
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের (উত্তর ও দক্ষিণ) বর্তমান প্রশাসন চলছে ঢিমেতালে। প্রতিষ্ঠান দুটি এখন জনবল সংকটে ভুগছে। চোখে পড়ার মতো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতেও দেখা যাচ্ছে না কর্তৃপক্ষকে। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত এবং প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ জটিলতা ও দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় ভোগান্তির শেষ নেই নগরবাসীর। ওয়ার্ড পর্যায়ে যে প্রশাসনিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা সেবা ব্যবস্থাকেও অকার্যকর করে তুলেছে। প্রভাব পড়েছে নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা খাতে। মশক নিধন কার্যক্রম নিয়মিত না হওয়ায় এবং মাঠপর্যায়ে কেউ তদারকি না করায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। বিভিন্ন এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি অসম্পূর্ণ থাকায় রাজধানীতে স্বাভাবিক চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কোথাও গর্ত, কোথাও জলাবদ্ধতা এসব নিয়ে নাগরিকদের প্রতিদিনই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তদারকি ও নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ ব্যাহত হওয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিস্থিতিও নাজুক হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদ, উত্তরাধিকার সনদ, বয়স্ক ও বিধবা ভাতার প্রত্যয়নপত্রের জন্য প্রতিদিনই চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নগরবাসী। সচিবদের সঙ্গে স্থানীয়দের কোনো সম্পর্ক বা চেনা-জানা না থাকায় দিনের ফাইল দিনে ছাড় হচ্ছে না। এর ফলে কাজে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। রাজস্ব আদায়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে সিটি করপোরেশনকে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকও সংগ্রহ করতে পারেনি সংস্থা দুটি। এতে মৌলিক সেবা খাতে ব্যয় কমে গেছে। জরুরি প্রকল্পগুলোও আটকে আছে, অনেক কাজেই দেখা দিয়েছে ধীরগতি। এতে নগরবাসীর মধ্যে হতাশা বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কাঠামোর অনুমোদিত পদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মকর্তার পদ শূন্য। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩ হাজার ১৬৬টি অনুমোদিত পদের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার পদই খালি। গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোয় নেই যথাযথ কর্মকর্তা। উত্তর সিটি করপোরেশনের চিত্রও একই। ২ হাজার ৬৮০টি পদের মধ্যে প্রায় ১ হাজারের মতো পদ শূন্য রয়েছে। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে আছে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদসহ নগর ভবনের বহু দপ্তরে নিয়মিত কর্মকর্তা নেই। এই পরিস্থিতিতে ফাইল অনুমোদন, মাঠপর্যায়ের তদারকি ও নাগরিক সেবা- কোনোটিই সময়মতো শেষ করা যাচ্ছে না।
নগর ব্যবস্থাপনার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো হলো ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে জনপ্রতিনিধি না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। বর্জ্য অপসারণ, রাস্তা সংস্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবা সবই প্রত্যাশিত গতিতে এগোচ্ছে না। এদিকে দুই সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রম নেই বললেই চলে। মাঠপর্যায়ে কেউ তদারকি না করায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। নেতৃত্বের অস্থিতিশীলতা, পদশূন্য এবং রাজনৈতিক অস্থিরতায় কার্যত দিশেহারা প্রতিষ্ঠান দুটির স্বাভাবিক কার্যক্রম। দুই সিটি করপোরেশনের গতিশীলতা আনতে এবং নাগরিক সেবায় বিপর্যয় ঠেকাতে সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে- এটিই প্রত্যাশা।
