নিজস্ব
প্রতিবেদক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারত সীমান্তবর্তী
কুমিল্লা অংশে অস্ত্রের চোরাচালান বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছে,
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে অস্থিতিশীলতা তৈরির উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধ
চক্রগুলো এই অস্ত্র বাংলাদেশে ঢোকানোর চেষ্টা করছে। যদিও অস্ত্রের
চোরাচালানসহ যে কোনো আমদাননীনিষিদ্ধ অবৈধ পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ প্রতিরোধে
সতর্ক অবস্থানের কথা জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বাংলাদেশ-ভারত
সীমান্তঘেঁষা কুমিল্লা জেলার সীমান্ত এলাকা প্রায় ১০৬ কিলোমিটার জুড়ে
বিস্তৃত। দেশের ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে এ সীমান্ত যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি
নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে
এ সীমান্ত দিয়ে বিদেশি অস্ত্রের চোরাচালান বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাসেই কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায়
অভিযান চালিয়ে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
গত ৩ নভেম্বর
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার যশপুর সীমান্তে ভোররাতে অভিযানে নামে বর্ডার
গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মূলত মাদকের চালান ধরতে গিয়ে তারা হাতেনাতে পায়
অস্ত্র চোরাচালানের নতুন রূপ। মাদকের আড়ালে থাকা প্যাকেট খুলে উদ্ধার করা
হয় দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, দুই রাউন্ড গুলি এবং আরও বেশ কিছু
অস্ত্রের যন্ত্রাংশ। এমন উদ্ধার অভিযানের পর থেকেই সীমান্ত জুড়ে উদ্বেগ
ছড়িয়ে পড়েছে।
বিজিবি জানিয়েছে, কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা এখন অস্ত্র
চোরাচালানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। কুমিল্লা ১০
ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, আমাদের কাছে
আগে থেকেই গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে নির্বাচনের আগে দেশে অরাজকতা তৈরির জন্য
অস্ত্র ঢোকানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক। কোথা
থেকে অস্ত্র আসছে, কারা সংগ্রহ করছে-সব তথ্য আমরা নজরে রাখছি।
কুমিল্লার
ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। গত সোমবার (১০ নভেম্বর) বাংলাদেশ
পল্লী উন্নয়ন একাডেমী-বার্ডে ‘নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত
কর্মকর্তাদের চ্যালেঞ্জ নিরূপণ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক’ কর্মশালায় বক্তব্য
শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে সীমান্ত
এলাকাগুলোতে বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনী পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর
নজরদারী বৃদ্ধির জন্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে শহরের বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট
বসিয়ে তল্লাশিসহ অপরাধ দমনে আহবান জানানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতি।
যাতে করে নির্বাচনকে ঘিরে কোনোপ্রকার বিশৃঙ্খলা তৈরি করে নির্বাচন বানচালের
অপচেষ্টা কেউ করতে না পারে।
স্থানীয়দের কলামিস্ট মাসুক আলতাফ চৌধুরী
বলেন, আমাদের এ ভূমির যোগাযোগটা সহজ বলে এবং আমাদের বিজিবি এবং ওইদিকে
বিএসএফের বিষয়গুলো তদারকি অনেক কম বলে আগে থেকেই বিভিন্ন পণ্য এ পথে আনা
নেয়া করছে। চোরাচালানের একটা স্বর্গরাজ্য তৈরি হচ্ছে। সামনে যেহেতু আমাদের
জাতীয় নির্বাচন, এসময়ে তারা সংঘবদ্ধ হচ্ছে। আমার মনে হয় যে, সীমান্তে আরও
সতর্ক হওয়া দরকার।
যশপুর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আরশাদ বলেন, বহুদিন
ধরেই সীমান্তের এই পথে নানা পণ্য আসা-যাওয়া করে। আগে যেখানে শুধু চিনি বা
গরু আসত, এখন নাকি অস্ত্রও ঢুকছে এটা খুবই ভয়ংকর।
একই এলাকার এক দোকান
মালিক নূর নবী জানান, আমরা প্রায়ই দেখি রাতে অপরিচিত মানুষজন আসা-যাওয়া
করে। আগে ভাবতাম হয়তো মাদকের সাথে জড়িত, কিন্তু এখন শুনছি অস্ত্রও আসছে।
সামনে নির্বাচন, তাই সবাই আতঙ্কে আছে।
স্থানীয় শিক্ষক আবদুল খালেক বলেন,
এই সময়টা খুব স্পর্শকাতর। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সহিংসতা বা অরাজকতা
বাড়াতে কিছু গোষ্ঠী হয়তো এ অস্ত্র সংগ্রহ করছে। সীমান্তে নজরদারি আরও
বাড়ানো দরকার।” আরেক বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, “আমরা তো গ্রামের মানুষ,
কিন্তু এখন রাতে ঘর থেকে বের হতেও ভয় লাগে। প্রতিদিন খবর শুনি কোথাও না
কোথাও অস্ত্র ধরা পড়ছে।
বিজিবি সূত্র জানায়, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে
কুমিল্লা সীমান্তে প্রায় ৬০ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য জব্দ করা হয়েছে, যার
মধ্যে রয়েছে মাদক, ভারতীয় পোশাক, আতশবাজি এবং অস্ত্র।
কুমিল্লা ১০
ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ মনে করছেন,
নির্বাচন ঘিরে চোরাচালানকারীরা এখন আরও সংগঠিত হচ্ছে। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে
অস্ত্র আনার এ প্রবণতা রোধে বিজিবি সদস্যদের টহল, গোয়েন্দা তৎপরতা এবং
স্থানীয়দের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানো হয়েছে।
