
বর্তমানে দেশের অর্থনীতি বিভিন্ন
চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে পুরো অর্থনীতিতে।
শিল্পে বিনিয়োগে গতি নেই। বিনিয়োগ না হওয়ায় নিয়মিত রাজস্ব পরিশোধে ব্যর্থ
হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না।
এমনিতেই মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। তার ওপর
কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় বেকারের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্স বাড়ানো, বিনিয়োগে ধীরগতির মতো কঠিন সমস্যা চলছে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে টানাপোড়েনও থেমে নেই। যুক্তরাষ্ট্রের
বাড়তি শুল্ক আরোপের কারণে তৈরি পোশাকশিল্প ইতোমধ্যে বিপাকে পড়েছে। এর মধ্যে
বন্দরে বাড়তি শুল্ক আরোপ, শ্রম আইন সংশোধনও ব্যবসার স্থিতিশীলতা নষ্ট
করছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পণ্য
পরিবহনেও অনিশ্চয়তা বাড়ছে। দেশের শিল্পোৎপাদন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য চাপে
রয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে রাজনৈতিক
স্থিতিশীলতা। দেশের ব্যবসায়ীরা অর্থনীতিতে গতি আনতে গ্রহণযোগ্য জাতীয়
নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তাকে অপরিহার্য মনে করেন। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের
মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার এলে দীর্ঘমেয়াদি নীতি গ্রহণ করতে পারবে। এতে
বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে অর্থনীতির
গতিপ্রকৃতি নির্ভরশীল। রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতি ব্যাপকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আর্থিক খাতের
স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত না হলে বিনিয়োগ টেকসই
হয় না।
তথ্য মতে, শিল্পায়নের অভাবে চাকরি হারিয়েছে ১৪ লাখ মানুষ। তারা
কবে কাজ পাবে তা অনিশ্চিত। প্রতি বছর ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে চাকরিতে আসে। ১
লাখ ২০ হাজার লোক সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পান। ৮ লাখ বিদেশে ও
১০ লাখ বেসরকারি খাতে চাকরি পান। বাকিরা বেকার থাকেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টি
করতে হলে বেসরকারি খাতে গতি আনতে হবে। সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে অবাধ,
সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার
প্রতিষ্ঠার দাবি ব্যবসায়ীদের। দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের অন্যতম
পূর্ব শর্ত হলো দেশের আইনশৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা। পাশাপাশি, ব্যবসা-বাণিজ্যের
জন্য অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ,
আধুনিক লজিস্টিক অবকাঠামো এবং উন্নত করব্যবস্থা অপরিহার্য। বিনিয়োগের
সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে।
যদিও সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।
এফবিসিসিআইয়ের
সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের বিপুল
সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ এসব
খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বেশি। অথচ আশানুরূপ বিনিয়োগ হচ্ছে না। এ
পরিস্থিতির সমাধান দরকার। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য ও শুল্কহার কমাতে হবে।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার এলে দীর্ঘমেয়াদি নীতি
গ্রহণ করতে পারবে। এতে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
দেশে একটি
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই পারে অর্থনীতিতে গতি আনতে। অর্থনীতির বিশ্লেষক ও
ব্যবসায়ীরা তাদের মতামতে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে একটি
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। আসন্ন নির্বাচন যদি স্পষ্ট
রাজনৈতিক গতিপথ নিশ্চিত করে এবং নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসে
ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক খাতে সংস্কারগুলো চলমান রাখে তাহলে দেশের
প্রবৃদ্ধির হার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে দেশে অর্থনীতির গতি সঞ্চারিত
হবে।
