নিজস্ব
প্রতিবেদক: বিজয় মেলার নামে কুমিল্লায় শুরু হওয়া বাণিজ্য মেলাকে ঘিরে
তীব্র ক্ষোভ ও বিতর্ক ছড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের গৌরবকে সামনে রেখে
মেলা আয়োজিত হওয়ার কথা থাকলেও পুরো আয়োজনটি পরিণত হয়েছে অর্থ লুটপাট ও স্টল
বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে-এমন অভিযোগ তুলেছেন বিক্ষুব্ধ জুলাই যোদ্ধা,
স্থানীয় উদ্যোক্তা ও অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীরা।
বিষয়টি নিয়ে সোমবার
কুমিল্লা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন জুলাই যুদ্ধারা। তাদের অভিযোগ
প্রশাসনের নির্ধারিত ৪ হাজার টাকার স্টল বিক্রি হয়েছে ২০-৩০ হাজার টাকায়।
হামিনা কবির মেধা ওরফে আকৃতি চৌধুরী নামে এক নারী ও বিল্লাল নামে এক পুরুষ
একাই ১০০টির বেশি স্টল বরাদ্দ নিয়ে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছেন। জুলাই
যোদ্ধারা বলছেন, বিজয়ের গৌরব ঢেকে ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। তারা
জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ তুলে ধরে অনিয়ম তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগ
রয়েছে, ঐতিহ্যবাহী বিজয় মেলাকে উদযাপন কমিটি টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর
করেছে কয়েকটি ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার
মেলাটি রং বদলে নিয়েছে বাণিজ্যিক মেলায়, আর সেই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এক
শ্রেণির অসাধু চক্র।
এদিকে বেশ কয়েকজন জুলাই যুদ্ধা ও রাজনীতিবিদের
দাবি, মেলার আড়ালে চলছে এক প্রকার অর্থের বাণিজ্য এবং ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসন।
তারা অভিযোগ করেন ফ্যাসিবাদের শাসনামলে কর্তৃত্ববাদী ভূমিকা পালনকারীদের
একটি দলই এবার স্টল বণ্টনের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছে।
কুমিল্লা টাউনহল মাঠে অনুষ্ঠিত এ মেলায় স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তাদের
গুরুতরভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। জেলার বাইরে থেকে আনা ব্যবসায়ীদের নামে
বরাদ্দ হয়েছে বেশিরভাগ স্টল।
সবচেয়ে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে স্টল
বাণিজ্যকে ঘিরে। জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত প্রতিটি স্টলের ফি ৪ হাজার টাকা
হলেও কিছু ব্যক্তির মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছে তা বিক্রি করা হয়েছে ২০ থেকে
৩০ হাজার টাকায়।
অভিযোগ করে কুমিল্লা মহানগর এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়ক
ফারহা এমদাদ ইম্পা বলেন, হামিনা কবির মেধা ওরফে আকৃতি চৌধুরী নামের একজন
নারী, যিনি ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত কুমিল্লায়। ওই নারী একাই বরাদ্দ
নিয়েছেন ৩০টিরও বেশি স্টল। পরে তার সহযোগী ময়নামতি এলাকার মেলা ব্যবসায়ী
বিল্লালের সাথে মিলে এসব স্টল বহু গুণ বাড়িয়ে বিক্রি করেন। ৪ হাজার টাকার
স্টল ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
একাধিক দোকানদার জানিয়েছেন। এই বাড়তি স্টল ভাড়ার কারণে তারা বিপুল ক্ষতির
মুখে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন সরাসরি বরাদ্দ না দিয়ে আড়ালে থেকে কিছু
ব্যক্তিকে এই বাণিজ্য করার সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে স্টল নিতে গিয়ে তাদের
হয়রানি ও অর্থবাণিজ্যের শিকার হতে হয়েছে।
কুমিল্লা মহানগর এনসিপির যুগ্ম
সমন্বয়ক ফারহা এমদাদ ইম্পা আরও বলেন, বিজয় মেলার মূল উদ্দেশ্যই নষ্ট করে
দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর ইতিহাসের জায়গাটিকে ব্যবহার করা হয়েছে
অর্থ লুটের মাঠ হিসেবে। তিনি জেলা প্রশাসনের দ্রুত তদন্ত ও ব্যবস্থা
নেওয়ার দাবি জানান।
আরেক জুলাই যোদ্ধা মো. ইয়াছিন হোসেন বলেন, বিজয়
মেলার নামে বাণিজ্য মেলায় ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা
শুরু থেকেই এর প্রতিবাদ করে আসছি। সোমবার জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করে
বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছি। জেলা প্রশাসক আশ্বাস দিয়েছেন মেলায় কী ধরনের
অনিয়ম হয়েছে তা খতিয়ে দেখবেন।
৯ দিনব্যাপী এ মেলা সোমবার (৮ ডিসেম্বর)
কুমিল্লা মুক্ত দিবসে উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. রেজা হাসান। কিন্তু
উদ্বোধনের দিন থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। লুটপাট,
অনিয়ম ও স্টল বাণিজ্যের অভিযোগে বিজয় মেলা এবার রূপ নিয়েছে বিতর্কের
কেন্দ্রে, আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রকৃত উদ্যোক্তা, বঞ্চিত হয়েছেন স্থানীয়
তরুণরা, ক্ষুব্ধ সাধারণ ব্যবসায়ীরাও।
বিজয় মেলায় নানা অনিয়মের অভিযোগের
বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. রেজা হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা
করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
