
বাজারে জাল নোটের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে। চক্রের সদস্যরা শুধু পুরোনো নোটই নয়, বাজারে আসা কিছু নতুন নোটও জাল করছেন। নিরাপত্তা সুতা থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছু এমন সূক্ষ্মভাবে জাল করা হচ্ছে, যা অনেক সময় ব্যাংকের লোকজনও ধরতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে জাল নোটের অনুপ্রবেশ এবং চক্রের তৎপরতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সতর্কতামূলক একটি নোটিশও সংযুক্ত করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যক্তি পর্যায়ে থেকে শুরু করে ব্যাংক লেনদেন এবং ছোট-বড় কেনাকাটায় খুব কৌশলে জাল নোটের অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে। সম্প্রতি এমন বেশ কিছু জাল নোট জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
১ হাজার বা ৫০০ নয়, ৫০-১০০, এমনকি ২০ টাকার নোটও এখন জাল হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন ডিজাইনের অল্প যেসব নোট বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাজারে ছাড়া হয়েছিল, সেগুলোও জাল করছে নোট জালকারী চক্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত দুই ঈদের সময়, দুর্গাপূজা, বর্ষবরণসহ বিভিন্ন উৎসবে তৎপরতা বাড়ায় নোট জালকারী চক্রগুলো। কারণ ওই সময় অর্থনৈতিক লেনদেন অনেক বৃদ্ধি পায়। অবশ্য ইদানীং দেখা যাচ্ছে, কোনো বিশেষ মৌসুম বা উৎসব নয়, প্রায় সব সময়ই চক্রগুলোর তৎপরতা চলছে। নোট জাল করার বিষয়টি এমন এক প্রতারণা, যেখানে সরাসরি অভিজ্ঞতা বা দক্ষতার প্রয়োজন হয়। যারা মাঝেমধ্যে গ্রেপ্তার হচ্ছেন, জিজ্ঞাসাবাদের পরে জানা যাচ্ছে তারা আগেও একই অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। অর্থাৎ অভিজ্ঞ এই চক্রের সদস্যরা বারবার গ্রেপ্তার হলেও অল্প দিনে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের একই অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছেন।
দেশে জাল টাকার অনুপ্রবেশসংক্রান্ত পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি নগদ লেনদেনে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। এখানে সতর্কতা হিসেবে বলা হয়েছে, নোট বা নগদ টাকা গ্রহণের সময় জলছাপ, অসমতল ছাপা, নিরাপত্তা সুতা, রং পরিবর্তনশীল কালি ও ক্ষুদ্র লেখা যাচাই করে নিতে বলা হচ্ছে। এ ছাড়া সন্দেহজনক নোট পেলে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, জাল নোট চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট সব সময় সচেতনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাঝেমধ্যে জাল নোটসহ চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট ‘সিআইডি’ জাল নোটের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে।
দেশে জাল নোটের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকারকে জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। নকল টাকা চেনার উপায় এবং গ্রাহক সচেতনতা বাড়াতে ব্যাংকগুলো কর্মশালার আয়োজন করতে পারে। জাল নোট তৈরি এবং বেচাকেনা একটি মারাত্মক অপরাধ। এই অপরাধে দণ্ডবিধির ৪৮৯ ধারায় এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়ে থাকে। এসব মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড থেকে শুরু করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তির বিষয়ে সচেতন থাকা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। যারা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে সাজা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনের শাসন নিশ্চিত না হলে অপরাধীরা বারবার একই অপরাধে ফিরে যাবে। তাই সরকারকে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
