
দেশে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের গতিও কমছে। নতুন শিল্প গড়ে উঠছে না, এদিকে পুরোনো শিল্পগুলোর বেশির ভাগ টানাপোড়েনের মধ্যে আছে। বিনিয়োগে খরা চলছে। টিকে থাকার কৌশল হিসেবে অনেকে খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো সহজ পথ বেছে নিয়েছে। সরকারি খাতেও নতুন কাজের খোঁজ নেই। অন্যদিকে বিগত সরকারের সময়ের প্রভাবশালীদের মালিকানাধীন অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে কর্মসংস্থানের গতি নেই। এ কারণে বেকারত্বের হার বাড়ছে। বেকারত্ব বাড়া আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই হুমকি। বেকার মানুষ পরিবার ও সমাজের বোঝাস্বরূপ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশক ধরেই দেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ থেকে ২৭ লাখের মধ্যে রয়েছে। অর্থনীতির বিশ্লেষক ও শিল্প খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেকার জনগোষ্ঠী দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারকে এখনই বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান দুই জায়গাতেই গুরুত্ব দিতে হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত তিন বছরে দেশে ৩২৫টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে ৩ লাখের বেশি কর্মী কাজ হারিয়েছেন। বেকারত্ব কমাতে হলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। বিনিয়োগ না হলে নতুন শিল্প গড়ে উঠবে না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই দেশে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। এতে ব্যবসার খরচ দিন দিন বাড়ছে। এত খরচ করে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। রাজনৈতিক অস্থিরতাও কমছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া বিনিয়োগ বাড়বে না। ফলে বেকারত্বের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। এক বছরে বিগত সরকারের সময়ের প্রভাবশালীদের বড় মাপের শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে কাজ হারিয়েছেন লাখেরও বেশি মানুষ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এসব কারখানায় মালিকদের আইনের আওতায় আনা হয়। এরই মধ্যে অনেকে আত্মগোপনে আছেন। সরকারি উদ্যোগে কিছু কিছু কারখানা নতুনভাবে চালুর চেষ্টা করলেও আগের মতো গতিশীলতা আসেনি। বন্ধ কারখানা কবে নাগাদ চালু করা সম্ভব হবে তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, কেউ দুর্নীতিবাজ হলে তার বিচার হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে নয়। কারণ মালিকের দুর্নীতির দায় তো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর বর্তায় না। তারা কেন কাজ হারিয়ে বেকার হবেন? বেকারত্বের কারণে সমগ্র অর্থনীতি চাপে পড়ছে।
সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার তুলনায় বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কম। আবার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় দেশে বেসরকারি বিনিয়োগের হারও সুখকর নয়। দেশ এক ধরনের বিনিয়োগ ফাঁদের মধ্যে পড়ে রয়েছে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে হবে। এর জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা দিতে হবে। বিনিয়োগ পরিবেশ, অবকাঠামো বা অর্থায়নের অসুবিধা দূর করতে হবে।
দেশে বেকারত্ব কমাতে বেসরকারি খাতকে গতিশীল করতে হবে। সামগ্রিক রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন বাড়লে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বেকার তরুণ-তরুণীদের কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা এবং কর্মমুখী প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। দেশের এসএমই খাতকে গতিশীল করতে করণীয় ঠিক করতে হবে। সর্বোপরি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও বেকার সমস্যা দূরীকরণে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে। আশা করছি, সরকার এগুলোর সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
