দেশ
ও দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করে
ফেলার কথা তুলে ধরে সেটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত
চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার দেশে ফেরার পর পূর্বাচলের সংবর্ধনা
মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদবিরোধী নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের বক্তব্যের
সঙ্গে মিলিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই
কান্ট্রি’।
সমবেত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, “প্রিয়
ভাই-বোনেরা, মার্টিন লুথার কিংৃ নাম শুনেছেন না আপনারা? নাম শুনেছেন তো
আপনারা? মার্টিন লুথার কিং, তার একটি বিখ্যাত ডায়লগ আছে, আই হ্যাভ এ ড্রিম।
“আজ
এই বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আপনাদের সকলের সামনে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাদী দলের একজন সদস্য হিসেবে আপনাদের সামনে আমি বলতে চাই, আই হ্যাভ
এ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি।”
তিনি বলেন,
“আজ এই পরিকল্পনা দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের
মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য যদি সেই প্ল্যান, সেই কার্যক্রম, সেই
পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে হয়।
“প্রিয় ভাই-বোনেরা, এই জনসমুদ্রে যত
মানুষ উপস্থিত আছেন, এই সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শক্তি যত মানুষ উপস্থিত
আছেন, প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমার লাগবে। প্রত্যেকটি, প্রত্যেকটি
মানুষের সহযোগিতা আমাদের লাগবে।”
এরপর তিনি বলেন, “আপনারা যদি আমাদের
পাশে থাকেন, আপনারা যদি আমাদেরকে সহযোগিতা করেন, ইনশাআল্লাহ আমরা ’আই হ্যাভ
এ প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।”
১৫ মিনিটের বক্তৃতা শেষ করে
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে স্বাগত জানিয়ে আবার মাইকের কাছে ফিরে এসে
নিজের পরিকল্পনার কথা আবারও মনে করিয়ে দেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, “মনে
রাখবেন, উই হ্যাভ এ প্ল্যান। উই হ্যাভ এ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অ্যান্ড ফর
দ্য কান্ট্রি। ইনশাআল্লাহ আমরা সেই প্ল্যান বাস্তবায়ন করব।”
২০০৮ সালে কারামুক্ত হয়ে লন্ডনে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক। এরপর প্রায় দেড় যুগ কাটাতে হয় নির্বাসনে।
বৃহস্পতিবার
বেলা ১১টা ৪৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার
শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন তারেক। তার সঙ্গে আছেন স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও
মেয়ে জাইমা রহমান।
বিমানবন্দর থেকে গাড়িবহর নিয়ে তারা রওনা হন পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়কের দিকে, যেখানে তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দিতে সমাবেশ আয়োজন করা হয়।
সেখানে
‘প্রিয় বাংলাদেশ’ সম্বোধনে শুরু করা বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, একাত্তর
সালে এই দেশের মানুষ যেমন স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, ২০২৪ সালে এদেশের ছাত্র
জনতাসহ সর্বস্তরের মানুষ এই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল।
“আজ
বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা তাদের গণতান্ত্রিক
অধিকার ফিরে পেতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ চায়, তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী
ন্যায্য অধিকার পাবে।
তিনি বলেন, “আজ আমাদের সময় এসেছে, সকলে মিলে দেশ
গড়ার। এই দেশে যেমন পাহাড়ের মানুষ আছে, এই দেশে একইভাবে সমতলেরও মানুষ আছে;
এই দেশে মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস
করে।”
সকলের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করে তিনি
বলেন, “যে বাংলাদেশে একজন নারী, একজন পুরুষ, একজন শিশু, যেই হোক না কেন,
নিরাপদে ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে ইনশাআল্লাহ ঘরে আবার ফিরে আসতে পারে।”
তিনি
বলেন, এই দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, চার কোটিরও বেশি তরুণ প্রজন্মের
সদস্য, পাঁচ কোটির মত শিশু, ৪০ লাখের মত প্রতিবন্ধী মানুষ এবং কয়েক কোটি
কৃষক-শ্রমিক রয়েছেন।
“এসব মানুষের একটি প্রত্যাশা আছে এই রাষ্ট্রের
কাছে, এই মানুষগুলোর একটি আকাঙ্ক্ষা আছে এই দেশের কাছে। আজ আমরা সকলে যদি
ঐক্যবদ্ধ হই, আজ আমরা যদি সকলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, তাহলে আমরা এই লক্ষ কোটি
মানুষের সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ করতে পারি ইনশাআল্লাহ।”
শান্তি-শৃঙ্খলা
বজায় রাখায় গুরুত্ব দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “আসুন, আমরা
যে ধর্মের মানুষ হই, আমরা যে শ্রেণীর মানুষ হই, আমরা যে দলেরই রাজনৈতিক
দলের সদস্য হই, অথবা একজন নির্দলীয় ব্যক্তি হই, আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে,
যেকোনো মূল্যে আমরা আমাদের এই দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে; যেকোনো
মূল্যে যে কোনো বিশৃঙ্খলাকে পরিত্যাগ করতে হবে; যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে
নিশ্চিত করতে হবে, যাতে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে।
“শিশু হোক, নারী হোক,
পুরুষ হোক, যে কোনো বয়স, যে কোনা শ্রেণী, যেকোনো পেশা, যে কোনো ধর্মের
মানুষ যেন নিরাপদ থাকে, এই হোক আমাদের চাওয়া।”
তারেক রহমান বলেন,
“একাত্তর সালে আমাদের শহীদরা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এরকম একটি
বাংলাদেশ গঠনের জন্য। বিগত ১৫ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে শত শত, হাজারো
গুম-খুনের শিকার হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়, নীরিহ মানুষও
প্রতিবাদ করতে গিয়ে অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছে, জীবন দিয়েছে।
“২০২৪
সাল মাত্র সেদিনের ঘটনা। আমরা দেখেছি আমাদের তরুণ প্রজন্মের সদস্যরা
কীভাবে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে দেশের এই স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা
করার জন্য।”
আততায়ীর গুলিতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন
হাদির নিহতের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “কয়েক দিন আগে এই বাংলাদেশের
চব্বিশের আন্দোলনের, এক সাহসী প্রজন্মের এক সাহসী সদস্য ওসমান হাদিকে হত্যা
করা হয়েছে। ওসমান হাদি শহীদ হয়েছে।
“প্রিয় ভাই-বোনেরা, ওসমান হাদি
চেয়েছিল, এই দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক, এই দেশের মানুষের
গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক, এই দেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক এবং
অর্থনৈতিক অধিকার ফিরে পাক।”
তিনি বলেন, “আজ চব্বিশের আন্দোলনে যারা
শহীদ হয়েছেন ওসমান হাদিসহ, একাত্তরে যারা শহীদ হয়েছেন, বিগত স্বৈরাচারের
সময় বিভিন্নভাবে খুন-গুমের শিকার হয়েছেন, এই মানুষগুলোর রক্তের ঋণ যদি শোধ
করতে হয়, আসুন আমরা আমাদের সেই প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যেখানে আমরা
সকলে মিলে কাজ করব; যেখানে আমরা সকলে মিলে আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশকে
গড়ে তুলব।”
কোনো দেশের নাম উচ্চারণ না করে তারেক রহমান বলেন, “বিভিন্ন
আধিপত্যবাদ শক্তির গুপ্তচরেরা বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রে এখনও লিপ্ত রয়েছে।
আমাদেরকে ধৈর্যশীল হতে হবে, আমাদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। বিশেষ করে তরুণ
প্রজন্মের যে সদস্যরা আছেন, আপনারাই আগামী দিন দেশকে নেতৃত্ব দিবেন, দেশকে
গড়ে তুলবেন।
“এই দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মের সদস্যদের আজ গ্রহণ করতে হবে,
যেন এই দেশকে আমরা সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারি; শক্ত ভিত্তির উপরে,
গণতান্ত্রিক ভিত্তি, শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির উপরে যেন এই দেশকে আমরা
গড়ে তুলতে পারি।”
মঞ্চে এবং মঞ্চের বাইরে থাকা জাতীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে
জনগণের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়তে চাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যেকোনো
মূল্যে আমাদেরকে এই দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে, যেকোনো উস্কানির
মুখে আমাদের ধীর, শান্ত থাকতে হবে।”
তারেক বলেন, “আসুন, আমরা আল্লাহ
রাব্বুল আলামিনের দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করি, হে রাব্বুল আলামিন, হে
একমাত্র মালিক, হে একমাত্র পরওয়ারদিগার, হে একমাত্র রহমত দানকারী, হে
একমাত্র সাহায্যকারী, আজ আপনি যদি আমাদেরকে রহমত দেন, তাহলে আমরা এই দেশের
মানুষ কঠোর পরিশ্রম করার মাধ্যমে আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে
পারব।
“আজ যদি আল্লাহর রহমত এই দেশ এবং এই দেশের মানুষের পক্ষে থাকে,
আল্লাহর সাহায্য, আল্লাহর দয়া এই দেশের মানুষের উপরে, এই দেশের উপরে থাকে,
ইনশাআল্লাহ, আমরা আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।”
মহানবীর
(সা.) আদর্শে ন্যায়পরায়ণতার আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে
বিএনপি নেতা বলেন, “আজ আসুন, আমরা সকলে মিলে প্রতিজ্ঞা করি, আমরা সকলে মিলে
প্রতিজ্ঞা করি যে, ইনশাআল্লাহ আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যারা
আসবেন, আমরা সকলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লামের যে ন্যায়পরায়ণতা, সেই
ন্যায়পরায়নতার আলোকে আমরা দেশ পরিচালনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”
মায়ের
সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, এখান থেকে আমি আমার মা
দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে যাব। এই একটি মানুষ, যে মানুষটি এই দেশের
মাটি, এই দেশের মানুষকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবেসেছেন। তার সাথে কী
হয়েছে, আপনারা প্রত্যেকটি মানুষ সে সম্পর্কে অবগত আছেন।
“সন্তান হিসেবে আপনাদের কাছে আমি চাইব, আজ আল্লাহর দরবারে আপনারা দোয়া করবেন, যেন আল্লাহ উনাকে তৌফিক দেন, উনি যেন সুস্থ হতে পারেন।”
বক্তৃতার
শেষ প্রান্তে নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি স্লোগান ধরেন, “আসুন প্রিয় ভাই
বোনেরা, সবাই মিলে আজ আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, ‘সবাই মিলে করব কাজ, গড়ব
মোদের বাংলাদেশ’।”
