বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তি পৃথিবীকে এখন হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। এখন যে কেউ গুগলে সার্চ দিলেই এআই সমাধান খুঁজে বের করে দেবে। করোনাকালীন সময় থেকেই শিশুরা অনলাইনের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে। সে সময়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের হাতে মোবাইল দিতে বাধ্য হয়েছে অনলাইন ক্লাসের জন্য। কিন্তু কথায় আছে, বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ কেড়ে নিয়েছে আবেগ। কথাটি বর্তমান সময়ে এসে শতভাগ সত্য। চারদিকে যখন বিজ্ঞানের জয়জয়কার অবস্থা, ঠিক তখনই আমরা লক্ষ্য করেছি এ প্রজন্মের শিশুরা অনেকেই ডিজিটাল আসক্তিতে ভুগছেন। মনো বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানদের এ আসক্তি থেকে বের করে আনতে পারছেন না। এতে করে শিশুরা ঘর থেকে বাইরে খেলতে বের হতে চায় না, ঠিকমতো ঘুম হয় না, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দুর্বলতা লেগেই থাকে। এতে করে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার অনেক শিশু নিজেদের অজান্তেই অনলাইনে সাইবার হেনস্তা বা বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। এতে করে শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ছে। সম্প্রতি ‘বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশু এবং শিশুদের অনলাইন যৌন শোষণ প্রতিরোধ’বিষয়ক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে অনলাইন (ডিজিটাল) প্ল্যাটফর্মে ২৩ শতাংশ শিশু মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যেফেসবুক সব থেকে অনিরাপদ। গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, অন্তর্ভুক্তিমূলক সুরক্ষার অভাবে শিশুদের অনলাইন যৌন শোষণসহ নানা ঝুঁকি বাড়ছে। অনলাইনে ৮ শতাংশ শিশু আংশিক ঝুঁকিতে এবং ৬৯ শতাংশ শিশু আংশিক নিরাপদ অবস্থায় আছে। এক্ষেত্রে ফেসবুক ব্যবহারে সর্বোচ্চ ৭৭ শতাংশ শিশু ঝুঁকিতে আছে। ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারে ১৫ শতাংশ ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারেও শিশুরা নিরাপদ নয়। গত সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে এ গবেষণা তথ্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবিব। আন্তর্জাতিক সংস্থা টেরে দেস হোমস্ নেদারল্যান্ডস (টিডিএইচ-এনএল) আয়োজিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নুরুল কবির।
অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবিব বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। যে কারণে শহর থেকে গ্রামে ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। একই সঙ্গে অনলাইনে যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের ঝুঁকিও বাড়ছে। যা শিশুদের ওপর সব থেকে বেশি প্রভাব ফেলছে। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় শিশুদের নিরাপদ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও সহজলভ্য বিচার ব্যবস্থায় বিনিয়োগ জরুরি। কোনো একক উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। শিশু সুরক্ষা এবং অনলাইন সুরক্ষা সম্পর্কিত আইন ও নীতিমালায় প্রতিবন্ধী শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রতিবন্ধিতা কর্মসূচি, ডিজিটাল সাক্ষরতা উদ্যোগ এবং শিশু সুরক্ষা কর্মীদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শিশুদের কণ্ঠস্বরকে প্রশস্ত করতে, কলঙ্ককে চ্যালেঞ্জ করতে এবং নীতি ও সম্প্রদায় স্তরে পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এখনো শিশুদের জন্য অনুকূল নয়। শিশুরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এতে করে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান ফাঁদে আটকা পড়ে যাচ্ছে। তাই শিশুদের নিরাপদ ও সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য কমিউনিটি উদ্যোগ বাড়াতে হবে। সুষ্ঠু সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে শিশু, তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সরকার এবং সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে একটি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে এটাই প্রত্যাশা।
