রোববার ১৬ নভেম্বর ২০২৫
২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
রবিবাসরীয়...
প্রকাশ: রোববার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:৩৭ এএম আপডেট: ১৬.১১.২০২৫ ১:৫৩ এএম |

 রবিবাসরীয়...








একটি বিড়াল, কয়েকটি কুকুর আমরা ক’জন মানুষ


রবিবাসরীয়...
অমিত ভট্ট  ।।
মিনি বিড়ালটি রাস্তার মাঝ দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। পিছনের একটি পা থেতলানো। ক্ষত দিয়ে রক্ত চুইয়ে পড়ছে।
একটু আগেই একটি গাড়ির চাকা মিনির পায়ের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। তারপর থেকেই তার এই অবস্থা। মিনির চেহারাতে এখন আর আগেকার মত সচরাচর দেখা সেই ধূর্ত অভিব্যক্তি দেখা যাচ্ছে না। বরং, চোখেমুখে এখন একটা অসহায় এবং দুস্থ চাহনি ফুটে উঠেছে। কি নিদারুণ নিষ্পাপ চাহনি! দেখলে যে কারও মায়া লাগবে।
ওর চোখের অনেক দামি চশমাটাও ফেটে গেছে! এক পাশের ফ্রেম প্রায় ভেঙ্গে গেছে।
কিন্তু মিনির এই করুন অবস্থাতেও এলাকার কুকুরের দলের একমাত্র স্ত্রী কুকুরটির কোনও মায়া হলো না!
কুকুরটি এগিয়ে আসালো মিনির দিকে। মিনি করুনা ভিক্ষা প্রার্থনা করার জন্য কোমল কন্ঠে ম্যাও ম্যাও করে যেন কোন আদিম করুন কবিতা আবৃত্তি করলো।
কুকুরটি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মিনির সামনে এসে গন্ধ শুকলো। মিনির দিকে সে প্রথমে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর মুহূর্তেই হিংস্র দৃষ্টি মেলে ঘেউ ঘেউ করে ডেকে দলের অন্য সদস্যদের ডাক দিলো।
খুব দ্রুততার সাথে দলের অন্য ৪টি পুরুষ সদস্য এগিয়ে আসলো। সকলের চোখ হিংসায় জ্বলজ্বল করছে। যেন তারা কত সহস্র  বৎসর ধরে হন্য হয়ে খুঁজে চলা হিংস্র শ্বাপদ প্রতিদ্বন্দীকে পেঁয়েছে।
কুকুরগুলো নেকড়ে বাঘের মত একসাথে কলিজা হিম করা “আউউউ...” শব্দ করে বিকট ত্রাসের সৃষ্টি করে মিনি বিড়ালটির দিকে লাফ দিলো!
শহরের মাঝখানে অনেকটা গ্রামের আদলের একটা বাড়ি। চারপাশের অন্য সকলে পাকা বাড়ি তুলতে পারলেও এই বাড়ির গৃহস্থরা এখনো ততদূর এগুতে পারে নি। ফলে বাড়িটি অন্য সকল আধুনিক বাড়ি থেকে কিছুটা নিচু। এতটাই নিচু যে বাংলাদেশে শামুকের গতিতে এগিয়ে চলা সিটি কর্পোরেশনের তৈরি করা পাঁকা রাস্তাটিও এই বাড়িটি থেকে এক হাত উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তিন পুরুষ ধরে এই বাড়িতে মানুষের বসবাস। দিনতার মধ্যেও একটা তৃপ্তি আছে। একটা ছন্দ আছে। টাকার অভাবে এই বাড়ির লোকগুলো চারপাশের গাছপালাগুলো পরিষ্কার করাতে না পারাতে চারপাশে কেমন যেন জঙ্গল জঙ্গল আবহ এসে গেছে। এই জঙ্গলের মধ্যেই তারা ছোট থেকে অভিযোজিত হয়েছে। কিন্তু, মনের শান্তির জন্যে তারা এই জঙ্গলকে শহরের মাঝে এক টুকরো গ্রাম ভেবে কিছুটা হলেও মনে শান্তি পায়। আবার বাড়ির কেউ কেউ অত্র এলাকার একমাত্র গাছসহ বাড়ির পদবি পাওয়াতে খুব গর্বভরে বুক ফুলিয়ে চলাচল করে। এতটাই গর্ব! যে, গর্বে প্রতিটা পুরুষ মানুষের বুক কমপক্ষে ৩ ইঞ্চি ফুলে থাকে!
এই বাড়িতে থেকে অনেক অনেক মানুষজন বড় হয়েছে। এই বাড়ির বংশানুক্রমে জন্মানো সদস্যের পাশাপাশি অনেক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের আত্মীয়রাও শহরে এসে এ বাড়ির কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাড়ির বড় কর্তার স্ত্রীর মন খুব বড়।
এই বাড়িতে মানুষের পাশাপাশি কিছু পশুপাখিও নিয়মিত বড় হচ্ছে। পাশের বাড়ির দুষ্ট ছেলেটার নাম রিপন। একবার কোথা থেকে একটা বিড়ালের বাচ্চা কুড়িয়ে পেয়েছিলো। বিড়ালের এতিম বাচ্চাটি একটা ডাস্টবিনের কিনারে বসে ম্যাও ম্যাও করছিলো। সে আদর-আহ্লাদ করে নিজের ঘরে নিয়ে আসলো।
তার মায়ের প্যাদানি খেয়ে পরদিন ভোরেই কেউ দেখার আগে এই বাড়ির উঠানে এনে ফেলে দেয়। কচি বিড়াল ছানা! দুধের অভাবে, মায়ের ওমের অভাবে একটা গাছের শিকড়ের উপর বসে সারাটাদিন মিউ মিউ করলো।
সন্ধ্যার আগে আগে বড়কর্তীর নজর পড়লো। তাঁর মায়ার শরীর। ছেলেটাকে পাঠিয়ে বিড়াল ছানাটিকে একটা কাগজের ঠোঙায় পুরাতন শাড়ির টুকরা দিয়ে পাতানো বিছানা, আর একটা বাটিতে কিছুটা গরুর দুধ পাঠিয়ে দিলেন।
ব্যাস, সেই থেকে ছানাটি এই বাড়ির হয়ে গেলো। ধীরে ধীরে বাড়ির ভেতর থেকে সে বড় হতে থাকে। অনেকে আবার বলেন যে, ছানাটি বিনা পারিশ্রমিকে শুধু শুধু এই বাড়ির অন্ন ধ্বংস করছে! কথাটি একদম ঠিক নয়। বড়কর্তীর কানে গেলে তিনি এর কঠোর বিরোধিতা করেন।
তিনি বলেন, “তোমরা বুঝি দেখো না? বলি, চোখের কি মাথা খেয়েছো? এইটুকুন বিড়ালছানাটা প্রতিদিন দুটো তিনটি করে ইঁদুর মারছে। আবার বাচ্চাদের সাথে দুইবেলা খেলা করে সকলের মনোরঞ্জন করছে। সকলে ছানাটির খেলা দেখে হেসে কুটিকুটি হয়! এসব তো তোমাদের চোখে পড়বে না। পারো, শুধু অন্যের বদনাম ছড়াতে!”
বিড়াল ছানাটির খাবারের ব্যাপারে স্বাস্থ্যের ব্যাপারে বড়কর্তীর তিক্ষè নজর। তিনি, নিজে অবশ্য বাচ্চাটিকে কখনো কোলে নেন না। তবে খেয়াল রাখেন কে কে ছানাটির সাথে খেলা করছে, কোলে নিচ্ছে।
একদিন সময় দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল। বাড়ির সকলে দুপুরের খাবার খেয়ে আয়েসি ভাতঘুমে মগ্ন। বড়কর্তী হাতের সকল কাজ সেরে ঘরের সামনের বাধানো সিঁড়িতে এসে বসেন। উনার সারাটা দিনের ব্যস্ত সময়ের মাঝের এই সামান্য কিছু সময় একান্তই নিজের।
এই সময়টাতে তিনি ঘরের দুয়ারে বসে বসে কি যেন ভাবেন। চারপাশের চারটি দানবীয় বিল্ডিং এর পাশ গলে যতটুকুন আকাশ দেখা যায়, মেঘ দেখা যায় ততটুকুই খুব আগ্রহ ভরে দেখেন। বাড়ির চারপাশের বেখায়ালি গাছপালাগুলো দেখেন। কখনো কখনো মুচকি হাসেন। হয়তো ফেলে আসা জীবনের সাথে সামনের অনিশ্চয়তা ভরা জীবনের যোগ-বিয়োগ মিলান।
কখনো কখনো ভাবেন, এই জীবনটার প্রকৃত উদ্দেশ্য কি? মানে কি? এই বিস্ময়কর মহাবিশ্ব সত্যিকারভাবে আমাদের কাছে কতটুকুই প্রত্যাশা করে? এসব বিষয় ভাবতে ভাবতে কখন যে সময়টা গড়িয়ে যায় ঠিক তিনি বুঝতে পারেন না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে আবার দৌড়ে ঘরের ভেতর চলে যান। কত কত কাজ! তিনি নিজহাতে না সামলালে, কে করবে?
একদিন এই সময়ে বড়কর্তী মাত্র রান্নাঘর থেকে বের হয়েছেন। দেখতে পান বিড়াল ছানাটিও চুপ করে ঘরের দরজায় বসে উনার মতন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। এইটুকুন ছানার চোখেমুখে কি সীমাহীন উদাসীনতা! অন্য সময় ছানাটি গাছ বেয়ে উপরে উঠে, পুরোটা উঠানের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত পর্যন্ত ছোটাছুটি করে। কখনো লেজ উঁচিয়ে, পশমগুলো দাঁড়া করিয়ে একদম বাঘের মত দৌড়ে এসে ভয় দেখায়। আরও কত কত বিচিত্র বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে। ছানাটির কান্ডকারখানা দেখে বাড়ির ছেলে, বুড়ো সকলে হেসে কুটোকুটি হয়।
আর, আজকে কি সুন্দর একদম বড় কর্তীর মতন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। খুশি হয়ে শুধু বড়কর্তী একবার ডাক দিলেন, “ এই মিনি! এদিকে আয়।” ব্যাস মিনি আদুরে স্বরে ম্যাও বলে বড়কর্তীর পাশে এসে বসলো।
সেই থেকে বিড়ালছানাটির নাম মিনি। সবাই ডাকে, “মিনি এদিকে আয়।” কেউ ডাকে, “এই মিনি! আয়, আয়।” কেউ ডাকে, “মিনি, মিনি।” সে সকলের ডাকেই চলে আসে। কাউকে নিরাশ করে না। সবাই, বড্ড আদর করে।
ভালই চলছিল মিনির দিনকাল। এভাবে প্রায় দুই থেকে তিন মাস চলে গেলো। একদিন পাশের বাড়ির সেই দুষ্ট ছেলে রিপন একটা কুকুরছানা নিয়ে এলো বাসায়। রাস্তায় নাকি কুকুরছানাটা কষ্টে কুঁই কুঁই করে চিৎকার করছিলো। মা কোথায়? বাবা কোথায়? কেউ বলতে পারে না।
রিপন আদর করে, সোহাগ করে ছানাটিকে নিয়ে এলো বাসায়। পরদিন মায়ের প্যাদানি খেয়ে কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই ভোরবেলা এই বাড়িতে এনে ছানাটিকে ছেড়ে দিলো।
সকালবেলা বাড়ির সকলে দেখলো মিনি আর কুকুরছানাটি একসাথে খেলা করছে। বাহ্, বেশ! চিকন চাকন বাহারি রঙের মিনি বিড়ালের সাথে খয়েরি রঙের নাদুসনুদুস স্বাস্থ্যবান একটি কুকুরছানা খেলা করছে। দেখতে বেশ লাগছে। কুকুরছানাটির হাঁটাচলায় কেমন একটা রাজা রাজা ভাব! অনেকে আবার টিপ্পনি কেটে বললেন, “ একদম রাজার মতন দেখতে এই বস্তুটারই অভাব ছিলো! এত্তদিনে বাড়ির ষোলকলা পূর্ণ হলো।”
বড়কর্তীও কিছুই বলেন না। একদিন, উনার সামনে পাশের বাড়ির ঠাকুরুন কুকুরটিকে নিয়ে ব্যঙ্গ করাতে বড়কর্তী ক্ষেপে গিয়ে বললেন, “ বাড়ির কত কত জায়গায় চড়ুই, কাক, কোকিল, পেঁচা বাসা বাধলো! কত কত এতিম এই বাড়িতে মানুষ হলো! আর, তোমরা পড়ে আছো এই কুকুরছানা আর বিড়ালছানা নিয়ে!”
বড়কর্তীর সবুজ সংকেত! ব্যাস। আর কার সাহস আছে এদের কিছু বলার? বাড়ন্ত সময় বাড়তে থাকে গড়গড়িয়ে। দিন আসে রাত হয়। অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমা,  পূর্ণিমা থেকে অমাবস্যায় চান্দ্রমাস আবর্তিত হয়। নদীতে জোয়ার আসে, ভাটা হয়। ষড়ঋতুর দেশে এক ঋতুর শেষে অপর ঋতু আসে। মিনিও বড় হতে থাকে, সাথে সাথে শিশু রাজা কিশোর হতে থাকে।
রাজা বড় হতে হতে ছয় মাস বয়সেই কিছু বন্ধু-বান্ধবী জুটিয়ে ফেলে। মিনির চমৎকার বুদ্ধিমত্তায় সকলে মারাত্মক সন্তুষ্ট! রাজাও মিনি ছাড়া কিছুই বুঝে না। কোন কিছু করতে হলে সে সব সময় মিনিকে জিজ্ঞেস করে।
শারীরিক গড়নের বলিষ্ঠতায় রাজা অন্যদের থেকে অনেকটা এগিয়ে। কিন্তু, অনেক খুঁটিনাটি ব্যাপার স্যাপার সে একটু কম বুঝে। তাই রাজা সব সময় মিনির সাথে শলাপরামর্শ করে যে কোন কাজ করে! এলাকা দখল, ঝামেলা, নিজেদের সীমানায় কতৃত্ব প্রকাশের বুদ্ধিসুদ্ধি মিনিই রাজাকে দেয়। রাজার সাথের উঠতি বন্ধু-বান্ধবীরাও মিনির কাছে আসে। মিনি বাড়ির সামনের বড় নারিকেল গাছের গোড়ায় বসে কথা বলে! রাজাসহ সকলে চুপচাপ শুনে। মিনির কথা অন্য সকলে না বুঝলেও রাজা বুঝে! কারন, একসাথে দুজনে ছোট থেকে বড় হয়েছে। একে অন্যের কথা বুঝাটা সহজ এবং স্বাভাবিক।
মিনির বলা শেষ হলে, রাজা একপাশে গিয়ে সকলকে মিনির কথা বুঝিয়ে দেয়। তারপর সকলে কাজে যায়। অল্প কয়েকদিনের ভেতরেই রাজা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা পুরাতনদের সরিয়ে এলাকার দখল নেয়। রাজারা চেষ্টা করতে থাকে পুরাতন শাসকদের তুলনায় পাড়াকে আরও দারুনভাবে শাসন করতে! তারা এ কাজে চমৎকারভাবে সফলও হয়।
এলাকায় তাদের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তাদের দলটা ভাগ ভাগ হয়ে প্রতিটা বাড়ির সামনে রাত জেগে জেগে পাহারা দিতে থাকে। এলাকার মান্যগণ্যরা রাজাদের প্রশংসা করতে থাকে। মাঝে মাঝে কারও বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাবার কিংবা কোন অনুষ্ঠানের নষ্ট হওয়া খাবার রাজাদের দিকে ছুড়ে ফেলা হয়! এতেই তারা মহাখুশি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাজাদের সম্পূর্ণ দলটির প্রতিটি সদস্যের শরীরে একটা তেলতেলে ভাব চলে আসে! অনেকের পেটে চর্বি জমতে শুরু করে।
অল্প সময়ের ভেতরে রাজা লম্বা চওড়ায় দেখতে অনেকটা বড় হয়ে যায়। চলার সময় তার বুকটা সবসময় সিংহের মতন উঁচু হয়ে থাকে। তার দলটি দিন দিন বড় হতে থাকে। এলাকার লোকজন রাজাকে এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সমীহ করতে থাকে।
তবুও, রাজার মনে সুখ নেই। শান্তি নেই। তার মনটা এখনো স্থির হচ্ছে না। তার শুধুমাত্র একটিই অভাব। এই অভাবটি পূরণ হলেই রাজা পৃথিবীর সবথেকে সুখী কুকুর হবে।
রাজাদের এলাকায় একটি বিশাল ডাস্টবিন আছে। কয়েকটি বড় বড় এলাকার ময়লা, আবর্জনা এখানে এনে ফেলা হয়। কুকুরেরা ময়লা নিয়ে দিনরাত ঝুট-ঝামেলা
করে। রাত্রের বেলা কুকুরদের চিৎকারে এলাকাবাসীরা ঠিকমতন ঘুমাতে পারে না। তাই এলাকাবাসীরা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ডাস্টবিনের চারপাশে দেয়াল দিয়ে দুজন শক্ত সামর্থ দারোয়ান নিয়োগ দিয়েছে। দারোয়ানের হাতে শক্ত ধাতব বড় লাঠি তুলে দেয়া হয়েছে কুকুর তাড়ানোর জন্যে। এত্ত বড় লাঠি দেখলেই কুকুরেরা আর সাহস করে না ঐমুখি হওয়ার
তবে কিছুটা নিয়ম শিথিল করা হয়েছে বয়স্ক কুকুরদের জন্যে।  শুধুমাত্র বয়স্ক আর, অসুস্থ কুকুরেরা ডাস্টবিনে যেতে পারে। বাকিরা পারে না। রাজার স্বপ্ন এই ডাস্টবিনটা জয় করা।
মিনি এখন দেয়ালের উপরে বসে আছে। চোখে একটি রিমলেস এর চমৎকার চশমা। চশমাটি রাজা এলাকার বড় ১২তলা বিল্ডিং এর সামনে পেয়ে মিনির জন্যে নিয়ে এসেছে। মিনির ব্যক্তিত্ববান চেহারার সাথে চশমাটি দারুন মানিয়েছে! চশমাটা ওর ভাবভঙ্গিতে একটা অনন্য গাম্ভীর্য এনেছে। মিনির কথা এখন রাজাদের এলাকার শেষ কথা। মিনির নির্দেশই শেষ নির্দেশ। মিনির কথায় এলাকার সকল কুকুরেরা হাসতে হাসতে জীবন দিতে পারে। সে এলাকায় একটা একনায়কতন্ত্রের একমুখি নির্দেশ এর সুষম ব্যবস্থা চালু করেছে। এলাকায় মিনির কথার বাইরে যাওয়াই দন্ডনিয় অপরাধ। গতকালকে দুটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বিড়াল আর একটি কুকুরির মৃতদেহ বড় ডাস্টবিনটির পাশে পাওয়া গেছে। এলাকার সকলে মুখে কিছু না বললেও বুঝতে পারছে এটা পুরোটাই মিনির কারসাজি। বড় ডাস্টবিন দখল করার জন্যে গত কয়েকদিন ধরেই কুটকৌশল শুরু হয়ে গেছে। কার জীবন চলে যাবে, কার থাকবে তা কেউ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছে না। এলাকার কুকুর-বিড়ালদের মধ্যে প্রচন্ড উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মিনি দেয়ালের উপরে সম্রাজ্ঞীর ভঙ্গিতে বসে আছে। তার সামনেএলাকার কয়েকটি মোড়ল পর্যায়ের কুকুর চুপচাপ বসে আছে। মিনি এখন আগের মত সকলের সাথে দেখা করে না। সে শুধু কয়েকজনকে নির্দেশ দেয়, এই নির্দেশই অন্যদের কাছে ক্রমান্বয়ে পৌঁছে দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পরে আরও কয়েকটি পুরুষ বিড়ালের দল মিনির সাথে দেখা করতে আসে।
আজকে এলকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। কুকুর বিড়ালদের আর রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না। মিনি এবং রাজার দলের বিরুদ্ধে পাশের এলাকায় কুকুরদের একটা দল একত্রিত হচ্ছে। রাজার দলের কয়েকটি কুকুরও সেখানে যোগ দিয়েছে। খবর এসেছে আরও দুই এলাকার কুকুরেরা জোট গঠন করা শুরু করেছে। মিনি রাজাদের এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন একত্রে থাকা আর নিজেদের কর্মক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখা। রাজার আত্মবিশ্বাস নিজের থেকেও শতগুণ বেশি মিনির উপরে।
বিকেল আর সন্ধ্যার মাঝামাঝি রাজাদের উপর আতর্কিত হামলা করা হয়। পাশের তিন এলাকার সকল কুকুরেরা মিলে একত্র হয়ে হামলা করে। কিন্তু, মিনির চমৎকার বুদ্ধির তুড়িতে তারা সকলে উড়ে যায়। রাজাদের দলে সদস্যসংখ্যা কম হলেও চারদিক থেকে বিভিন্ন কৌশলে আক্রমণ করার ফলে সেই জোট ভেঙ্গে যায়। রাজাদের দলের সকলে ছদ্মবেশ ধারন করে আক্রমণ করে। রাজার দলের কিশোর যোদ্ধারা এক্ষেত্রে দারুন ভূমিকা পালন। কিছুক্ষণ পরেই বিপরীত দলের সকলের আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে যায়। রাজা জয়ী হয়। যুদ্ধ শেষে রাজাদের সামনে দারোয়ানদেরও দাঁড়ানোর সাহস হয় নি। রাজা শহরের সবচেয়ে বড় ডাস্টবিনটা জিতে নেয়।
যুদ্ধের আগে মিনি রাজাকে বুদ্ধি দিয়েছিলো যাতে প্রধান প্রধান যোদ্ধাদের নিয়ে কয়দিন না খেয়ে থাকে। না খেয়ে থাকাতে রাজাদের রক্তের গভীরে লুকায়িত সহস্র সহস্র বৎসরের হিংস্রতা খুব সহজেই জেগে উঠেছিলো।
মিনির উপরে কয়েকটি খুব সাধারন কুকুর হামলে পড়ছে। খুব দ্রুতই হয়তো মিনির ইহজীবন শেষ হবে। এলাকা থেকে শুরু করে শহরের কত বড় বড় সমস্যার সমাধান, তথা উন্নতি একা মিনির বুদ্ধির দ্বারা হয়েছে। কত কত কুকুর, বিড়াল মিনির বুদ্ধিতে উন্নতি করলো তার হিসেব কল্পনাতীত! অথচ, আজ মিনি ঘোরতর বিপদে। কোথায় মিনির বিশ্বস্ত রাজা?
মিনিকে বাঁচাতে এলাকার বৃদ্ধ দারোয়ানটি মোটা ধাতব লাঠিটি নিয়ে দৌড়ে আসছে। কিন্তু, বৃদ্ধ দারোয়ান সময়ের সাথে তেমন দৌড়াতে পারছে না। সময় যেন আটকে গেছে।
বড়কর্তীর বাড়িতে পাশের বাড়ির দুষ্ট ছেলে রিপন দুদিন আগে মিনির থেকে দেখতে হাজারগুন সুন্দর একটা বিড়ালছানা এনে ফেলেছে। ছানাটিকে বাড়ির সকল মানুষ খুব পছন্দ করেছে। বিকালবেলা বড়কর্তী বের হলে বিড়ালছানাটি পাশে এসে বসে শহুরে আকাশের দিকে উদাসীন চোখে তাকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে বড়কর্তী অবাক হয়ে ওইটুকুন একজোড়া চোখের উদাসীনতা দেখে হেসে কুটিকুটি হন।
মিনিকে দারোয়ান উদ্ধার করেছে। তারপর পাশের পশু হসপিটালে নিয়ে গিয়েছে। হয়তো মিনি বেঁচে যাবে! আবার, মারাও পড়তে পারে! যদিও মিনির হাতের তৈরিকৃত রাজারা মিনিদের বিপদের সময় থাকে না! আবার, নতুন মিনিরা বড় হয়। সৃিষ্টর আদিম কাল থেকে কত শত শত মিনি আসলো গেলো। রাজারা হারিয়ে গেলো ইতিহাসের বিচ্ছিন্ন ধূলিকনায়! কিন্তু, প্রতিটা বাড়ির সাধারন নাগরিকরা দিন দিন সাধারনই থাকলো চিন্তা, চেতনা আর বৈষয়িক ভাবনায়।
বড়কর্তীর বাড়ির পুরুষ সদস্যেরা আর বিল্ডিং করতে পারে না সমগ্রজীবনে। উন্নত হওয়ার চিন্তা শুধু থেকে যায় তাদের কল্পনার অস্থিমজ্জায়। বাড়ির চারপাশে গাছপালার জঙ্গল আরও ঘন হয়। চারপাশের বিল্ডিংগুলো আরও উঁচু হতে হতে একসময় বড়কর্তীর আকাশ ঢেকে ফেলে।
লেখক: এম.এস.সি (পদার্থবিজ্ঞান)
সহকারি শিক্ষক ঠাকুরপাড়া মডার্ণ স্কুল 


ফারডিনান্ডের গল্প


রবিবাসরীয়...
মুনরো লিফ ।।
অনেক আগে স্পেনে ফারডিনান্ড নামে এক ষাঁড় বাছুর ছিল। তার সমবয়েসী বাছুরেরা দৌড়ানো, লাফানো এবং ঢুসাঢুসি করলেও ফারডিনান্ড এর কিছুই করতো না। বরং, সে একাকী বসে ফুলের ঘ্রাণ নিতেই ভালোবাসতো। তৃণভূমিতে একটি কর্ক গাছেরতলাই ছিল ফারডিনান্ডের প্রিয় জায়গা। তার প্রিয় কর্ক গাছের ছায়ায় বসেই সে ফুলের ঘ্রাণ নিতো। মাঝেমধ্যে তার মা চিন্তায় পড়ে যেতো, যদি ফারডিনান্ড দলছাড়া একা হয়ে যায়- এই ভেবে।
তিনি বলতেন, 
" তুমি কেন অন্যান্য বাছুরদের সাথে দৌড়াদৌড়ি ও ঢুসাঢুসি করো না?"
কিন্তু, ফারডিনান্ড নিজের একাকীত্ব উপভোগ করে কেবল মাথা নাড়াতো,
"আমার এই নিরব জায়গাটিই পছন্দ যেখানে আমি একাকী বসে ফুলের ঘ্রাণ নিতে পারি।"
প্রতিকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও তার মা বুঝেছিলেন, ফারডিনান্ড আসলে নিজের সঙ্গই পছন্দ করে। তাই, তিনি ফারডিনান্ডকে তার হালে ছেড়ে দিলেন। 
বয়স হবার সাথে সাথে ফারডিনান্ড অনেক বড় ও শক্তিশালী হয়ে উঠল। অন্যান্য ষাঁড়েরা নিজেদের মধ্যে শিং দিয়ে লড়াই করতো যাতে তারা মাদ্রিদের "ষাঁড়ের লড়াই" তে বাছাই হতে পারে। অপরদিকে, ফারডিনান্ড ছিল ভিন্ন — সে তখনো কর্ক গাছের তলায় বসে ফুলের ঘ্রাণ নেওয়াই ভালোবাসতো।
একদিন উদ্ভট টুপি পরা পাঁচজন লোক এলেন মাদ্রিদের জন্য ষাঁড় বাছাই করতে। তারা খুঁজছিলেন সবচেয়ে বড়, দ্রুতগামী ও শক্তিশালী ষাঁড়কে। 
অন্যান্য ষাঁড়েরা পাঁচজনের আশেপাশে হ্রেষাধ্বনি দিয়ে বিভিন্ন কসরতের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতা জাহির করতে চাচ্ছিলো।যাতে করে তারা বাছাই হতে পারে। 
ফারডিনান্ড ভেবেই নিয়েছিল সে বাছাই হবে না, তাই আর মাথা ঘামালো না। অভ্যেস অনুযায়ী নিজের প্রিয় জায়গা — কর্ক গাছের নীচে গিয়েই বসলো। 
কিন্তু, বসার সময় সে লক্ষ্যই করেনি কোথায় বসেছে। গাছের ছায়ায় না বসে সে ভুলে একটি ভ্রমর এর উপর বসে পড়ে!
তুমি যদি ভ্রমর হতে এবং একটি বিশাল ষাঁড় তোমার উপর বসে পড়তো, তাহলে তুমি কি করতে?  নিশ্চয় তুমি তাকে হূল ফোটাতে!
ভ্রমরটি ফারডিনান্ডের সাথে ঠিক এটাই করলো। 
উহ্! বড্ড লেগেছে। ব্যথায় কুঁকড়ে ফারডিনান্ড হ্রেষাধ্বনি দিয়ে লাফ দিলো। হূলের ব্যথায় সে পাগলের মতো একই সাথে দৌড়াতে, শিং নাচাতে এবং মাটিতে থাবা দিতে লাগলো। 
ফলস্বরূপ, তাকে দেখে ওই পাঁচজন লোকেরা খুশিতে ফেটে পড়লো। তারা ভেবেই নিল— এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বড় ষাঁড়। ঠিক যেমনটি তাদের প্রয়োজন ছিল। 
ফারডিনান্ডকে ঘোড়ার গাড়িতে করে মাদ্রিদে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
অসম্ভব সুন্দর ছিল দিনটা! চারপাশে পতাকা উড়ছিল, ঢোল বাজছিল... এবং সুন্দরী নারীরা চুলে ফুল গুঁজে এসেছিলেন। 
কুচকাওয়াজ এর সাথে সাথেই প্রতিযোগীরা ষাঁড়ের আখড়ায় প্রবেশ করলো। 
ষাঁড়েরা যাতে আটকে পাগল হয়ে যায়, সেই লক্ষ্যে তীক্ষ্ম লম্বা পিন এবং রিবন পরে প্রথমে আসলেন ব্যান্ডেরিলেরসরা।
অনুবাদক : 
সাবরিন সুলতানা 
ইংরেজি বিভাগ, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।












http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
ড. মোশাররফের নেতৃত্বে ধানের শীষের গণমিছিল আজ
বিরোধ মিটিয়ে ঐক্য গড়তে জেলা বিএনপির বৈঠক
তারেক রহমানের ৩১ দফাই রাষ্ট্র গঠনে সার্বজনিন দিক নির্দেশনা
আগামী নির্বাচন হবে চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদেরবিরুদ্ধে
বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উপলক্ষে কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টারে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
দুই প্রার্থীকে তারেক রহমানের ফোন
কুমিল্লা সীমান্তে বাড়ছে অস্ত্রের চোরাচালান
আগামী নির্বাচন ও বাংলাদেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে
প্রাথমিকে শারীরিক ও সংগীত শিক্ষক পদ পুনর্বহালের দাবি
চান্দিনায় ৪টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২