রোববার ১৬ নভেম্বর ২০২৫
২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
লটারি ভর্তি পদ্ধতিতে সংস্কার ও ভারসাম্য আনাই এখন সময়ের দাবি
অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন
প্রকাশ: রোববার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১:২৭ এএম আপডেট: ১৬.১১.২০২৫ ১:৫৩ এএম |



 লটারি ভর্তি পদ্ধতিতে সংস্কার ও ভারসাম্য আনাই এখন সময়ের দাবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নতুন নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। গত ১৩ নভেম্বর জারি করা এ নীতিমালায় আগামী শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে লটারি পদ্ধতি বহাল রাখা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, সারা দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন গ্রহণ, ফি পরিশোধ, ডিজিটাল লটারি প্রক্রিয়া ও ফলাফল প্রকাশ-সবকিছুই কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে আগে যেখানে ভর্তি পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাছাই করা হতো, এখন সেখানে ভাগ্যই নির্ধারণ করছে লটারি পদ্ধতিতে। লটারি পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হলো ভর্তি প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও সমান সুযোগ নির্ভর করা।  ভর্তি পরীক্ষায় অনেক সময় ধনী পরিবারের সন্তান বা কোচিং করা শিক্ষার্থীরা সুবিধা পেত, আর পিছিয়ে পড়ত দরিদ্র বা গ্রামীণ এলাকার শিক্ষার্থীরা।
গরীব পরিবারে শিক্ষার্থীরা সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার বিষয় ছিল স্বপ্ন দেখার মত। সেই বৈষম্য দূর করতেই করোনার পরবর্তীর সময় লটারির ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এতে প্রভাব, ঘুষ বা সুপারিশের সুযোগ অনেক কমে গেছে- যা নিশ্চয়ই শিক্ষাক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দিক।
তবে এই পদ্ধতির ভর্তির সুযোগ হওয়ায় অনেক কম মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভালো শিক্ষার্থীদের সাথে পড়ালেখার কারণে মেধাবী হচ্ছে। আবার কিছু মেধাবী শিক্ষার্থী শুধুমাত্র ভাগ্যের কারণে কাক্সিক্ষত বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে  না। এর ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় মান বজায় রাখা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তাই প্রয়োজন ভারসাম্যপূর্ণ নীতি। ভর্তি প্রক্রিয়ায় লটারির পাশাপাশি শিক্ষার্থীর পূর্বের ফলাফল বা পারফরম্যান্সকেও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। এতে যেমন সমান সুযোগ বজায় থাকবে, তেমনি যোগ্যতার মূল্যায়নও হবে।
স্কুলে লটারিতে ভর্তি একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ- এটি শিক্ষাক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সমান সুযোগের ভিত্তি স্থাপন করেছে। তবে শুধু ভাগ্যের ওপর নির্ভর না করে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও মানসম্মত করতে হলে এই পদ্ধতিতে সংস্কার ও ভারসাম্য আনাই এখন সময়ের দাবি।
২০২১ সালে করোনা মহামারির সময়ে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয় লটারি পদ্ধতিতে। এর আগে দেশজুড়ে থাকা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হত। তবে গত কয়েক বছর ধরে কেন্দ্রীয় পদ্ধতিতে লটারির মাধ্যমে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হচ্ছে। এই পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে শুরু থেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
কুমিল্লা নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান সরকারি মাধ্যমিকে লটারি ভর্তির নিময় ঠিকরাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন,  লটারি পদ্ধতিতে সরকারি মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীর সঙ্গে অনেক কম মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ হয়। তাদের মধ্যে কিছু কিছু শিক্ষার্থী আছে যারা ভালোভাবে পড়তেও পারে না। এতে করে পড়ার যে গতি ক্লাসে ঠিক রাখা যায় না। যদি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ হত তখন ভালো শিক্ষার্থীই আমরা বেশি পেতাম। তখন ক্লাসে পড়ার গতি ঠিক রাখা সহজ হত। এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই লটারির বদলে ভর্তি পরীক্ষা চালু করলে ভাল প্রতিষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাবে।এতে করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের পড়া দেওয়া নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য তৈরি হবে।
ভর্তি পরীক্ষার চেয়ে লটারি পদ্ধতি কেমন এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধবপুর আলহাজ¦ মুহাম্মদ আবু জাহের ফাউন্ডেশন কলেজের অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম বলেন, আমার মতে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তিতে ভর্তি পরীক্ষার বদলে লটারি পদ্ধতি অধিক কার্যকর। কারণ এই পদ্ধতিতে সবাই ভর্তির সুযোগ পায়। এই পদ্ধতির বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষা শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। কারণ ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হয়। এতে উত্তীর্ণ হতে না পারলে ছোট বয়সেই তাদের মনে হেরে যাওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়। যা শিশুদের মনে নেতিবাচন প্রভাব তৈরি করে। এছাড়া ও অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে নিয়ে হতাশা মধ্যে ভোগেন। তিনি আরো বলেন, যে সকল শিক্ষার্থী কম মেধাবী তারা যদি ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পায়, তখন শিক্ষকরা বাড়তি পরিশ্রম করে মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারেন। এজন্য আমি লটারি পদ্ধতি চালুর পক্ষে।
প্রতি শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৫৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই নিয়ম মানেনি। না মানার কারণে কোন ধরণের পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয় দেখা যায়নি।
প্রতিবারেরমত এবারের প্রজ্ঞাপনে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানের জন্য ০.৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০' অনুযায়ী ৬ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থীর বয়স প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর বয়স ৬+ ধরে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবে কাক্সিক্ষত শিক্ষাবর্ষের ১ জানুয়ারি তারিখে শিক্ষার্থীর সর্বনিম্ন বয়স ৫ বছর এবং ৩১ ডিসেম্বর তারিখে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত হবে। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকালে কোন শিক্ষার্থীর বয়সসীমা সর্বনিম্ন ৫ বছর হবে অর্থাৎ সর্বনিম্ন জন্মতারিখ হবে ১ জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত এবং সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৭ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ জন্মতারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত।
পরবর্তী শ্রেণিগুলোয় বয়স নির্ধারণের বিষয়টি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ধারবাহিকভাবে প্রযোজ্য হবে। শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণের জন্য ভর্তির আবেদন ফরমের সঙ্গে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বয়স নির্ধারণে সর্বোচ্চ ৫ বছরের অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া কথা নীতিমালায় দেওয়া আছে। 
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজ, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা।












http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
ড. মোশাররফের নেতৃত্বে ধানের শীষের গণমিছিল আজ
বিরোধ মিটিয়ে ঐক্য গড়তে জেলা বিএনপির বৈঠক
তারেক রহমানের ৩১ দফাই রাষ্ট্র গঠনে সার্বজনিন দিক নির্দেশনা
আগামী নির্বাচন হবে চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদেরবিরুদ্ধে
বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উপলক্ষে কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টারে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
দুই প্রার্থীকে তারেক রহমানের ফোন
কুমিল্লা সীমান্তে বাড়ছে অস্ত্রের চোরাচালান
আগামী নির্বাচন ও বাংলাদেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে
প্রাথমিকে শারীরিক ও সংগীত শিক্ষক পদ পুনর্বহালের দাবি
চান্দিনায় ৪টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২