বৃহস্পতিবার ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
সর্বক্ষেত্রে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১:১৫ এএম |

সর্বক্ষেত্রে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘এত কিছুর পরও দুর্নীতি খুব একটা কমেনি।’ এই ‘এত কিছু’ বলতে তিনি বুঝিয়েছেন সরকারের দুর্নীতিবিরোধী নানা উদ্যোগ বা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা। উপদেষ্টারা দুর্নীতি নির্মূলের কথা বলছেন ঠিকই, কিন্তু তাদের অনেকের কথা এবং কাজের মধ্যে অনেক সময় মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক সময় তাদের কথাবার্তা সাংঘর্ষিকও। এতে দুর্নীতির বিষয়টি যেমন আলোচনায় আছে, তেমনি দৃশ্যমান উন্নতিও হয়নি।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা উল্লিখিত আক্ষেপ-উক্তিটি করার সময় জানিয়েছেন, কেউ প্রকল্প পরিচালক হতে চান না। প্রকল্প পরিচালক পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছিলেন, প্রকল্প পদটি সৃষ্টিই করা হয়েছে দুর্নীতি করার জন্য। দুর্নীতির প্রশ্নে উপদেষ্টাদের কথা এভাবেই পরস্পরবিরোধী এবং সাংঘর্ষিক হয়ে পড়েছে। তবে দুজনেই বলেছেন, দুর্নীতি আগের মতোই রয়ে গেছে। মাত্র তিন দিন আগে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সন্দ্বীপে উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করতে গিয়ে বলেছেন, দুর্নীতি গত ১৬ বছর ছিল, বর্তমানেও আছে। 
এই স্বীকারোক্তি শুধু সরকারের উপদেষ্টারা করছেন তা নয়। দুর্নীতি দমন নিয়ে কাজ করা দুর্নীতি দমন কমিশনও নানা সময়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছে। অক্টোবর মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান আবদুল মোমেন ভোটারদের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, নির্বাচনে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে আপনারা বেছে নেবেন না। আমরা যদি ১৫ বছরের ইতিহাস দেখি তাহলে দেখব, সরকার পতনের মূল কারণ ছিল দুর্নীতি। কমিশন চেয়ারম্যানের এই উক্তিতে অতিশয়োক্তি নেই, বরং সত্যের প্রতিধ্বনি আছে। কিন্তু এরপরও খোদ দুদকের কারো কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সর্ষের মধ্যে ভূত খুঁজে পাওয়ার কথাও বলেছেন কেউ কেউ। এদেরই একজন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিন দিন আগে এক নাগরিক সভায় তিনি অভিযোগ করেছেন, কয়েকজন উপদেষ্টা দুদককে জবাবদিহির মধ্যে আনার বিরোধিতা করছেন। এখানেও সেই পরস্পরবিরোধী সাংঘর্ষিক বিষয়টি লক্ষণীয়। 
একজন উপদেষ্টা, যিনি নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন, তার নিজের গ্রামের বাড়ি আর নির্বাচনি এলাকাসহ সমমনা অন্যদের এলাকায় যে উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা এতটাই বেশি যে, সেই বরাদ্দ নিয়ে ‘এলাকাপ্রীতি’র অভিযোগ উঠেছে। এই বরাদ্দ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হওয়ার কথা। স্বয়ং পরিকল্পনা উপদেষ্টা এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি দুর্নীতি কমেনি বলে আক্ষেপ করছেন আবার তার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বরাদ্দ-দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। 
গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারম্যান ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেছিলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরও বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়নি। দুর্নীতি এখনো আছে। দুর্নীতি বেড়েছে না কমেছে, তখন না বললেও পরে টিআইবি বলেছে, ২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম। ২০২৩ সালে এই অবস্থান ছিল ১০ম। বাংলাদেশে দুর্নীতি কমেনি। ওই অনুষ্ঠানেই টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মন্তব্য করেন, দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা গভীর উদ্বেগজনক। গত সোমবার পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের কণ্ঠে একথাই প্রতিধ্বনিত শোনা গেল। 
মানুষের প্রত্যাশা ছিল, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি দ্রুত না হলেও ধীরে ধীরে নির্মূল হবে। একেবারে তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতি দমনে সরকার আন্তরিক হবে। দুর্নীতির যেসব আখড়া আছে, অর্থাৎ অফিস-আদালতে অভিযান চালাবে। জনমনে এমন একটা বার্তা দেওয়া হবে যে, দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না। কিন্তু বাস্তবতা এবং পাবলিক পারসেপশন এমন, দুর্নীতি নিয়ে সরকারের তেমন মাথাব্যথা নেই। বড়ো বড়ো প্রকল্পের দুর্নীতির ঘটনার প্রতি সাধারণ মানুষের কৌতূহল থাকলেও তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনে যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বা অফিসের সঙ্গে সেবামূলক কাজ পাওয়ার সূত্রে জড়িত, সেইসব প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত দেখতে চায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ পনেরো মাস কেটে গেছে। নতুন নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে দুর্নীতি দমনে এই সরকার দৃশ্যমান কিছু করে যেতে পারে, যা পরবর্তী সরকারের জন্য অবশ্য করণীয় বলে বিবেচিত হবে। তারা দুর্নীতি নির্মূলে আন্তরিক হবে আর দায়বোধ করবে।













http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
‘কুমিল্লা জিলা স্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’ -এর কাছে কিছু প্রত্যাশা
মাদকাসক্তি চিকিৎসায় কুমিল্লার নিরাময় কেন্দ্র: আশা, চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা
সর্বক্ষেত্রে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে
আজ দেবিদ্বার মুক্ত দিবস
‘ফলস স্মাটে’ কৃষকের সর্বনাশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
আমি রাজমিস্ত্রির ছেলে এমপি ইলেকশন করছি এটাই তো বড় বিষয়: হাসনাত আব্দুল্লাহ
কুমিল্লার ১৮ থানার লটারির মাধ্যমে নতুন ওসির পদায়ন
মাধ্যমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত
কুমিল্লায় ১৬ বছরের কিশোর নিখোঁজ: খোঁজ দিতে পরিবারের আকুতি
বাঁচতে চায় ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত কুবি শিক্ষার্থী অনন্যা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২