সরকার
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি নির্দেশনা জানতে
সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু দলগুলো সরকারকে সঠিক নির্দেশনা এখনো দিতে
পারেনি। কারণ এখনো কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এতে দেশে যে রাজনৈতিক
সংকট তৈরি হচ্ছে, তা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে দুর্বল করতে পারে। সরকার
প্রত্যাশা করছে, গণভোট, সংসদ নির্বাচন এবং পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ
গঠনের সিদ্ধান্তে বড় দুই দল ছাড় দেবে। এদিকে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ
নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক করতে নির্বাচন কমিশন সর্বাত্মক
প্রস্তুতি শুরু করেছে। নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীকে দেওয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশ ও সমন্বিত নিরাপত্তা
পরিকল্পনা। সরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলকে
একত্রিত করতে তৎপর এবং সমস্যা সমাধানের একটি উত্তম উপায় বের করে আনার
চেষ্টা করছে। গণভোট প্রশ্নে বিএনপি, জামায়াতসহ তাদের সমমনা দলগুলোর অবস্থান
অনেকটা বিপরীত। বিএনপি চায় গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন একই দিনে হোক।
অন্যদিকে জামায়াতের দাবি, জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের আয়োজন করতে হবে।
অপরদিকে সরকার জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের পক্ষে। এ ক্ষেত্রে
সরকার প্রত্যাশা করছে জামায়াত এ ক্ষেত্রে ছাড় দেবে। অন্যদিকে পিআর পদ্ধতিতে
সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়টি এসেছে জুলাই সনদে। এখানে বিএনপি নমনীয় হতে
পারেনি। সরকার আশা করছে, বিএনপি এ বিষয়ে ছাড় দেবে। এনসিপি জুলাই সনদে এখনো
স্বাক্ষর করেনি। সরকারের সূত্রগুলো বলছে, গণভোটের সময় নিয়ে এনসিপি অনেকটাই
নমনীয়। এ অবস্থায় গণভোট ইস্যুতে প্রধান দুই দলের অনড় অবস্থানে সংঘাতের
আশঙ্কা করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। অবশ্য সরকারসংশ্লিষ্টরা গণভোট নিয়ে
বিএনপি-জামায়াতের মতপার্থক্য দূর করতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ৩ নভেম্বর
অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে আলোচনা প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা আসিফ
নজরুল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের উদ্যোগে আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে
অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানান। সূত্রমতে,
১৩ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সবকিছু চূড়ান্ত হবে। ১৫ নভেম্বরের
মধ্যে সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আদেশ এবং গণভোট করার জন্য অধ্যাদেশ জারি
করবে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলবে।
সরকার
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ করেছি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নিজ নিজ দলের প্রাথমিক
প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। অন্য দলগুলোও প্রার্থী বাছাই-প্রক্রিয়া শুরু
করেছে। দেশের তৃণমূলে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে
ভেতরে ভেতরে একধরনের প্রচার-প্রচারণা চলছে। সরকার আদেশ জারি করলেই দলগুলো
পুরোপুরি নির্বাচনমুখী হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা মনে করছেন,
সরকার বিষয়টি মাথায় নিয়েই সব বিরোধ নিষ্পত্তি করে একটি সঠিক সিদ্ধান্তে
উপনীত হবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের যে
রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, তাতে দেশের গণতান্ত্রিক ধারার কথা চিন্তা করে
সেখান থেকে দলগুলোর সঠিক পথে ফিরে আসা দরকার। আগের নির্বাচনগুলো সঠিক ছিল
না বলে বিপ্লব হয়েছে এবং সেই বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় দেশের গণতান্ত্রিক
প্রক্রিয়ার উত্তরণ দরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দেশকে সঠিক গণতান্ত্রিক
পথে যেতে একমত হওয়া। দেশের জনগণ চায় দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ
গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে যাক।
আমরা জানি, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ
হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু বেশ কয়েক দশক ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে এ দেশ
থেকে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। একটি সুষ্ঠু
নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সেই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির
ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্তর্র্বতী সরকারকে চালকের আসনে থেকে
একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে হবে। আশা করছি, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো
তাদের পারস্পরিক সমস্যাগুলো সমাধান করে সফল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
