পেঁয়াজসহ দেশের নিত্যপণ্যের বাজার এখন সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার পদক্ষেপ নিলেও খুব একটা কাজে আসছে না। এরই মধ্যে ভোজ্য তেলের দাম লিটারে ছয় টাকা বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছে সরকার। এতে ভোক্তার ওপর আরও চাপ বাড়বে। নদী, বিলের মাছ ও শীতের সবজির ভরা মৌসুমে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি কমার কথা। কিন্তু গত রবিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিবিএসের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের নভেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা অক্টোবরে ছিল ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি বাড়ার পেছনে খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে বিবিএস। খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। এর ওপর সংঘবদ্ধ চক্র সিন্ডিকেট করে দেশের বাজারে বিভিন্ন সময়ে পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর কারণে ভোক্তাকে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। দেশে মুড়িকাটা পেঁয়াজ এখন বাজারে। তার পরও হুহু করে বাড়ছে দাম। গত কয়েকদিনে পেঁয়াজের দাম এক লাফে কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকায় উঠে গেছে। ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা। বিক্রেতারা বলছেন, সিন্ডিকেট করে মোকাম থেকে বাড়ানো হচ্ছে দাম। কারণ এখনো ফড়িয়াদের ঘরে পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। আড়তদাররা বলছেন, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে দাম কমে যাবে। লাগাম টানতে বাধ্য হয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আবেদনকারীদের পর্যায়ক্রমে দেড় হাজার টন করে আমদানির সুযোগ দেওয়া হবে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সূত্র বলছে, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৫ লাখ টনের মতো। রোজায় চাহিদা বাড়ে। সেই এক মাসেই লাগে প্রায় ৫ লাখ টন। কয়েক বছর ধরে গড়ে কমবেশি ৩৭ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ জটিলতায় ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। তার পরও ৬ লাখ টনের মতো আমদানি করা হয়। কাজেই দেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি থাকে না। এরপরও হালি পেঁয়াজের শেষ সময়ে দাম বেড়ে যায়। বাজারে পেঁয়াজ না ছাড়ায় অস্থির হয়েছে দেশের বাজার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি না থাকায় মৌসুমি ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা এখন বেপরোয়া। এদিকে আমদানির খবরে রাতারাতি পণ্যটির দাম কমতে শুরু করে। এর আগেও গত মাসের মাঝামাঝি একই কাণ্ড ঘটেছিল পাইকারি বাজারে। গত ৯ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন জানান, পেঁয়াজের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে না এলে আমদানি অনুমতি ইস্যু করা হবে। এরপর কমতে থাকে পণ্যটির দাম। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ওঠে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। এরপর ৪০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় দাঁড়ায়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, এখনো আমদানিই হয়নি। তার আগেই পেঁয়াজের দাম কমে গেল। বিষয়টি হাস্যকর। এখানে ব্যবসায়ীদের কারসাজি প্রমাণিত। ব্যবসায়ীরা নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে ঢুকতে বাধার সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ পেঁয়াজটা বাজারে সয়লাব হলে সাধারণ মানুষ আরও ৫০ টাকা কমে পেঁয়াজ কিনতে পারতেন।
পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্য নিয়ে সংঘবদ্ধ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র এ দেশের ভোক্তার কাছ থেকে অধিক মুনাফা লুটে নিচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। সংঘবদ্ধ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আশা করছি, সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।
