সঙ্কোচনমূলক
মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে অর্থবছরের শেষ নাগাদ সার্বিক মূল্যস্ফীতি
সাত শতাংশের নিচে নেমে আসবে বলে আশা করছে অন্তর্র্বতী সরকার।
দেশের
সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং বাজেট ব্যয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ
ইউনূসের নেতৃত্বেসোমবার একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
অর্থ
উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে মূল্যস্ফীতি নিয়ে আলোচনা হয় জানিয়ে
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১২ মাসের গড়
হিসাবে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ২০২৩ সালের জুনের পর গত নভেম্বরে
প্রথমবার ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে ২০২৩
সালের মার্চে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ পেরিয়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়। তবে সার্বিক
মূল্যস্ফীতি (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট) গত জুন মাসে ৯ শতাংশের নিচে চলে আসে এবং
নভেম্বরে তা আরোও কমে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,
“আশা করা যায়, সরকারের সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতিএবং কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে জুন’
২০২৬ এ মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।”
বিবিএসের পরিসংখ্যান
বলছে, খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় নভেম্বরে ফের ঊর্ধমুখী হয়েছে মূল্যস্ফীতির
পারদ। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে গত বছরের একই
মাসের তুলনায় ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা অক্টোবরে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ ছিল।
বিবিএসের
সবশেষ তথ্য বলছে, খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি অক্টোবর মাসের ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ
থেকে বেড়ে নভেম্বরে ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। অক্টোবর মাসে খাদ্যবহির্ভূত
খাতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ তা নভেম্বরে খানিকটা কমে ৯
দশমিক ০৮ শতাংশ হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি বাড়ায় খেটে খাওয়া মানুষের পকেটের ওপর চাপ বাড়লেও মজুরি হারের সূচকে কোনো সুখবর নেই।
এদিন প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে বৈঠকে মজুরির বিষয়টিও উঠে আসে।
বিজ্ঞপ্তিতে
বলা হয়, “বিগত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরিপ্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে
পার্থক্য ছিল অনেক বেশি যার ফলে দেশের মানুষের প্রকৃত আয় কমে আসছিল। তবে
চলতি অর্থবছরের সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হারের
মধ্যে পার্থক্য অনেকটাই কমে এসেছে।
সর্বশেষ নভেম্বর ২০২৫ মাসে
মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধি (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট) যথাক্রমে ৮ দশমিক ২৯ ও ৮
দশমিক ০৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড়ে ৯ দশমিক ০২ ও ৭ দশমিক
০৪ শতাংশ ছিল।
“বিগত বছরগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে প্রকৃত আয়ের পরিমাণ অনেক কমলেও বর্তমান অর্থবছরে এ অবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে উত্তরণ সাধিত হবে।”
প্রধান
উপদেষ্টার দপ্তর বলছে, কৃষি খাতে ‘যথাযথ প্রণোদনা ও ব্যবস্থাপনার’ ফলে
বিগত অর্থবছরে বোরো মৌসুমে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে এবং বর্তমান সময়
পর্যন্ত কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটায় আমন ধানেরওভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে।
এর ফলে চলতি অর্থবছরে সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করছে সরকার।
দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন চলকের ভারসাম্যহীনতা ‘ইতোমধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে’ চলে এসেছে বলেও দাবি করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
সেখানে
বলা হয়, ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ
দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার, যা গতবছর অগাস্টে ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলারের
কাছাকাছি। রিজার্ভ ‘ক্রমান্বয়ে আরোও বৃদ্ধি পাবে’ বলে প্রধান উপদেষ্টার
দপ্তর আশা করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে
৫ লক্ষ কর্মীর বৈদেশিক নিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল
৩ লাখ ৯৭ হাজার।
একই সময়ে ১৩ দশমিক ০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
আমদানিতে
আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ৬ দশমিক ১
শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে; গত অর্থবছরের একই সময়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল।
মূলধনী
যন্ত্রপাতির ঋণপত্র খোলার পরিমাণ গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৩২
দশমিক ৮ শতাংশ কমে গিয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ
বৃদ্ধি পেয়েছে।
শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ২০২৪-২৫
অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর ২০২৪ সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১ শতাংশ; যা
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশ হয়েছে।
