ইপিজেডে ৮০ নারী কর্মী অজ্ঞান, আহত ৫ দাউদকান্দিতে হেলে পড়েছে পাঁচতলা ভবন
নিজস্ব
প্রতিবেদক।। ভূমিকম্পে আচমকাই হালকা দুলে ওঠে কুমিল্লার মাটি। পরে
জোরেশোরে ঝাঁকুনি। অফিস, কারখানা, ঘরবাড়ি সবখানে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে
আতঙ্ক। বিশেষ করে কুমিল্লা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (ইপিজেড) - এ সৃষ্টি হয়
অসহায় এক মানবিক পরিস্থিতি। ভূমিকম্পের অনুভূতি পাওয়া মাত্রই ভবন থেকে বের
হওয়ার জন্য ছুটতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ সময় ভয়ে ও চাপের মুখে অন্তত
৮০ জন নারী কর্মী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। কেউ কেউ মাথা ঘুরে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন।
এসময়
হুড়োহুড়ির মুহূর্তে পড়ে গিয়ে আহত হন ৫ জন। কেউ পা মচকে ফেলেছেন, কেউ
ধাক্কা খেয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছেন। চিৎকার, কান্না আর আতঙ্কের সেই কয়েক মিনিট
কর্মস্থলজুড়ে তৈরি করে অসহনীয় ও ভীতিকর পরিস্থিতি।
এসময় পরিস্থিতি
সামলে আহতদের দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় ইপিজেডের ভেতরের বেপজা হাসপাতালে, যেখানে
৫০ জন নারী কর্মীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে আরও ৩০ জনকে পাঠানো হয়
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে।
ইপিজেড পুলিশ ফাঁড়ির
ইনচার্জ পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ভূমিকম্পের সময় ভবন কেঁপে উঠলে
দুটি কোম্পানির নারী কর্মীরা ভয় পেয়ে ছুটোছুটি শুরু করেন। চাপ আর আতঙ্কে
অনেকে অজ্ঞান হয়ে যান। কেউ গুরুতর আহত নন।
হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত
চিকিৎসক ডা. তানভীর আহমেদ জানান, অধিকাংশই আতঙ্কজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন।
শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা ছাড়াও অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। চিকিৎসা দেওয়ার
পর সবাইকে বাসায় পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভূমিকম্পের সময়
কয়েক সেকেন্ডের ঝাঁকুনিতেই ভবনের ভেতরে চিৎকার শুরু হয়। অনেক নারী দৌড়াতে
দৌড়াতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এক সহকর্মী আরেকজনকে কাঁধে নিয়ে ভবন থেকে বের করার
দৃশ্যও দেখা গেছে। কেউ ফোনে পরিবারের খবর নিতে নিতে কাঁদছিলেন।
শুধু
ইপিজেডেই নয়, ভূমিকম্পের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কুমিল্লার নগর, মহানগরসহ জেলার
বিভিন্ন এলাকায়। বিশেষ করে দাউদকান্দি উপজেলার খাদরপুর এলাকায় পরিস্থিতি
আরও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে। স্থানীয়রা জানান, ভূমিকম্পের পর এলাকার একটি
পাঁচতলা ভবন হেলে পড়তে দেখা যায়। পাশাপাশি পাশের আরেকটি ভবনে বড় ফাটল দেখা
গেছে।
ভবন হেলে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাসিন্দাদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক
দেখা দেয়। কেউ জরুরি কাগজপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন, কেউ শিশুদের হাত ধরে দ্রুত
বেরিয়ে আসছেন। পুরো এলাকায় তৈরি হয় নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ।
স্থানীয়
প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও প্রকৌশলীরা ভবন দুটি পরিদর্শনের প্রস্তুতি
নিচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে ভবন খালি করে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের
খবর পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্পে সরাসরি বড় ক্ষতি না হলেও আতঙ্কই বড় সংকট
তৈরি করেছে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিসের
সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, ভূমিকম্পের পর পুরো কুমিল্লা জেলায় আতঙ্ক
বিরাজ করলেও পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোথাও কোন জায়গায়
স্থাপনা ধসে পাড়া কিংবা হতাহতের সংবাদ পাওয়া যায়নি।
