শনিবার ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ওসমান হাদির মাথায় গুলি
প্রকাশ: শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:৪৯ এএম |


ওসমান হাদির মাথায় গুলিনির্বাচনী প্রচারণার সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ঢাকা-৮ আসন থেকে ইনকিলাব মঞ্চের সংসদ সদস্য প্রার্থী ওসমান হাদি। ১২ ডিসেম্বর বাদ জুমা রাজধানীর পল্টন ও ফকিরেরপুল এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগ চালানোর সময় অন্যদিক থেকে আসা একটি দল মোটরসাইকেলে করে এসে ওসমান হাদিকে গুলি করে চলে যায়। সেখান থেকে তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র বলছে- সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার জুমার নামাজের পরে তুলনামূলক ফাঁকা রাস্তায় একটা-দুইটা গাড়ি চলছে। হঠাৎ গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন আশপাশের লোকজন। এ সময় ভেসে আসে ‘বাঁচাও’, ‘বাঁচাও’ বলে একজনের চিৎকার। ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে চিৎকার করছিলেন তিনি। তাঁর রিকশাটি থামানো হলে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির মাথা ও কান থেকে রক্ত গড়িয়ে রাস্তায় পড়ছে। বেলা ২টা ২৪ মিনিটে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তি ছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি। তাঁর মাথায় গুলি লেগেছে। গুরুতর অবস্থায় হাদিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ওসমান হাদি গত বছর গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নানা কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচনায় আসেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। করছিলেন গণসংযোগও।
দুপুরে চলন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসে থাকা অবস্থায় হাদিকে যখন গুলি করা হয়, সে সময় ওই রাস্তার পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়েছিলেন সাজ্জাদ খান নামের এক ব্যক্তি। তাঁর সামনেই ওসমান হাদিকে যেভাবে গুলি করা হয়েছে, সেই ঘটনার বর্ণনা প্রথম আলোর কাছে তুলে ধরেছেন তিনি।
সাজ্জাদ খান জানান, তিনি ঘটনাস্থলের পাশের একটি ভবনে চাকরি করেন। পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে বাইতুস সালাহ জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে বেরিয়ে তিনি মসজিদের উল্টো দিকের ‘ডক্টর টাওয়ার’ নামের একটি বহুতল ভবনের সামনের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় তাঁর পরিচিত ও অপরিচিত অনেকেই ফুটপাতে ছিলেন।
সাজ্জাদ খান বলেন, ওসমান হাদি ফকিরাপুলের দিক থেকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়ে পশ্চিম দিকে বিজয়নগরে যাচ্ছিলেন। রিকশায় তাঁর পাশের আসনে আরেকজন ছিলেন। একটি মোটরসাইকেলে দুই ব্যক্তি ওই অটোরিকশার পিছু নিয়ে তাঁদের অনুসরণ করছিলেন। মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ব্যক্তির গায়ে কালো একটি চাদর ছিল। ওই চাদর দিয়ে তাঁর হাত দুটি ঢাকা ছিল। তাঁদের মোটরসাইকেল অটোরিকশার বরাবর এলে পেছনে বসা ওই ব্যক্তি একটি আগ্নেয়াস্ত্র বের করে খুব কাছ থেকে চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। মুহূর্তের মধ্যে এ ঘটনা ঘটিয়ে তাঁরা মোটরসাইকেলে করে বিজয়নগরের দিকে চলে যান।
গুলির শব্দে রাস্তায় থাকা লোকজন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান উল্লেখ করে সাজ্জাদ খান বলেন, এ সময় সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন হাদি ‘বাঁচাও’, ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার করেন। এ পর্যায়ে রিকশাটি থামানো হলে সবাই এসে ভিড় করেন। এ সময় হাদির মাথা ও কান থেকে রক্ত গড়িয়ে রাস্তায় পড়ছিল। রিকশায় তাঁর পাশে থাকা লোকটি হাদিকে ধরে রাখেন। এরপর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার পর পুলিশ, র‌্যাব, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় সেনাবাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ডক্টর (ডিআর) টাওয়ারে স্থাপিত সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে হামলাকারীদের শনাক্তের কাজ শুরু করেন।
ওই ফুটেজে দেখা যায়, একটি মোটরসাইকেলের দুই আরোহী পেছন থেকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশাকে অনুসরণ করছেন। রিকশায় দুজন যাত্রী ছিলেন। আর মোটরসাইকেলে ছিলেন দুই ব্যক্তি। তাঁদের দুজনেরই হেলমেট পরা ছিল। মোটরসাইকেল চালানো ব্যক্তিটির পরনে ছিল জিনসের প্যান্ট এবং পেছনের আসনে বসা ব্যক্তির গায়ে চাদর ছিল। একপর্যায়ে মোটরসাইকেলটি অটোরিকশার কাছে পৌঁছানোর পর পেছনে বসা ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্র বের করে গুলি চালান।
বিকেলে বক্স কালভার্ট রোডে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংবাদিক ও উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা যায়। ঘটনাস্থলের রাস্তায় ছোপ ছাপ রক্তের দাগ। সিআইডির অপরাধ শনাক্তকরণ দল হলুদ ফিতা দিয়ে ঘটনাস্থলটি ঘিরে রেখেছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছেন। পাশেই অবস্থান নিয়েছে সেনাবাহিনী।
সিআইডির অপরাধ শনাক্তকরণ দলের পরিদর্শক আবদুর রশীদ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থলের তিন জায়গা থেকে রক্তের আলামত সংগ্রহ করেছেন। এখানকার আলামত যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য ঘটনাস্থলটি হলুদ ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার হোসাইন মোহাম্মদ ফারাবী প্রথম আলোকে বলেন, ডক্টর টাওয়ারসহ একাধিক ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। কারা কেন ওসমান হাদিকে গুলি করেছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।













http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
ওসমান হাদির মাথায় গুলি
হাদিকে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে
দুর্বৃত্তরা আগে থেকেই অনুসরণ করছিল হাদিকে, প্রচারণায়ও যুক্ত ছিল
গুলি এক পাশ দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে যায় অন্য দিক দিয়ে
হাদির ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে কুমিল্লায় বিক্ষোভ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বিজয় দিবসের টোকেন মানি নিচ্ছে সদর দক্ষিণ উপজেলা প্রশাসন
তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে কুমিল্লায় অভিনন্দন মিছিল
সংসদ নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি
হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ধরতে পুলিশের অনীহা!
চৌদ্দগ্রামে খালেদা জিয়ার সুস্থতাকামনায় জাতীয় পাটির দোয়া মিলাদ অনুষ্ঠিত
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২