
যেসব যৌক্তিক কারণের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়, অনেক সময় সেসব বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকি। বিশেষ করে সরকারি বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো এ রকম করে থাকে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ গ্রাহক-ভোক্তাদের। তাদের মধ্যে আস্থাহীনতাও দেখা দেয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক এ রকমই কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা সুবিবেচনাপ্রসূত নয়।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সঞ্চয়পত্র বিক্রিসহ বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ জনসেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেবাগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রি, ছেঁড়া-ফাটা নোট বদল, সরকারি চালানের টাকা জমা দেওয়া এবং চালানসংক্রান্ত ভাঙতি টাকা দেওয়ার কাজ।
প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তে সাধারণ গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ। তারা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে এ সেবাগুলো দিয়ে আসছে, হঠাৎ করে সেসব বন্ধ করার কারণ কী? কেন বন্ধ করে দেবে? তারা আশঙ্কা করছেন, এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়বেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সহজে ও নির্বিঘ্নে এ সেবাগুলো পাওয়া যায়, অন্য ব্যাংক থেকে সেটা মিলবে না।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর মৌখিকভাবে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন; আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত কোনো ঘোষণা আসেনি। বেশ কয়েক দফা বৈঠকের পর গত রবিবার সিদ্ধান্তটি জানানো হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৩০ নভেম্বরের পর মতিঝিল কার্যালয় থেকে আর এসব সেবা পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা জোরদার এবং ক্যাশ বিভাগের আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে মতিঝিল কার্যালয়ের এসব সেবা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গ্রাহকরা বলছেন, ১৯৮৫ সাল থেকে এ সেবা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়। এটি বন্ধ হয়ে গেলে এসব সেবা বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিতে হবে। গ্রাহকরা আশঙ্কা করছেন এতে তাদের ভোগান্তি বাড়বে। বিভিন্ন ব্যাংককে সঞ্চয়পত্র কিনতে আসা গ্রাহকরা বলছেন, বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সঞ্চয়পত্র কিনলে টাকা জমা হতে অনেক সময় লেগে যায়। বিকল্প হিসেবে জেনারেল পোস্ট অফিস (জিপিও) থেকে কিনলে দালাল ধরা লাগে। সেখানেও সময় লাগে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কিনলে এক দিনেই টাকা জমা করা যায়।
সঞ্চয়পত্র ছাড়া ছেঁড়া-ফাটা টাকা পরিবর্তন করতেও ভোগান্তিতে পড়বেন সাধারণ গ্রাহকরা। বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংক থেকে ছেঁড়া-ফাটা নোট সহজে পরিবর্তন করা যায় না। নিরাপত্তাজনিত কারণে এ সেবাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। তারা বলছেন, জন্মলগ্ন থেকে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা না হলে এখনো তা হওয়ার কথা নয়। জালিয়াত চক্র টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে সেবা বন্ধ করে দেওয়া যায় না। মাথাব্যথা হলে মাথা যেমন কেটে ফেলা যায় না, তেমনি জালিয়াত চক্রের জন্য সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলাও যুক্তিযুক্ত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংককে কারিগরিভাবে ত্রুটিমুক্ত করেই সেবাগুলো অব্যাহত রাখা দরকার বলে গ্রাহকরা মনে করেন। প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার হ্যাকজনিত সমস্যা হলে সে সমস্যার শুধু সমাধান নয়, নিরাপত্তাব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করা প্রয়োজন। এর আগে ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ১০ কোটি ডলার হাতিয়ে নিয়েছিল বিদেশি হ্যাকাররা। কয়েক বছর ধরে যে সেবাগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়ে আসছে, সেসব বন্ধ করে দেওয়া ওই সমস্যার সমাধান হতে পারে না। সাধারণ মানুষের সেবাগুলো অব্যাহত রেখেই নিরাপত্তাব্যবস্থাকে নিñিদ্র করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংক এ অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলে গ্রাহকদের ভোগান্তি দূর হবে।
