নিজস্ব প্রতিবেদক।।
নানা
জল্পনা–কল্পনা, অপেক্ষা ও রাজনৈতিক কৌতূহলের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ত্রয়োদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপি’র
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিন। বুধবার
সকালে কুমিল্লা-৬ (সদর) আসন থেকে বিএনপির এ নেতার পক্ষে সমর্থকরা কুমিল্লা
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়নপত্র
সংগ্রহ করেন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহকে ঘিরে সকাল থেকেই সেখানে দলীয়
নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, যা ধীরে ধীরে রূপ নেয় টানটান
রাজনৈতিক উত্তেজনা ও প্রত্যাশায়। স্লোগান, করতালি আর উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে
ওঠে পুরো পরিবেশ। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত এই নেতার নির্বাচনী মনোনয়ন সংগ্রহকে
কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের মাঝেও দেখা গেছে স্পষ্ট
আনন্দ ও আশাবাদের ঝিলিক। অনেকেই এটিকে কুমিল্লা-৬ আসনের রাজনীতিতে নতুন
গতি ও গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখছেন।
এর আগে এই সংসদীয় আসন থেকে দলীয়
প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা
এবং কুমিল্লা-৬ সদর আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরী। তার
মনোনয়নের পরপরই নতুন করে আলোচনার জন্ম দেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও
সাবেক কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। তিনি স্বতন্ত্র
প্রার্থী হিসেবে একই আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। যদিও শুরু থেকেই
তিনি প্রকাশ্যে দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থনের কথা বলে আসছিলেন। এমনকি
মনোনয়নপত্র সংগ্রহের বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে সাংবাদিকদের ডেকে তিনি জানান,
এটি ছিল একটি 'ভুল বোঝাবুঝি' বা অনিচ্ছাকৃত সিদ্ধান্ত। তবুও রাজনৈতিক
বাস্তবতায় এই ঘটনাই নতুন করে উত্তাপ ছড়ায় মাঠে।
এর মধ্যেই হাজী আমিনুর
রশিদ ইয়াসিন দলীয় প্রার্থী হলে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন
মনিরুল হক সাক্কু। ফলে কুমিল্লা-৬ আসনে সম্ভাব্য ত্রিমুখী লড়াইয়ের ইঙ্গিত
স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাস্তবে হাজী ইয়াসিনকে লড়তে হবে একই প্লাটফর্মে থাকা দুই
প্রভাবশালী রাজনৈতিক চরিত্র মনিরুল হক চৌধুরী ও মনিরুল হক সাক্কুর সঙ্গে।
এই জটিল সমীকরণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
কুমিল্লা-৬
সদর আসনে বিএনপির তিনটি পৃথক গ্রুপ থেকে তিনজন প্রার্থী আলাদাভাবে
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় দলের ভেতরে তৈরি হয়েছে তীব্র দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব।
কার পক্ষে দাঁড়াবেন, কার কথা শুনবেন এই প্রশ্নে বিভ্রান্ত শুধু
নেতাকর্মীরাই নন, সাধারণ ভোটাররাও পড়েছেন চরম ধোঁয়াশায়। মাঠের রাজনীতিতে
সৃষ্টি হয়েছে অদৃশ্য চাপা উত্তেজনা।
অন্যদিকে, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা
হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিনকে ঘিরে রয়েছে আলাদা আবেগ। আন্দোলন-সংগ্রামে
সক্রিয় ভূমিকা রাখা এই নেতা গত ১৭ বছর ধরে নির্যাতিত, নিপীড়িত তৃণমূল
নেতাকর্মীদের আশ্রয় ও ভরসার প্রতীক ছিলেন। দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানো,
গ্রেপ্তার-হামলার ভয় উপেক্ষা করে সংগঠন আগলে রাখা, সব মিলিয়ে দলের ভেতরে
তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। সে কারণেই অনেকের প্রত্যাশা ছিল, দলীয়
মনোনয়ন এবার তার হাতেই উঠবে।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। দলের প্রাথমিক ও
চূড়ান্ত কোনো তালিকাতেই হাজী ইয়াসিনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মূল্যায়ন করা
হয়নি। তবুও প্রত্যাশা আর কর্মীদের আবেগকে সঙ্গী করেই তিনি নির্বাচনী
প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি
মনোনয়ন সংগ্রহ নয়, এটি তৃণমূলের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, প্রত্যাশা আর অবহেলার
প্রতিধ্বনি বলেই মনে করছেন তার অনুসারীরা। কুমিল্লা-৬ আসনে তাই এবারের
নির্বাচন শুধু প্রার্থী নয়, আবেগ, অভিমান আর রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের এক
কঠিন পরীক্ষায় রূপ নিচ্ছে।
হাজী ইয়াছিনের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষে
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সমর্থকরা জানান, দীর্ঘ ১৭ বছর নির্যাতিত
নিপীড়িত নেতাকর্মীদের প্রতীক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে
বঞ্চিত হয়েছেন। তবে আমরা আশা করি দলের কান্ডারী দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে
ফিরছেন। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ২৫ ডিসেম্বর। আশাকরি দলের ভারপ্রাপ্ত
চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রত্যেকটি ত্যাগ তিতিক্ষা বিবেচনা করে কুমিল্লা-৬
সদর আসনের দলীয় প্রার্থী হিসেবে হাজী ইয়াসিনকেই মনোনীত করে নেতাকর্মীদের
প্রত্যাশা পূরণ করবেন।
