শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৫
৩০ কার্তিক ১৪৩২
বদলে গেছে নতুন প্রজন্মের মনন
শিহাব শাহরিয়ার
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:০৫ এএম আপডেট: ১৪.১১.২০২৫ ১২:৫৫ এএম |


 বদলে গেছে নতুন প্রজন্মের মনন রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন বা রেজিম চেঞ্জ হচ্ছে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে। এরই মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশ- শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালে এ পরিবর্তন ঘটে গেছে। ভারতও নাকি এ কাতারে আছে অথবা ছিল? সর্বশেষ মাদাগাস্কার। এর আগে ইরাক, মিসর, সিরিয়া, ইউক্রেন ইত্যাদি দেশ এরকমই পরিবর্তনের স্বীকার হয়ে সর্বনাশ হয়ে গেছে। এ পরিবর্তনের সময়কে নাম দেওয়া হয়েছে স্প্রিং বা বসন্ত। বসন্ত হলো ঋতুরাজ। অর্থাৎ রঙিন দিনে আনন্দের সুবাতাস বইয়ে দেয় তারা, যারা ক্ষমতার লোভ করে? আহারে বসন্ত! অথচ এই তথাকথিত বসন্তেই রেজিম চেঞ্জে দেশগুলোর হয় সর্বনাশ! এখন প্রশ্ন- এ বসন্ত নামানোর আবাবিল পাখি অর্থাৎ কারা এ রেজিম চেঞ্জের হোতা? যতটা জানা যায়, পৃথিবীর এক নম্বর দেশ বলে যারা নিজেদের মনে করে, সাম্রাজ্যবাদী সেই রাষ্ট্রের ভেতর আরেকটি গভীর রাষ্ট্র আছে। গভীর রাষ্ট্র বা ডিপস্টেট অর্থ দিয়ে লোক নিয়োগ করে- ফর্মুলা এক, দুই, তিন, এরকম ধাপে ধাপে ছোট রাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের সাম্রাজ্যবাদ থাবার ছায়ায় ঢেকে দিয়ে ওইসব দেশের কাপড় খুলে ন্যাংটা করে দেয়। উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য ক্ষমতার ডান্ডা দেখিয়ে গরিব ভাবিদের ধর্ষণ করা? অর্থাৎ ওইসব জায়গায় ভূরাজনীতির নামে আধিপত্য বিস্তার করা, যার নেপথ্য নাম স্বার্থ হাসিল করা। আমি সেই আলোচনায় যাব না। আমার উপর্যুক্ত কথা বলার উদ্দেশ্য হলো- আমেরিকার ডিপস্টেট গরিব ভাবি নামক দেশগুলোতে যাদের মাধ্যমে এ জঘন্য পট-পরিবর্তন করাচ্ছে, তারা প্রধানত ওইসব দেশের তথাকথিত তরুণগোষ্ঠী বা জেনারেশন-জি। টেলিভিশনে দেখেছি- শ্রীলঙ্কার রেজিম চেঞ্জের উত্তাল দিনগুলোর তথ্যচিত্র বা ছবি। এখানে যুক্ত হয়েছিল কলম্বোর জনতার সঙ্গে আগ্রাসী তরুণ বা জেন-জিরা। সরকার নামিয়ে, সেই সরকারের প্রধানকে দেশ থেকে তাড়িয়ে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করে, নতুনভাবে দেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। তার পর বাংলাদেশ! সরকার জনগণের কাছাকাছি অর্থাৎ জনগণের স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে, অবশ্যই সে সরকারকে চলে যেতে হবে বা সরকারের পতন হওয়া দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে কোটা-আন্দোলন থেকে সরকার পতনের এক দফা দিয়ে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর বিনিময়ে কীভাবে রেজিম চেঞ্জ করেছে? ক্ষমতাশীন সরকারপ্রধান আসন্ন মৃত্যু থেকে বাঁচতে বা তাকে বাঁচাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পার্শ্ববর্তী দেশে। শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশে প্রায় এক মাস সময়ের মধ্যে যে আন্দোলন নামক অভ্যুত্থান করে সরকার পতন করা হয়, সেই আন্দোলন নেপালে হয় মাত্র তিন দিনে অর্থাৎ ৭২ ঘণ্টায়! এই তিনটি দেশকেই যদি ধরি, দেখব জেন-জি বা ষড়যন্ত্রকারী রাষ্ট্রসমূহের কু-মন্ত্রের মলমে কপাল তৈলাক্ত করা তরুণরা নিমিষে নিমিষে বা সেকেন্ডে সেকেন্ডে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ফুঁ দিয়ে কাছে এনে রাস্তায় নামিয়ে, স্লোগান দিয়ে, লাঠিসোঁটা, অস্ত্রশস্ত্র, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ আর মাঠ কাঁপিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে- সরকার পতন করল। এদের আহ্বান সত্য না মিথ্যা, শুভঙ্করের ফাঁকি কি না- তা দেখল না ঘর থেকে বেরিয়ে আসা শত শত, হাজার হাজার, লাখ লাখ তরুণ-তরুণী? তারা রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন ঘটাবে ঠিক আছে কিন্তু তথাকথিত আন্দোলনকারী জেন-জিরা এ আন্দোলন শুরুটা সুন্দরভাবে করলেও পরবর্তীতে এরা নানান ধ্বংসযজ্ঞ, হত্যাকাণ্ড, মারামারি, শিক্ষকদের অপমান, মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান, লুট-তরাজ, চুরি-ছিনতাই, বাড়িঘর দখল, অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপকর্মে, কুকর্মে লিপ্ত হয়ে গেল। পড়াশোনা থেকে অনেকেই ছিটকে গেল। দেখা গেল- এর একটি কুফল, সেটি হলো ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল- সারা দেশের গড় ফলাফল ৫৮ শতাংশ। বিগত ২৫ বছরে এ রকম ফলাফলের ধস নামেনি? কথা সেখানেও না।
আসি এই লেখাটির মূল প্রসঙ্গে- বলতে চাচ্ছি, বর্তমান জেনারেশন বা নতুন প্রজন্ম এত পরিবর্তন বা বিপরীতমুখী জীবন কেন বেছে নিল? বিপরীতমুখী এজন্যই বলছি যে, আমার সন্তান, আপনার সন্তান কীভাবে যেন বদলে গেছে ভেতরে ভেতরে? তারা সারারাত জাগে, দিনভর ঘুমায়! বাবা-মায়ের কাছে আসে না, স্নেহ-মমতা নেয় না, ভালো করে কথা বলে না, ওরা ওদের মর্জিমাফিক চলে। সারাক্ষণ ডিভাইসে আসক্ত হয়ে পড়ে থাকে! কোথায় যাচ্ছে, কার কাছে যাচ্ছে, কী কাজে যাচ্ছে- বাবা-মাকে তা কিছুই বলে না, কখন ফিরবে তাও জানায় না। তারা বাইরের খাবারে প্রচণ্ড আসক্ত হয়ে পড়েছে। বড় বড় রেস্টুরেন্ট তো আছেই। তার পর মহল্লার অলিগলিতে গড়ে ওঠা অসংখ্য ফাস্টফুড কিংবা ফুটপাতে বসে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া কিংবা অভিজাত এলাকার রেস্টুরেন্টে সিসা টানা- কত কী?
উল্লেখ্য, আগে একান্নবর্তী পরিবার ছিল, সেখানে আমরা পাশ্চাত্যের ঢঙে বেরিয়ে এসে বা অতি জনসংখ্যার কুফল থেকে বাঁচতে সরকার কর্তৃক ঘোষিত ‘একটি বা দুটি সন্তানই যথেষ্ট’- এ ফর্মলায় এখন সবাই এভাবেই সন্তান নিচ্ছি। এতে জন্মধাত্রী মায়েদের শারীরিক চাপ কমলেও, প্রতিটি পরিবার আকারে ছোট হলেও, মানসিকভাবে শান্তি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে পরিবার? কারণ দেশি মুরগির বদলে ফার্মের মুরগি খাওয়া, ফাস্টফুড খাওয়া, অধিক পরিমাণে সফট ড্রিংস খাওয়া, এখনকার সন্তানরা পারিবারিক শান্তিময় পরিবেশ ভেঙে দিয়ে আত্মকেন্দ্রিক ও কিছুটা স্বার্থপরভাবে জীবনযাপন শুরু করেছে।
ভাবুন, সেই নিটোল গ্রাম, সেই নিভৃত মফস্বল, সেই মোটামুটি শান্ত-স্বভাবের ঢাকা শহরে বাস করা পরিবারগুলো এবং তাদের সন্তানগুলোর কথা? বাবা কাজ থেকে বিকেল অথবা সন্ধ্যায় ফিরতেন ঘরে, সন্তানরা বাবার আসার অপেক্ষা করত, মা রান্নাবান্না করে তৈরি থাকত, সবাই মিলে ডাইনিং টেবিলে বসে বা বিছানায় কাপড় বিছিয়ে বা মাটিতে পাটি বিছিয়ে বা দস্তরখানা পেতে খাবার খেত- সেই দৃশ্য কি আছে? আর এখন পরিবারের কে কখন খায় বিশেষ করে তথাকথিত আধুনিক (সভ্য না হয়েই আধুনিক) লোকেদের সন্তানরা কে কখন খায়, কোথায় বসে খায়- তা কি আপনারা খেয়াল করেছেন? ঘরে তারা এখন বিছানায় বসেই খায়, যে খাবার মায়েরা গিয়ে দিয়ে আসেন তার কক্ষে, কখনো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বাচ্চাদেরও খাইয়ে দেন মা- যদি সে ঘরের খাবার কদাচিৎ খেতে চায়? তারা এখন অনলাইনে অর্ডার দিয়ে তাদের পছন্দসই খাবার আনিয়ে খায়। সেই অর্ডার রাত ১১টাও হতে পারে, সকালের নাশতাও হতে পারে। অনলাইন অর্ডারে এখন সব বেলার, সব ধরনের খাবারই পাওয়া যায়। ঘরে যে মা সুন্দর সুন্দর নানা পদের রান্না করেন সেগুলোর চেয়ে, অধিক আগ্রহী হয়ে উঠেছে অর্ডারের খাবারের প্রতি। এজন্য মা অথবা বাবাকে বলবে, আমার বিকাশে টাকা দাও। দেখবেন- প্রজন্মের এই সন্তানরা বিছানায় বসেই খাবার-দাবার, যতটুকু পড়াশোনা তাও বিছানায় বসেই, সারা দিন যদি শুয়ে থাকতে হয়, সেই একই জায়গায়। আগে আমাদের বাবা-মায়েরা বলতেন সন্ধ্যার মধ্যে ঘরে ফিরতে আর এখন ওরা আড্ডা দিতেই বের হয় সন্ধ্যায়, ফেরে রাত গভীরে।
খেয়াল হয়তো করেছেন, এখনকার সন্তানরা আন্তরিক, বিনয়ী, মমতায় গড়ে উঠছে না, বাবা-মায়ের সঙ্গে তারা সুন্দর করে কথা বলে না, কেমন যেন এড়িয়ে যায়, পাশ কাটিয়ে যায়, পোশাকি আচরণ করে, সংসারের প্রতি তাদের দরদ কম। আমরা যেমন বাবার সঙ্গে হাট-বাজারে যেতাম, তারা? প্রশ্নই ওঠে না? ওরা মাছের বাজারে যাবে? ছি দুর্গন্ধ। বাবা-মায়ের কাজে সহযোগিতা করবে? কখনো না? তবে হ্যাঁ, ব্যতিক্রম তো সব সময়ই আছে, এখনো। সব সময় থাকবেও। অধিকাংশের কথাই বলছি। তবে বাস্তব যেটা, সেটা হলো- কুড়ি বছর পর পর প্রজন্মের মননে যে পরিবর্তন আসে, তাই-ই হয়তো এসেছে, তা ইম্পলিমেন্টও হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জেন-জিদের প্রভাব কী- এদের ওপর পড়েছে? পড়েছে বৈকি? কারণ যে একবার ঘর থেকে বের হয়, সে আর সহজেই ফেরে না! এ ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের কী করার আছে?  
লেখক: কবি












http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
যে চার বিষয়ে হবে গণভোট
জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট: প্রধান উপদেষ্টা
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের গেজেট জারি
‘আলোচনা করে’ মত জানাবে ইসি
কুমিল্লায় মহাসড়কে নির্বিঘ্ন যান চলাচল নিরাপত্তায় ছিল কঠোর নজরদারি
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
দেবিদ্বারে তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
বাইউস্টে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং উৎসব ২০২৫ অনুষ্ঠিত
কুমিল্লায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা মাঠে থাকবে ২৩শ পুলিশ
মা ও দুই বোনের পর চলে গেলেন কলেজ ছাত্র লিশান
হাজী ইয়াসিনকে মনোনয়নের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২