এ
পৃথিবীর যা কিছু সৃষ্টি, আল্লাহ তা মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করেছেন।
যেহেতু তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে। আল্লাহ বলেন,
‘তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি এ পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের জন্য তৈরি করেছেন।’
(সুরা বাকারা, আয়াত ২৯)।
মুমিনগণই সব সময় আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া করে
থাকে। আমাদের জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে বেষ্টন করে রয়েছে মহান আল্লাহ
রাব্বুল আলামিনের অফুরন্ত নেয়ামত। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা কম লোকই সেই
নেয়ামতগুলো উপলব্ধি করে তাঁর শুকরিয়া আদায় করি। আমরা যদি একটু চিন্তা করে
দেখি তাহলে বুঝতে পারব আমরা আল্লাহর দেওয়া কত নেয়ামতের মধ্যে ডুবে আছি।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলো সুস্থতা। আজ আমি, আপনি সুস্থ জীবনযাপন করছি। চারদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি। কাজকর্ম করছি।
অথচ আমার আপনার বয়সি আজ কত লোকজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে। বিনা চিকিৎসা এবং অর্থের অভাবে মৃত্যুবরণ করছে।
পবিত্র
কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা আমার অনুগ্রহের শোকর আদায় করো তাহলে আমি
অবশ্যই তোমাদের জন্য অনুগ্রহ আরও বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা একে অস্বীকার কর
তাহলে জেনে রাখ, আমার আজাব বড়ই কঠিন।’ (সুরা ইবরাহীম, আয়াত ১৪)। শোকর শুধু
মুখে বলার জন্য নয়, অন্তরে, মুখে ও কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হয়।
প্রকৃত
শোকর হলো মুখে নেয়ামতের প্রশংসা করা ও নেয়ামতের কথা স্বীকার করা এবং
নেয়ামতদাতার প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা এবং তাঁর আনুগত্য করা, তাঁর নির্দেশ
মেনে চলা।
যাদের পিতা-মাতা ঘরে জীবিত আছেন তাও অনেক বড় নেয়ামত। তাদের
সেবা করার মতো বড় সওয়াবের কাজ আর কিছুই হতে পারে না। খেয়াল রাখতে হবে আপনার
আমার মতো কত লোক এ দুনিয়ার বুকে সেজদা দিতে অক্ষম অথচ আপনি আমি নামাজ আদায়
করতে পারছি। মসজিদে গিয়ে জামাতে শরিক হতে পারছি। এটা যে কত বড় নেয়ামত তা
কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি? এই যে আমরা তিন বেলা ভালো খাওয়া খেতে পারছি এটাও
অনেক বড় নেয়ামত অথচ কতজন এক মুঠো খাবারের জন্য দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে
বেড়াচ্ছে। কেউবা রোগে শোকে বিছানায় কাতরাচ্ছে। আমি, আপনি কত সুন্দর করে কথা
বলতে পারছি, এ পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধ উপভোগ করছি অথচ অনেকে অন্ধ, বোবা হয়ে
এ পৃথিবীতে বেঁচে আছেন। একটু কি আমরা চিন্তা করে দেখব না? মহান রাব্বুল
আলামিনের দরবারে শুকরিয়া আদায় করব না? পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই
আল্লাহতায়ালা, যিনি তোমাদের শোনার জন্য কান, দেখার জন্য চোখ, চিন্তা ও
গবেষণার জন্য মন দিয়েছেন কিন্তু তোমাদের খুব অল্পই এসব দানের শোকর আদায়
করো।’ (সুরা আল মোমেনুন, আয়াত ৭৮)।
আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমাদের শাস্তি
দিয়ে আল্লাহতায়ালা কি করবেন? যদি তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করো এবং তাঁর
ওপর ইমান আন।’ (সুরা নিসা, আয়াত ১৪৭)।
‘অতএব তোমরা অনুগ্রহের জন্য আমাকে
স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার কৃতজ্ঞতা আদায় কর এবং কখনো
আমার অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৫২)।
আমাদের মনে রাখতে হবে
আমরা যদি আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করি আল্লাহ আমাদের রিজিক বাড়িয়ে
দেবেন। আমাদের কখনো কঠিন শাস্তি দেবেন না। আল্লাহ বলেন, ‘আমি লোকমানকে
জ্ঞানদান করেছি এবং তাকে বলেছি তুমি আল্লাহতায়ালার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়
করো কেননা যে ব্যক্তি নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে সে তা করে নিজের ভালোর
জন্যই আর যদি কেউ আল্লাহর অকৃতজ্ঞ হয় সে যেন জেনে রাখে আল্লাহতায়ালা
নিঃসন্দেহে কারওই মুখাপেক্ষী নন, তিনি সব প্রশংসার অধিকারী।’ (সুরা লোকমান,
আয়াত ১২)। মনে রাখতে হবে বিলাসবহুল জীবনযাপন নেয়ামতে ভরপুর নয়। বরং
শান্তিতে জীবনযাপন করার মধ্যেই প্রকৃত সুখ।
যদি নেয়ামতের গণনা করতে যান
তাহলে তার কোনো শেষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রশংসা করতে হলে একমাত্র আল্লাহ
রাব্বুল আলামিনের প্রশংসা করুন, যিনি আমাকে আপনাকে সুস্থতার সঙ্গে বাঁচিয়ে
রেখেছেন, উত্তম রিজিক দান করেছেন আর তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের সুযোগ দিয়েছেন।
তাই প্রতিনিয়ত তাঁর আদেশনিষেধ মেনে চলুন। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর
নেয়ামত গণনা কর, তবে তার সংখ্যা নিরূপণ করতে পারবে না।’ (সুরা ইবরাহীম,
আয়াত ৩৪)। লেখক : ইসলামিক গবেষক
