ার শেষযাত্রা নিয়ে বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া যখন ‘আপসহীন নেত্রী’ হয়ে উঠছিলেন, মুশতাক হোসেন তখন তরুণ ছাত্রনেতা। গত সাড়ে তিন দশকে বাংলাদেশের রাজনীতির অনেক বাঁকবদলের সাক্ষী তিনি।
মুশতাক বলেন, খালেদা জিয়াকে শেষ বিদায় জানাতে যে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হল, সেখানে ‘ধর্মীয় বিবেচনা’ও কাজ করেছে।
“ধর্ম বিশেষজ্ঞরা বলেন, জানাজায় শরিক হয়ে লাখ লাখ লোক যখন তার (খালেদা জিয়ার) জন্য দোয়া করবেন তখন সে সওয়াবের একটা অংশ তিনিও পাবেন।”
সাবেক রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ায় খালেদা জিয়ার ‘বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা’ আছে বলেই এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা তার ‘শেষ বিদায়ে’ অংশ নিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বলেও মনে করেন মুশতাক।
মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন ৪১ বছর; তিন দফায় দশ বছরের বেশি সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
বুধবার তার জানাজায় অংশ নিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে লাখো মানুষের ঢল নামে। দেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা আসেন তাদের নেত্রীকে বিদায় জানাতে।
বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদের সামনে জনসমুদ্রের মধ্যে খালেদা জিয়ার জানাজা হয়। জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভেনিউ ছাড়িয়ে আশপাশের সব সড়ক, অলিগলিতে অজস্র মানুষ তাতে শরিক হোন।
এই মানিক মিয়া অ্যাভেনিউতেই ১৯৮১ সালের ২ জুন খালেদা জিয়ার স্বামী তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জানাজা হয়েছিল। পরে তাকে সমাহিত করা হয় চন্দ্রিমা উদ্যানে, যার বর্তমান নাম জিয়া উদ্যান।
জানাজা শেষে সংসদ ভবনের সামনে থেকে কড়া নিরাপত্তায় পতাকা শোভিত লাশবাহী গাড়িতে করে খালেদা জিয়ার কফিন জিয়া উদ্যানের সামনে নেওয়া হয়। এরপর সেতুর কাছ থেকে কফিন কাঁধে নিয়ে যান সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। কফিনের ঠিক পেছনে ছিলেন তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা। বিকাল সাড়ে ৪টায় তারেক রহমান কবরে নেমে মাকে সমাহিত করেন।
