সচিবালয় ভাতা চালুর দাবিতে আন্দোলন থেকে গ্রেফতার হওয়া ১৪ আসামিকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
শুক্রবার
(১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকার
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জামসেদ আলম রিমান্ডের আদেশ দেন।
পাশাপাশি কয়েকজন অসুস্থ থাকায় তাদেরকে রিমান্ডের আগে চিকিৎসা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রিমান্ডে
যাওয়া আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের
সভাপতি বদিউল কবির, সহসভাপতি মোহাম্মদ শাহীন গোলাম রাব্বানী ও নজরুল
ইসলাম, প্রচার সম্পাদক মিজানুর রহমান সুমন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রোমান গাজী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস
সহায়ক আবু বেলাল, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক কামাল হোসেন ও
আলিমুজ্জামান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তায়েফুল ইসলাম,
ইসলামুল হক ও মহসিন আলী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক বিপুল রানা বিপ্লব,
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র রায়, মন্ত্রী
পরিষদ বিভাগের অফিস সহায়ক নাসিরুল হক নাসি। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই
জিন্নাত আলী রিমান্ডের তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেফতারের পর মামলার তদন্ত
কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কেএম রেজাউল করিম আসামিদের
আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
শুনানিতে
তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে বলেন, গতকাল তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে অর্থ
উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করে আসামিরা। তারা বাংলাদেশ সরকার এবং সচিবালয়ের
ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেছে। তাদের সঙ্গে কাদের সংযোগ আছে এটা বের
করতে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। আসামিরা পলাতক আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগ হয়ে
আন্দোলন করেছে কি-না রিমান্ডে নিলে জানা যাবে।
আবেদনে বলা হয়, সচিবালয়
এলাকা যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, সেহেতু ওই এলাকায় ডিএমপি কমিশনার
সকল প্রকার সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ১৪৪ ধারা জারি করে। গ্রেফতার ও
পলাতক আসামিরা ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা অমান্য করে ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ
করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, আসামিরা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ
নির্বাচন বানচাল করার লক্ষ্যে পলাতক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে
পরস্পর যোগসাজশ করে অন্তর্র্বতী সরকার ও বাংলাদেশ সচিবালয়কে অকার্যকর করার
লক্ষ্যে তারা আইন বহির্ভূতভাবে বাংলাদেশ সচিবালয়ের অভ্যন্তরে সমবেত হয় বলে
প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয়। আসামিরা এ ঘটনা ঘটানো এবং এ ঘটনার কারণে
বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে আসামিদের
মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সরাসরি সম্পৃক্ততার সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া
যাচ্ছে। তাদের সঠিক নাম ঠিকানা সংগ্রহের লক্ষ্যে, ঘটনার নেপথ্যে জড়িত পলাতক
আসামিদেরকে সনাক্ত করে গ্রেফতার ও মামলার মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে
আসামিদের ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা ও পুলিশ হেফাজতে
রেখে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সাত দিনের রিমান্ড একান্ত প্রয়োজন।
আসামিদের
পক্ষে অ্যাডভোকেট ফারজানা ইয়াসমিন রাখী অ্যাডভোকেট কেএম আশরাফ রাব্বিসহ
কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত
প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয়।
শুনানিতে আসামিদের পৃথক
আইনজীবীরা বলেন, প্রথম দুই আসামিকে গ্রেফতার করায় অন্যরা তাদেরকে থানায়
দেখতে যান। তাদের মধ্যে কেউ খাবার নিয়ে গেছেন। পরে তাদের ১২ জনকেও এভাবে
দেখতে গেলে গ্রেফতার করে রাখে।
উল্লেখ্য, সচিবালয়ে কর্মরত সবার জন্য ২০
শতাংশ ‘সচিবালয় ভাতার’ দাবিতে বুধবার আন্দোলনে নামেন সব মন্ত্রণালয় ও
বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
