বাংলাদেশের
মতো উদীয়মান অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে থাকে। দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে এ খাতের অবদান
অনস্বীকার্য। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের তথ্যানুসারে,
জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশের বেশি। ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা
সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে পুঁজির সংকট, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাব ও বিনিয়োগে
ঘাটতি এবং নীতিসহায়তাজনিত নানা সমস্যার কারণে এ খাতের দুর্দশা কাটছে না।
সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির কশাঘাত তো রয়েছেই। এ ক্ষেত্রে স্বল্প পুঁজির
উদ্যোক্তাদের টিকে থাকাই এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতির
বিশ্লেষক ও শিল্প খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, দেশের বাজারে প্রায় সব
কাঁচামালের দাম বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এতে
বেশির ভাগ কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে আমদানি করা নিম্নমানের
পণ্যে বাজার সয়লাব। বাজারে নিম্নমানের পণ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায়
পড়েছে এসএমই খাতের উৎপাদিত পণ্য। মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপটেও এসএমই
উদ্যোক্তারা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। তারা এ দুরবস্থার জন্য আন্তর্জাতিক
বাণিজ্যে টানাপোড়েন, ডলারের উচ্চমূল্য ও রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন।
এসব কারণে গোটা শিল্প খাতই সংকটে রয়েছে। পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বিক্রি-
সব ক্ষেত্রেই সমস্যা। ব্যাংকঋণের সুদহার কমেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার
চেষ্টা করলে এসএমই খাতে ঋণপ্রবাহের উন্নতি ঘটাতে পারে। অতীতে কোনো সরকারই এ
সমস্যার সমাধান করেনি। বর্তমান স্বল্প পুঁজির উদ্যোক্তারা কঠিন সময় পার
করছেন।
এসএমই নিয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের আয় ও সম্পদ সীমিত।
ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা কম। বর্তমানে অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ,
অবকাঠামোগত ঘাটতি, বাজারে বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণে এসএমই
খাতের ব্যবসায়ীরা কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছেন। ক্রমাগত লোকসানে এরই মধ্যে অনেক
এসএমই প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। দেশের বাজারে উৎপাদন সূচকের ক্রমাগত পতন
ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তাদের আঘাত করেছে। অন্য সামষ্টিক অর্থনীতির
সূচকও এসএমই খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে,
মোট শিল্পের প্রায় ৯০ ভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি
শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের
সুরক্ষা এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছেন।
দেশের
গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত এসএমই। স্বল্প পুঁজির কারণে উদ্যোক্তারা গভীর সংকটে
পড়েছেন। বেশি দামে কাঁচামাল দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে
পড়েছে। এসব উদ্যোক্তাকে রক্ষা করতে হলে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে
হবে। এসএমই খাতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে একই ধরনের
পণ্যের আমদানি শুল্ক বাড়াতে হবে। এসএমই পণ্য ডিজাইন, প্রশিক্ষণ,
প্রযুক্তিতে সুসংহত ও সমন্বিত পদ্ধতিতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে
হবে। সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই খাতের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে,
এটাই প্রত্যাশা।
