চৌদ্দগ্রাম
প্রতিনিধি: কুয়েতে এক দুর্ঘটনায় শাহজাহান রনি(২৬) নামে এক প্রবাসী যুবকের
মৃত্যু হয়েছে। রনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার কমলপুর গ্রামের তোফায়েল
আহাম্মেদ ও নাছিমা দম্পতির একমাত্র ছেলে। রোববার দুপুরে চৌদ্দগ্রাম পৌর
প্রশাসকের মাধ্যমে পরিবার মৃত্যুর সংবাদটি জানতে পারে। তবে সোমবার পরিবার
অভিযোগ অভিযোগ করেছে, তাদের একমাত্র সন্তান শাহজাহান রনিকে অপর কুয়েত
প্রবাসী মীর হোসেন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
নিহতের স্বজনরা জানায়,
গত দুই বছর তিন মাস আগে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে পাশের বাড়ির মীর হোসেনের
মাধ্যমে কুয়েতে পাড়ি জমান শাজাহান রনি। সেখানে সে মীর হোসেনের দোকানে
মাসিক বেতনে চাকরি করতো। প্রায় সময় মীর হোসেনের সাথে শাহজাহান রনির ঝামেলা
হতো। এ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে মীর হোসেনের পরিবারের সাথে শাহজাহান রনির
পরিবারের সাথে ঝগড়া লেগে থাকতো। গত ৪ ডিসেম্বরের পর রনির সাথে তার পরিবারের
কোনো যোগাযোগ নেই। রোববার প্রশাসনের মাধ্যমে রনির পরিবার তার মৃত্যু
সংবাদটি জানতে পারে। স্থানীয়দেরও অভিযোগ, দীর্ঘ ১৭ দিন রনি নিখোঁজ থাকলেও
মীর হোসেন তার পরিবারকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে আসছিল। মীর হোসেন বলেছিল
রনি কুয়েতের জেলে আছে, কিছুদিনের মধ্যে সে দেশে ফেরত আসবে। কিন্তু রোববার
হঠাৎ করে প্রশাসনের মাধ্যমে পরিবার রনির মৃত্যুর সংবাদ পায়।
নিহত
শাহজাহান রনির বাবা তোফায়েল আহাম্মেদ বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে তাদের
পার্শ্ববর্তী বাড়ীর মীর হোসেনের মাধ্যমে ১২ লক্ষ টাকা খরচ করে তাদের
একমাত্র ছেলে শাহজাহান রনিকে কুয়েতে পাঠাই। কুয়েতের সাবা আল নাসের নামক
শহরে মীর হোসেনের একটি বাকালা দোকানে রনি মাসিক বেতনে চাকুরি করতো। দীর্ঘ
২৭ মাস সে দোকানে চাকুরি করার সময় নানা কারণে মীর হোসেন আমার ছেলে রনির উপর
শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। রনি প্রতিবাদ করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি
দিত।
তিনি আরও বলেন, গত ৩ ডিসেম্বর বুধবার ভোরে রনি তার মা নাছিমা
বেগমকে ফোন করে তার উপরে নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলেন, মা আমাকে মীরু
বাঁচতে দিবে না। আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। প্রতিবাদ করলে নির্যাতনের
মাত্রা বাড়ে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। সেই দিনই হয় তার মায়ের সাথে শেষ
কথা। দুই একদিন ছেলের সাথে পরিবার যোগাযোগ করতে না পেরে কুয়েতে অবস্থানরত
রনির এক বন্ধু রাকিবের সাথে যোগাযোগ করে পরিবার। রাকিব রনির বাসায় গিয়ে
দেখে খাবার টেবিলে খাবার রয়েছে, এলোমেলো কাপড় চোপড় পড়ে আছে কিন্তু রনি নেই।
এরপর থেকে একমাত্র ছেলের সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
রনির বাবা
তোফায়েল আহাম্মেদ অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর মীর হোসেনের
সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে বলেন, তোমার ছেলে জেলহাজতে আছে। কিছুদিনের
মধ্যে দেশে চলে আসবে। এই কথা বলেই মীর হোসেন সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
পরবর্তীতে পরিবার মীর হোসেনের সাথে আবারও মুঠোফোনে তার ছেলের সন্ধানের জন্য
যোগাযোগ করলে মীর হোসেন হুমকি দিয়ে বলে, ছেলের বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করিও
না। তোমার ছেলে আমার ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। বাড়াবাড়ি করলে তোমাদের
সমস্যা হবে।
চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শাহজাহান
রনি নামে কুয়েতের এক প্রবাসীর মৃত্যুজনিত একটি চিঠি কুয়েতের দূতাবাস থেকে
পৌরসভা পৌর প্রশাসক মোঃ নুরুল আমিনের সরকারী ওয়াটসঅ্যাপে আসে। তথ্যটি পৌর
প্রশাসক মোঃ নুরুল আমিন পৌর নির্বাহীর মাধ্যমে শাহজাহান রনির পরিবারকে
জানায়। চিঠিতে শাহজাহান রনির মৃত্যু দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়। এতে আরো
উল্লেখ করা হয়, গত ৪ ডিসেম্বর কুয়েতের জাহরা মতলা গ্রামে দুর্ঘটনায় তাঁর
মৃত্যু হয়েছে। তবে ঠিক কি দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে সে কথা স্পষ্ট উল্লেখ
করা হয়নি।
মৃত্যুর সংবাদটি পরিবারের মধ্যে জানাজানি হলে কান্নার রোল
শুরু হয়। রনির মা নাছিমা বেগম বলেন, আমার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার আগেই তার
মৃত্যুর আশঙ্কা জানিয়েছে। কোন দুর্ঘটনায় আমার ছেলে মারা যায়নি। তাকে মীর
হোসেন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
কুয়েতের
অবস্থানরত অভিযুক্ত মীর হোসেন মুঠো ফোনে বলেন, শাজাহান রনিকে গত আড়াই বছর
আগে আমি কুয়েতে এনে আমার দোকানে চাকরি দেই। গত চার ডিসেম্বর সে আমাকে কিছু
না বলে অন্য কোথাও চলে যায়। রোববার তার পরিবারের মাধ্যমে আমি তাঁর মৃত্যুর
সংবাদটি পাই। আমি রনির উপরে কোন শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করি নাই। আমি
তাকে কোন প্রকার হত্যাও করি নাই। তার পরিবারের অভিযোগটি সত্য নয়। রনির
পরিবার ইচ্ছে করলে দূতাবাসের মাধ্যমে তাঁর ছেলের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে
পারবে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মোঃ
নুরুল আমিন বলেন, রোববার প্রবাসী কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক উপ-সচিব রনির
মৃত্যুজনিত একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। প্রবাসীর পরিবারকে সংবাদটি জানিয়ে দেয়া
হয়েছে। পরিবারের দাবি পরিকল্পিত হত্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ধরনের কোন
অভিযোগ যদি তার পরিবারের থাকে, তাহলে প্রবাসী কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে
জানালে দূতাবাস কুয়েত সরকারকে অবহিত করবে’।
