
বাংলাদেশে সামনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদ্ভাবনের ফলে সারা পৃথিবীতে নির্বাচনি প্রচারণার চিত্র এখন পাল্টে গেছে। আধুনিক নির্বাচনি কৌশলের একেবারে কেন্দ্রে চলে এসেছে এআই। এর মাধ্যমে খুব সহজেই জনমতকে প্রভাবিত করা যায় এবং গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের বিশ্বাস নষ্ট করা যায়। আমরা সম্প্রতি লক্ষ্য করেছি, এআই ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভুয়া ভিডিও, অডিও, সংবাদ শিরোনাম ও বিভ্রান্তিকর ছবি; যা অনেক সময় রাজনৈতিক, সামাজিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। যদিও নির্বাচনি আচরণবিধিতে এআই ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তার পরও এআইয়ের ব্যবহার হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচনের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর কন্টেন্ট ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এটি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে। ভুয়া খবর ও ভিডিওগুলো এতটাই নিখুঁত যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে আসল-নকল বোঝা কঠিন। নির্বাচনের আগে এ প্রবণতা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক, অবিশ্বাস এবং সন্দেহের সৃষ্টি করবে। যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিশিষ্ট সাংবাদিক রোয়ান ফিলিপ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ২০২৫ ও ২০২৬ সালে যেসব দেশে নির্বাচন হচ্ছে বা হবে সেসব দেশে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে ভুল তথ্যের কারণে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশে নির্বাচনের আগে ও পরে এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশের রাজনীতিতে ভোটের মাঠে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত থাকে। তখন সামান্য একটি ভুল তথ্য বড় উত্তেজনা তৈরি করতে পারে। এআই জেনারেটেড কনটেন্ট সেই উত্তেজনাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এআই দিয়ে ‘ডিপ ফেক’ অর্থাৎ এমন বাস্তবসম্মত ছবি, ভিডিও বা কণ্ঠস্বর তৈরি করা যায়, যা আসল কনটেন্ট থেকে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও তথ্যপ্রযুক্তির গবেষক ড. সাইফুল হক বলেন, আমাদের দেশের মানুষ তথ্যপ্রযুক্তিতে এখনো তেমন সচেতন হতে পারেনি। প্রতি মিনিটে কোটির ওপরে এআই ব্যবহার করে ভুল নিউজ বা বিভ্রান্তিকর উসকানিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। মাঝে মাঝে সাংবাদিকদেরও বুঝে উঠতে কষ্ট হচ্ছে কোনটা আসল কোনটা নকল। ছবি, ভিডিও, ফটোকার্ডের মাধ্যমে গুজব বা বিভ্রান্তিকর তথ্য বেশি ছড়ানো হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ভাইবারের মতো প্ল্যাটফর্মেও ভুল তথ্য নিয়মিত ছড়াচ্ছে।
নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার উদ্বেগের কারণে সরকার এআই ব্যবহারে কঠোর নজরদারি বাড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সাইবার সুরক্ষাব্যবস্থা ও বিধিনিষেধের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কৌশলগত ব্যবহার, নেতিবাচক চ্যালেঞ্জ এবং এটি কীভাবে দায়িত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করা যায়, সেদিকে নজর দেওয়া দরকার। নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আমরা আশাবাদী, সরকার অচিরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে যেকোনো ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার ঠেকাতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।
