সদাচারে
অবিচল থাকা ঈমান ও আমলের পরিচায়ক। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন তো
তারাই, যারা আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাসে অবিচল এবং তা থেকে বিচ্যুত হয়
না...এবং এরাই তো প্রকৃত সত্যনিষ্ঠ।’
(সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১৫)
অনাচার-অশান্তি
দূর করে সাম্য-ভ্রাতৃত্ব ও প্রীতিময় সম্পর্ক ইসলামের অন্যতম দর্শন। মহান
আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো...যখন তোমরা একে অপরের শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ
তোমাদের একে অপরের অন্তরে প্রীতি স্থাপন করে দিলেন, ফলে তোমরা আল্লাহর
অনুগ্রহে একে অপরের ভাই হয়ে গেলে...।
(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০২)
কাজেই
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অনুকূল পরিবেশে বিঘ্ন সৃষ্টি করা পবিত্র কোরআনের
শিক্ষার পরিপন্থী—‘তোমরা (কখনো) তাদের মতো হয়ে যেয়ো না, যাদের কাছে আল্লাহর
পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে
পড়েছে এবং (নিজেদের মধ্যে) নানা ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে; এরাই হচ্ছে
সেইসব মানুষ, যাদের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত :
১০৫)
ঈমানের পরিচয় ও প্রকাশ ঘটে সহিষ্ণুতায়। পবিত্র কোরআনের ভাষায়,
‘যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্য ধারণ করে, নামাজ প্রতিষ্ঠা
করে, আমি তাদের যা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা
ভালো দিয়ে মন্দকে দূর করে।’ (সুরা : রা’দ, আয়াত : ২১)
পবিত্র কোরআনের
বিঘোষিত নীতি ও সহিষ্ণুতার নির্দেশনা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা
ধৈর্য-সহিষ্ণুতা অবলম্বন করো এবং সহিষ্ণুতায় পারস্পরিক প্রতিযোগিতা করো;
সহিষ্ণুতার বন্ধনে নিজেদের আবদ্ধ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা
সাফল্য লাভ করতে পারো।
’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ২০০)
কঠিন
মুহূর্তে মূর্খের বেহুদা কর্ম নয়, বরং বিনম্রতার মাধ্যমে ঈমানের প্রকাশ
ঘটে: ‘এবং রহমানের (দয়াময়) বান্দা তো তারাই, যারা বিনয়ের সঙ্গে চলাফেরা করে
এবং যখন অজ্ঞ-মূর্খরা তাদের সম্বোধন করে তখন তারা বলে, সালাম
(শান্তি)...।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬৩)
আবার বলা হলো, ‘(দয়াময়ের
বান্দা) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না, যদি অহেতুক বিষয়ের সামনে গিয়ে পড়ে
তাহলে ভদ্রভাবে তা অতিক্রম করে...।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৭২)
অন্যদিকে
ঈমান, সহিষ্ণুতা ও নৈতিকতা পরস্পর সম্পৃক্ত। এ জন্যই প্রিয় নবী (সা.) তাঁর
উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার উম্মত কখনো বিভ্রান্তির ওপর একমত
হতে পারে না’।
প্রিয় নবী (সা.) সব অন্যায়-অনৈতিকতার বিরুদ্ধে তাঁর
অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, ‘কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া ফিসক বা মহাপাপ এবং
হত্যা করা কুফরি।’ (বুখারি)
সহিষ্ণুতা একটি ঈমানি যোগ্যতা ও মানবিক গুণ।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘ভালো ও মন্দ এক হতে পারে না। সুন্দর ব্যবহার দ্বারা
মন্দ ব্যবহারের জবাব দাও। দেখবে এতে তোমার জানের দুশমন তোমার প্রাণের বন্ধু
হয়ে গেছে।
এ (বিষয়টি) শুধু তাদের (ভাগ্যেই লেখা) থাকে, যারা সহিষ্ণুতা
অবলম্বন করে এবং এই (সব) লোক শুধু তারাই হয়, যারা সৌভাগ্যের অধিকারী।’
(সুরা : হা-মিম সাজদাহ, আয়াত : ৩৪,৩৫)
সহিষ্ণুতার সঙ্গে ক্ষমার সম্পর্ক
সুনিবিড়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করো। সদাচারের আদেশ
করো এবং মূর্খতা অবলম্বনকারীদের সঙ্গে জড়িয়ে পোড়ো না...।’ (সুরা : আরাফ,
আয়াত : ১৯৯, ২০০)
বস্তুত ইসলাম সব সময় উদারতা ও সহজ পন্থায় বিশ্বাসী।
ইবাদত, ইখলাস, দোয়া, দাওয়াতে তাবলিগ, আধ্যাত্মিকতা, মানবসেবা, মুসলিম
ভ্রাতৃত্ব ইত্যাদি চেতনার কারণে ইসলামকে বলা হয় ‘শান্তির ধর্ম’। প্রিয় নবী
(সা.) বলেন, ‘সহজ করো, কঠিন কোরো না; সুসংবাদ জানিয়ে আহবান করো, ভীতি
প্রদর্শন করে তাড়িয়ে দিয়ো না।’ (বুখারি)
কাজেই অনাচার অনৈক্য, বিশৃঙ্খলা
পরিহার করে দেশের সেবা ও স্বার্থ সংরক্ষণ হোক আমাদের সংকল্প। প্রিয় নবী
(সা.) আরো বলেন, ‘আমি নির্দেশ দিচ্ছি দলগত জীবন, নেতার আদেশ শ্রবণ ও
আনুগত্যের...।’ (ভাবানুবাদ : তিরমিজি)
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর-১৭৩০
