বৈশ্বিক বাজারে সোনার দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ডলারের দামের অস্থিরতা। কিছুদিন ধরে দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারের মানের ওপর নির্ভরশীল সোনার দাম। ডলারের মান কমে গেলে বিনিয়োগকারীদের জন্য সোনা তুলনামূলক সস্তা হয়ে যায়। এতে সোনা বিক্রি বেড়ে যায়। সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়। তখন এর দামও বেড়ে যায়। তবে বেশির ভাগ ক্রেতার অভিযোগ- বিশ্ববাজারে সোনার দাম যে হারে বেড়েছে, দেশে তার থেকে বেশি বেড়েছে। অর্থনীতির বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ভ্যাট ও মজুরি যোগ হয়ে দেশে সোনার গহনার দাম আরও বেড়েছে। ভ্যাট ও মজুরি কমাতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে সোনা আমদানি বাড়াতে নীতিসহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করছেন তারা। অন্যদিকে দেশ থেকে সোনা চোরাচালান বন্ধ করতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। দেশি-বিদেশি গবেষণা প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় সোনার দাম বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষভাবে যুদ্ধ ও শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতনের সময় মানুষ নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনায় বিনিয়োগ করেন। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের রিজার্ভ বাড়াতে এবং আর্থিক অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসেবেও সোনা কিনেছে। সুদের হার কমলে সঞ্চয়ে লাভ কমে যায়। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ সোনা কেনায় আগ্রহী হচ্ছেন।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি) থেকে বলা হয়েছে, ডলারের বিনিময় হারে অস্থিরতা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনা বৃদ্ধিই মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অর্থনৈতিক স্থবিরতা বা মন্দার ঝুঁকি বাড়লে সোনার চাহিদা আরও বাড়তে পারে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে যে, বিশ্ববাজারে সোনার চাহিদা বাড়তে থাকায় চলতি বছরের বাকি সময়েও সোনার দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে।
তথ্যমতে, বিশ্বের বিভিন্ন খনি থেকে উৎপাদিত সোনার ১৭ শতাংশ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে মজুত রয়েছে। বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছে সোনার রিজার্ভ ২০২৫ সালের জুন থেকে ৩৭ হাজার টনের বেশি। ইতিহাসে কখনো এর আগে এত বেশি সোনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো কেনেনি। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল থেকে বলা হয়েছে, কোনো দেশের কাছে যত বেশি সোনার রিজার্ভ থাকে, বিশ্ব অর্থনীতিতে সেই দেশের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা তত বাড়ে। এটি দেশের আন্তর্জাতিক ঋণ গ্রহণের সক্ষমতা বাড়ায়।
বাজুসের সভাপতি এনামুল হক খান বলেন, সোনা আমদানি বাড়ানোর জন্য বর্তমান স্বর্ণ নীতিমালা যুগোপযোগী করতে হবে। নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য সরকারি দপ্তর ও বাজুসের সমন্বয়ে আলাদা উইং গঠন করতে হবে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নীতিনির্ধারকদের সমন্বিত সংলাপের মাধ্যমে যৌক্তিক শিল্পকর কাঠামো তৈরি করতে হবে। আমদানি-প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি আমদানিকারকদের নীতিসহায়তা ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে।
আমরা লক্ষ করেছি, বিশ্ববাজারে সোনার দাম যে হারে বেড়েছে তার থেকেও অনেক বেশি বেড়েছে দেশে। এ ছাড়া সোনা আমদানির অনুমতি থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে তা হচ্ছে না। যে কারণে অবৈধ পথে বা চোরাই পথে সোনার বেচাকেনা হচ্ছে। এ জন্য সোনা আমদানির প্রক্রিয়া সহজলভ্য করতে হবে। বিশেষ করে সোনা খাত-সম্পর্কিত অপ্রয়োজনীয় জটিলতা ও বিধিনিষেধ পরিহার করা প্রয়োজন। সোনা চোরাচালান রোধে ব্যাপক নজরদারি বাড়াতে হবে। পদক্ষেপগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হলে বৈধ পথে সোনা আমদানির পরিমাণ বাড়বে। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে নীতিমালা আরও যুগোপযোগী করা দরকার। তা হলে দেশের স্বর্ণশিল্প ঘুরে দাঁড়াবে।
