
দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করে চট্টগ্রাম বন্দর। আমদানি-রপ্তানি সচল রাখা, পণ্যের অবাধ চলাচল, রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস এই বন্দর। সেই বন্দর চলে যাচ্ছে বিদেশিদের হাতে। গোপন চুক্তির মাধ্যমে বন্দরের সাতটির মধ্যে পাঁচটি টার্মিনালই তুলে দেওয়া হয়েছে বিদেশিদের হাতে।
বাকি দুটিও বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান বলে জানা গেছে। এ নিয়ে বন্দর ব্যবহারকারী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, বন্দরসংশ্লিষ্ট অন্যান্য উদ্যোগের সঙ্গে জড়িতরা চরম শঙ্কায় রয়েছেন। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতা ও বিশিষ্টজনরা। গোপন চুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশব্যাপী ব্যাপক আপত্তির মুখে গোপনে এরই মধ্যে এসব চুক্তি সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে বন্দরের এসব টার্মিনাল ব্যবহারের সব নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে বিদেশি কম্পানির হাতে, যারা ফি ও মাশুল আরোপসহ যেকোনো ধরনের কড়াকড়ি আরোপ করতে পারবে। এতে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা ও বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, গত ১৭ নভেম্বর লালদিয়ার চর কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য চুক্তি করা হয়েছে ডেনমার্কের মায়র্কসের মালিকানাধীন এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে। একই দিন পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার জন্য চুক্তি করা হয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক লজিস্টিকস প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসএর সঙ্গে। চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় হচ্ছে বে টার্মিনাল। আগে করা চুক্তি অনুযায়ী, এই মেগাপ্রকল্পের দুটি অংশ পরিচালনা করবে যথাক্রমে ডিপি ওয়ার্ল্ড (আবুধাবি) এবং পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর)। আর পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিটিসি) পরিচালনা করছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি)।
চট্টগ্রাম শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) নেতারা ‘অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে’ বিদেশি অপারেটরের কাছে ইজারা দেওয়ার চুক্তির তীব্র নিন্দা জানান। স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক রিজওয়ানুর রহমান খান বলেন, ‘সরকার যদি অবিলম্বে এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তবে আগামী ২২ নভেম্বর চট্টগ্রামে ডাকা শ্রমিক কনভেনশন থেকে হরতাল ও ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাংক রোড অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ বাম জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, ‘লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত বন্ধ করার দাবিতে ২৩ নভেম্বর সারা দেশে বিক্ষোভ, গণসংযোগ, পদযাত্রার কর্মসূচি এবং এর মধ্যে দাবি না মানলে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে যমুনা ঘেরাও, এরপর প্রয়োজনে হরতাল কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, মনে হচ্ছে বিদেশি কম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা, যার বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘকাল ধরে বহন করতে হবে। অন্যদিকে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে বিদেশি ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।’
আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সম্পাদনের কাজগুলো নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দেওয়াই উত্তম হবে।
